পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করব : অভিনেতা ডন
মাত্র চার বছরের সংক্ষিপ্ত অভিনয়জীবনেই ঢালিউডে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন সালমান শাহ। নব্বইয়ের দশকের বাংলা সিনেমায় তিনি ছিলেন এক অনন্য নায়ক একজন ক্ষণজন্মা তারকা, যিনি কোটি দর্শকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন খুব অল্প সময়েই। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, মাত্র ২৫ বছর বয়সে তাঁর অকাল মৃত্যু নেমে আসে এক বজ্রাঘাতের মতো।এবার সালমান শাহ হত্যা মামলায় অভিনেতা ডনের ঘোষণা , তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। বহু বছর পর আলোচিত এই মামলায় ফের জেগে উঠেছে রহস্য ও আলোচনার ঝড়।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহর মৃত্যুর পর রমনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। তবে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক পর, গত ২০ অক্টোবর ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক বাদীপক্ষের রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

এই রায়ের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছেন মামলার আসামি অভিনেতা ডন। জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে ডন বলেন,
“সবাই বলছে আমি নাকি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ৩০ বছর পালাইনি, এখন পালাব কেন? আমি বাসাতেই আছি। ভাবছি, দু-এক দিনের মধ্যেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করব।”
স্মৃতি ও আক্ষেপের ভার নিয়ে তিনি আরও বলেন,
“যে চলচ্চিত্র ভালোবেসে ঘর ছেড়েছি, অভিনয়ের ভালো সুযোগ পাওয়ার আশায় হার্টথ্রব সালমান শাহর সঙ্গে জুটি গড়েছিলাম। মা-বউয়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত মানুষটির সুখ-দুঃখের সাথী হয়েছি। তাকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সালমানকে ভালোবেসে আমার ক্যারিয়ারের বারোটা বেজেছে। আজও ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। সালমানকে ভালোবেসেছি বলেই জীবনের প্রচণ্ড ঝড় মেনে নিয়েছি।”

ডনের স্মৃতি চারণ
অভিনেতা ডনের কণ্ঠে ফুটে ওঠে গভীর মানসিক ক্লান্তি , “সালমানকে ভালোবাসার যন্ত্রণা আর সইতে পারছি না। আমিও তো মানুষ, আমারও তো বাঁচতে ইচ্ছে করে। সালমানকে ভালোবেসে অনেকেই আত্মহত্যা করেছে, আমি করিনি এটাই কি আমার অপরাধ? আমি আত্মহত্যা করলেই কি সবাই খুশি হতো? ওপরে একজন আছেন, তিনি সব দেখেন। একদিন সত্য প্রকাশ হবেই, তবে আমি সেদিন দেখে যেতে পারব কি না জানি না।”
মৃত্যুর আগে সালমান শাহর সঙ্গে নিজের শেষ দেখা হওয়ার স্মৃতিও তুলে ধরলেন ডন। তিনি বলেন,
“৩০ আগস্ট আমি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসি। সালমান বলেছিল, পরিচালক শিবলী সাদিক ভাইকে জানাতে যে সে ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এসে ‘আনন্দ অশ্রু’ ছবির শুটিংয়ে অংশ নেবে। আমি খবরটা পৌঁছে দিই। দুই দিনের ফাঁকে ভাবলাম বগুড়ায় ঘুরে আসি, কিন্তু বাস ধর্মঘটের কারণে ঢাকায় ফিরতে পারিনি। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর ঝড়ের মতো খবর সালমান শাহ আর নেই।”
বাংলা চলচ্চিত্রের সেই উজ্জ্বল ধূমকেতু সালমান শাহ আজও অগণিত দর্শকের হৃদয়ে জীবন্ত। তাঁর মৃত্যু যত সময় গড়ায়, রহস্য ততই ঘন হয়। অথচ তাঁর অল্প সময়ের জীবন আর অসীম জনপ্রিয়তা যেন এখনো বলে যায় আসলে কিংবদন্তিরা কখনো হারায় না।