Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
বুধবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫

স্মরণে আবু জাফর – সুরের ভুবনের নীরব জাদুকর

স্মরণে আবু জাফর - সুরের ভুবনের নীরব জাদুকর
স্মরণে আবু জাফর

নিভৃত সুরের কারিগর আবু জাফর : প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

অকালে চলে যাননি আবু জাফর। অনেকদিনই বেঁচে ছিলেন এই দেশে। আমাদের মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার আড়ালে। এমনকি সাধারণ মানুষও খুব বেশি জানতো না তিনি কই আছেন এখন। তিনি আজীবন কুষ্টিয়াতেই ছিলেন। যেই কলেজ থেকে পড়েছেন সেই কলেজেই পড়িয়েছেন; সেখানেরই অধ্যাপক হয়েছেন। মাঝখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করেছেন। কিন্তু তার জীবন কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গার বাইরে যায়নি কখনো। ঢাকায় বিখ্যাত হয়েও এখানে থাকার লোভ তার কখনো হয়নি। সেই জেলা শহরেই তিনি কাল্ট। হাজার হাজার তার ছাত্র। চা দোকানদার থেকে সাধারণ বয়স্ক মানুষ সবার কাছেই আপন ছিলেন তিনি। গত ৬ আগস্ট ছিলো বাংলাদেশের অন্যতম সেরা গীতিকার ও সুরকার আবু জাফর এর পহেলা মৃত্যবার্ষিকী। সুরের ভুবনের নীরব জাদুকর আবু জাফর প্রয়াত হয়েছিলেন গতবছরের (১১ ডিসেম্বর, ২০২৪) এই দিনে, নিভৃতে। স্মরণে আবু জাফর , গীতিকার ও সুরকার, সুরের ভুবনের নীরব জাদুকর। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে মূলধারার আড়ালে থাকা এক কাল্ট শিল্পীর জীবন, সাধনা ও সুরের উত্তরাধিকারকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ।

স্মরণে আবু জাফর - সুরের ভুবনের নীরব জাদুকর
স্মরণে আবু জাফর – সুরের ভুবনের নীরব জাদুকর

মানুষের মন বড় অদ্ভুত। পাঁচই আগষ্টে (২০২৪) সবার মতোই আমার মনেও অত্যন্ত আনন্দ ছিল। কয়েকদিন পর থেকে আমার ভীষণ মন খারাপ লাগছিল। দেশে সহিংসতা ও মাইনরিটির উপর হামলা; কি যে হচ্ছে দেশে!  এত সংগ্রামের পর এসব কেন দেখা লাগতেছে?  দুঃখে শুনতেছিলাম, ফরিদা পারভীনের কন্ঠে, এই পদ্মা এই মেঘনা….. দুর্ভাগ্যবশত এই গানটা যখন জনতা ও ছাত্রদের মারা হচ্ছে, ইন্টারনেট নাই সেই দিনও রেডিওতে একা একা শুনছিলাম। দুই সময়েই আমার চোখে টপটপ করে পানি পড়তেছিল। আবু জাফর কিভাবে এই লাইন গুলো লিখেছিলেন তা গত রেজিমের হঠাৎ পতনের মতোই বিস্ময়কর।

“এখানে রমণীগুলো নদীর মত

নদী ও নারীর মত কথা কয়

এই অবারিত সবুজের প্রান্ত ছুঁয়ে

নির্ভয় নীলাকাশ রয়েছে নুয়ে

যেন হৃদয়ের ভালোবাসা হৃদয়ে ফুটে

আনন্দ বেদনায়, মিলন বিরহ সংকটে।

কতো আনন্দ বেদনায়, মিলন বিরহ সংকটে।”

বুদ্ধদেব বসু ও রবীন্দ্রনাথ দ্বারা অনুপ্রাণিত আবু জাফর

১৯৭৩-৭৪ সালে তিনি এই গানটি রচনা ও সুর দেন। তিনি বুদ্ধদেব বসু ও রবীন্দ্রনাথ থেকে খুব অনুপ্রেরণা পেতেন তারুণ্যে। কিন্তু এই সুর তিনি কোথা থেকে পেলেন? জাফর সাহেব সবসময় বলেন, সংগীত নিয়ে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই খালি বিভিন্ন গুনীজনের সাথে উঠাবসা ছিল। কিভাবে তিনি পারলেন বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটা জনপ্রিয় দেশের গান লিখতে। এটাই জিনিয়াসদের বৈশিষ্ট্য। তাদের হাজার হাজার গান লিখতে হয় না। একটা গানেই তারা দেখিয়ে দেন মুন্সীয়ানা। আবু জাফর এরকম আরো দুটো কালজয়ী গান লিখেছেন। ১৯৭৩ সালে ‘তোমরা ভুলে গেছ মল্লিকাদির নাম’, যেটা রাজশাহী বেতারে প্রথম শোনানো হয়। তারপর ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয় সারা দেশে। আরেকটি গান, ‘নিন্দার কাঁটা যদি’। দুটোই অত্যন্ত মেলোডিয়াস গান। দুটোই গেয়েছেন তার সাবেক স্ত্রী ফরিদা পারভীন।

ফরিদা পারভীনের লালনের বাইরে গানের যে সাফল্যের ভান্ডার তা পুরোটাই আবু জাফরের সৃষ্টি।

ব্যক্তিগত স্মৃতি ও গানের সঙ্গে প্রথম পরিচয়

দুটো গানের ভেতরে আমার প্রিয়, তোমরা ভুলে গেছ মল্লিকাদির নাম। গানটা আমি প্রথম শুনেছি আমার মায়ের মুখে। তিনি গুনগুন করতেন। পরে কোনো একদিন টিভি নাটকে গানটাকে হোমাজ দেয়া হয়েছিল তখন পুরোপুরি অন্তরে গেঁথে যায়। আমার ধারণা গানটা শচীন ভৌমিকের লেখা ‘মনে পড়ে রুবি রায়’ থেকে অনুপ্রাণিত। রুবি রায় গাওয়া হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। তবে ‘তোমরা ভুলি গেছ মল্লিকাদির নাম’ আরো বেশী মাটির কাছাকাছি। গায়ের বঁধু শুনলেই তো মনে হয় হেমন্ত সলীলের ‘কোনো এক গায়ের বঁধু’ গানটা। তবে এটা সঙ্গত কারণেই আরো আধুনিক ও পরিমিতিবোধ সম্পন্ন। যে লাইনটা এই গানে সবাইকে আকৃষ্ট করে, ‘পথের মাঝে পথ হারালে আর কি পাওয়া যায়/ যেদিন গেছে সেদিন কি আর ফিরিয়ে আনা যায়। গানটা শেষ হয়, ‘সে কথা ভাবলে এখন বর্ষা নামে/ দুচোখে সজল বরষায়।’ কবীর সুমনের ভাষায় বলতে হয়, এখন কেউ বাপের জন্মে এরকম লাইন লিখে সুর দিতে পারবে’?

আবু জাফর আর খুব বেশি গান লিখে সুর দেন নাই। কুষ্টিয়ায় শিক্ষকতা আর টুকটাক কবিতা লিখেই নিভৃতে বেঁচে ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি অবসর নেন। তারপর তিনি ইসলাম ও আধ্যাত্মিকতা নিয়েই ছিলেন। তার সব সাফল্যের জন্য তিনি স্রষ্টার কথা বলেন। খুবই গলে পড়া বিনয় নিয়ে তিনি চলতেন। আবু জাফরকে নিয়ে আপনি চাইলেও বেশী কিছু পাবেন না ইন্টারনেটে। এতটা লোকচক্ষুর আড়ালে তিনি থাকতেন। তবে গান বাজনার লোকজন জানতো আবু জাফরের কৃতিত্ব। অল্প কয়েকটা মাস্টারপিস গান রচনা করে আড়ালে চলে যেতে পারে এমন কজনই। আমার কাছে একটা ভালো গান যে তৈরী করবে সেই মহান শিল্পী, বাকী জীবন কি করলো না করলো বিবেচ্য নয়। নীরব জাদুকর আবু জাফর মনে পড়বে যতদিন বাংলাদেশে এই পদ্মা এই মেঘনা গানটা থাকবে।  

লেখক: আরাফাত শান্ত

আরাফাত শান্ত
+ posts
Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

বিজয়ের পর্দায় মুক্তিযুদ্ধ – ১৬ ডিসেম্বর ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র

রক্ত, স্মৃতি আর মানুষের গল্পে বলা কিছু সিনেমা ১৬ ডিসেম্বর। এই দিনটি আমাদের কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক দিবস নয়। এটি…
বিজয়ের পর্দায় মুক্তিযুদ্ধ - ১৬ ডিসেম্বর ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র

আতিফ আসলামের কনসার্ট-পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

আয়োজক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ঢাকায় পাকিস্তানি শিল্পী আতিফ আসলামের কনসার্ট বাতিল হয়েছে সম্প্রতি। কনসার্ট…
আতিফ আসলামের কনসার্ট-পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা
0
Share