আয়না। কাঁচের আয়নাই বোঝে সকলে। সেই আয়না নাকী কখনো মিথ্যা বলে না। তাইতো বরফ রাজকুমারীর গল্পেও রানীকে প্রশ্ন করতে হতো আয়নাকে। কে বেশী সুন্দরী, উত্তর দিতো আয়না। এই রূপকথা হয়তো মুখে মুখে আছে, কিন্তু হয়তো পৃথিবীর আসল আয়না তার মনে। বা চোখে। যে কারণে আয়না মিথ্যা না বললেও এমন সত্য বলে- যা না বললেও হয়। বিশেষ করে কারো সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে।
এই আপাতদৃষ্টির সূচনার কারণ নতুন সিনেমা ‘৩৬-২৪-৩৬’। এই সিনেমার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন কারিনা কায়সার। ইউটিউব তারকা বা ভ্লগার হিসেবে তিনি তার ফলোয়ারদের কাছে এমনিতে পরিচিত। এবার একটি সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন।
হয়তো তার শারীরিক কাঠামো এর পেছনে অনেক বড় একটি কারণ। প্রথাগত সুন্দরীদের মানদণ্ডে তার অবয়ব বেখাপের মনে হলেও আসলে তিনি কেমন মেধাবী বা কাজে কেমন সেই প্রশ্নটা আসে দ্বিতীয় বা তৃতীয়তে। প্রথমেই আসে – পোশাক, আকার, গড়ন।
সিনেমাটির গল্পও এই গড়ন নিয়েই। কারণ কারিনাই এই গল্পের মূল চরিত্র। তারুণ্য পর্যন্ত আয়না থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখা মেয়েটির সামাজিক মাধ্যম মানেও শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা ছবি। কারণ ঐ যে ছোটবেলার বিজ্ঞাপনের মতন কেউ যদি বলে- ‘বান্টি তোর সাবান স্লো নাকী রে?’ সেই বান্টিও তো একটু কলেবরে বেশি। স্লো হতেই হবে তাকে।
আবার পোশাকও শুধু একহারা গড়নেই ভালো মানাবে- এমন ছবি আর ব্র্যান্ডের পোশাক দেখতে দেখতে কারিনাও সিনেমাটির চরিত্রের মত হয়তো ক্লান্ত। কিন্তু কারো আকারে যে কেউ স্লো হয় না, তার প্রমাণ কারিনার চিত্রায়ন। মেধাবী মেয়ে, যে পরে নিজের ইভেন্ট ফার্মও খুলে বসে। ক্রেতার মন জয় করতে পারেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন; প্রয়োজনে কঠোর আবার পরক্ষণেই উদার হতে পারেন। শুধু বারবার হেরে যান একজন মনের মত মানুষ খোঁজার রেসে।
আর সেই রেস তাকে এমন এক গল্পের বাঁকে নিয়ে যায় যা তার পরবর্তী জীবনকে ঝড়ে পরিণত করে।
এবার যে গল্পটা চলে আসে, অন্য এক গল্প। দক্ষিণ ভারতের এক যুবকের সাথে এক তরুনীর প্রেম হয়। যুবকটি মেয়েটিকে বিয়ে করবে বলে নানা ধরনের স্বপ্নের ঘর বানায়। এরপর মেয়েটি স্টাডি ট্যুরে যায়, ফিরে এসে দেখে ছেলেটি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। ছেলেটি দাবী করে সেই ট্যুরের একাধিক ছেলের সাথে তার সম্পর্ক এ কারণে ছেলেটি আর মেয়েটির সাথে থাকবে না।
মেয়েটি কিছুতেই বোঝাতে পারেনা ছেলেটিকে। একপর্যায়ে মেয়েটি ভাবতে থাকে, সবই তার ভুল। সে স্টাডি ট্যুরে না গেলে এই সম্পর্ক ভাংতো না। আত্মবিশ্বাসের চরম অবনতি মেয়েটিকে গ্রাস করে। এরপর, মাস ছয় কেটে যায়, মেয়েটি জানতে পারে, তারই সবচেয়ে কাছের বান্ধবীর সাথে সম্পর্ক হয়ে যাওয়াতে ছেলেটি ইচ্ছা করে তার সাথে এই নাটক করেছে যেন ছেলেটি সহজেই তাকে দোষী প্রমাণ করতে পারে। যখন মেয়েটির ভুল ভেঙে যায়। তার আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়। সেই সাথে জীবনকে খুঁজে নেয় নতুন করে।
একটি ডিজিটাল কন্টেন্টের গল্প এটি- যার সাথে এই সিনেমার একটু মিল। তা হলো- ভুল দোষারোপে আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেওয়া।
এছাড়া, ‘৩৬-২৪-৩৬’ একটি সম্পূর্ণ নতুন কনসেপ্ট নির্ভর সিনেমা। এতে সায়েদ জামান শাওন, গোলাম তানভীর এবং প্রার্থনা ফারদিন দীঘিও অভিনয় করেছেন। হাস্যরসের গল্পে সমাজের চোখে নারীর অবয়বকে যেমন বিচারের মানদণ্ডে তুলে আনা হয়েছে, আবার ভালোবাসার দৃষ্টিতে মোহনীয়ও করে তোলা হয়েছে। নতুন হিসেবে কারিনা কায়সারের অভিনয় তার চরিত্রের সাথে মানানসই হয়েছে। সায়েদ জামান শাওন ও গোলাম তানভীরকে নিয়ে বড়পর্দায় কাজ করার আশা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। দীঘির চরিত্রটির সাথে ভারতীয় তারকা অনন্যা পাণ্ডের চরিত্র মিলে যাবে হুটহাট। কিন্তু চরিত্রটি শক্ত ইমেজ তুলে ধরে শেষে।
দর্শকের আয়নাতে ‘৩৬-২৪-৩৬’ ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করবে এতোটুকু আশা করাই যায়। একবিংশ শতাব্দিতে এসে আকার নয়- আচরণই হবে মানুষের মূল সৌন্দর্য, এ ধারণাকে নিয়ে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য চরকি ও পরিচালক রেজাউর রহমান একটা করে ধন্যবাদ পেতেই পারেন।
লেখা: সৈয়দা ফারজানা জামান রুম্পা