হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই
সাহিত্যে নোবেল ২০২৫ পুরস্কার পেয়েছেন হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে সুইডিশ অ্যাকাডেমি। তার অবদান, পরিচয় ও সাহিত্যকর্মের বিস্তারিত নিয়ে পড়ুন আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন।
সুইডিশ অ্যাকাডেমি বলেছে, ‘আকর্ষণীয় ও দূরদর্শী রচনার জন্য তাকে এ বছর সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হয়েছে। তার লেখনি বৈশ্বিক ভয়াবহতার মধ্যে শিল্পের শক্তিকে পুনরায় নিশ্চিত করেছে।‘
সুইডিশ অ্যাকাডেমি আরও বলেছে, লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই মধ্য ইউরোপীয় সাহিত্যের একজন মহাকাব্যিক লেখক। তার সাহিত্যকর্ম বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক কাফকা থেকে শুরু করে থমাস বার্নহার্ডের মতো লেখকদের দ্বারা অনুপ্রাণিত।
লাসজলো পাঁচটি উপন্যাস লিখেছেন এবং অসংখ্য সাহিত্য পুরস্কার জিতেছেন। যার মধ্যে রয়েছে ২০১৫ সালের ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং ২০১৩ সালে দুনিয়া ধ্বংসের বিষয় নিয়ে একটি উত্তর-আধুনিক উপন্যাস “সাতানটাঙ্গো”-এর জন্য কথাসাহিত্যে সেরা অনূদিত বইয়ের পুরস্কার।
২০০২ সালে প্রয়াত ইমরে কার্তেসের পর তিনি দ্বিতীয় হাঙ্গেরীয় লেখক যিনি এই পুরস্কার অর্জন করেন।
তার “সাতানটাঙ্গো” এবং “দ্য মেলানকোলি অফ রেজিস্ট্যান্স” উপন্যাস দুটিকেই পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে রূপদান করা হয়েছে। সাতানটাঙ্গো পরিচালনা করেছেন বিখ্যাত নির্মাতা বেলা টার।
তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ২০০৩ সালের উপন্যাস ‘এ মাউন্টেন টু দ্য নর্থ, এ লেক টু দ্য সাউথ, পাথস টু দ্য ওয়েস্ট, এ রিভার টু দা ইস্ট’। কাব্যিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই উপন্যাসটি জাপানের কিয়োটোর একটি রহস্যময় কাহিনীকে কেন্দ্র করে লিখিত হয়েছে।
লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই এর ‘সেইবো দেয়ার বিলো’
এই উপন্যাসটির ওপর ভিত্তি করে তিনি তার বিশাল সাহিত্য সংকলন ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ লিখেন। এই সংকলনে রয়েছে ১৭টি গল্প, যা এক বিশেষ বিন্যাসে সাজানো হয়েছে। গল্পগুলোতে এমন এক জগতের সৌন্দর্য ও শিল্পের স্থান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যে জগৎ দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং এটির সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যায় না।
বইটির গল্পের সূচনা হয় কামো নদীর ধারে অপেক্ষারত একটি সাদা বকের মনোমুগ্ধকর চিত্র দিয়ে।
বইটির মূল থিমটি জাপানের একটি পৌরাণিক কাহিনি থেকে এসেছে। যেখানে সেইবো নামের এক দেবী এমন এক বাগান পাহারা দেন যেখানে প্রতি তিন হাজার বছর পর অমরত্বের ফল ধরে।
গল্পগুলো শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়া নিয়ে অনুসন্ধান চালায়, যেখানে দেখানো হয় যে শিল্পের সৃষ্টি হয় দীর্ঘ প্রস্তুতি ও নিপুণ দক্ষতার মাধ্যমে। আবার কখনও কখনও অপ্রত্যাশিত ঘটনাও এই সৃষ্টিকে প্রভাবিত করে।
‘সেইবো দেয়ার বিলো’ এর গল্পগুলোতে শিল্পী নিজে প্রায়শই অনুপস্থিত থাকেন। তার এ কর্মে পাঠকরা এমন চরিত্র দেখেন যারা শিল্প সৃষ্টিতে সহায়তা করলেও এর গভীর অর্থ সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারে না। বইটি দক্ষতার সাথে শিল্প সৃষ্টির রহস্যময় কর্মকাণ্ডের ওপর পাঠকের সামনে নানা দৃষ্টিকোণ তুলে ধরে।
সাহিত্যের নোবেলের জন্য মনোনীতদের নাম দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে গোপন রাখছে সুইডিশ অ্যাকাডেমি। এ কারণে কে এ পুরস্কার জিততে পারেন সেটি আগে থেকে ধারণা করা যায় না। ১৯০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১১৭ বার সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হয়েছে। আর সবমিলিয়ে মোট ১২১ সাহিত্যিককে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। যারমধ্যে ১৮ জন নারী সাহিত্যিক আছেন। এছাড়া চারবার যৌথভাবে একাধিক ব্যক্তিকে সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হয়েছে।