বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের জন্মদিন
আজ ২ নভেম্বর বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের জন্মদিন। ১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন এই কিংবদন্তী। আজ শাহরুখ খানের ৬০ তম জন্মদিন। শাহরুখ কেবল একজন নায়কই নন গত তিন দশক ধরে ভারতীয় সিনেমা প্রেমীদের হৃদয়ে তিনি তারকাদেরও তারকা হয়ে আছেন।
শাহরুখ খানের শৈশব এবং কিশোর বয়সজুড়ে অভিনয় ও নৃত্যের প্রতি আগ্রহ ছিল প্রকট। দিল্লি ইউনিভার্সিটির হংসরাজ কলেজ থেকে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন শাহরুখ।

শাহরুখ খানের অভিনয়যাত্রা
দিল্লির ‘ফৌজি’ এবং ‘সার্কাস’ নামের টেলিভিশন ধারাবাহিকের মাধ্যমে অভিনয়ে অভিষেক হয় শাহরুখের। ১৯৯২ সালে রাজ কাওয়ার পরিচালিত ‘দিওয়ানা’ সিনেমা দিয়ে বলিউডে পথ চলা। তারপর থেকে আর থেমে থাকতে হয়নি তাকে। প্রেম, অ্যাকশন, কমেডি, ট্র্যাজেডি- সব ধরনের চরিত্রে দর্শকদের মুগ্ধ করে নিজেকে পরিণত করেছেন কিং, তারপর বাদশাহ। বলিউডে গড়ে তুলেছেন তার বিশাল সাম্রাজ্য।
শাহরুখের ক্যারিয়ারটি মূলত প্রেম এবং আবেগের প্রতীক হিসেবে গড়ে উঠেছে। ১৯৯৫ সালে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ সিনেমার হাত ধরে বলিউডের ইতিহাসে প্রেমের এক নতুন উপাখ্যান লিখেছিলেন শাহরুখ।
‘অ্যান্টিহিরো’ থেকে ‘কিং অব রোমান্স’
এটি ছাড়াও বাজিগর, কুছ কুছ হোতা হ্যায়, দিল তো পাগল হ্যায়, দেবদাস, ভীর-জারা সিনেমাগুলো তাকে প্রেমের রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ডর এর ‘অ্যান্টিহিরো’ থেকে রাতারাতি তিনি হয়ে ওঠেন ‘কিং অব রোমান্স’। তবে শুধু রোমান্স নয়, স্বদেশ, চাক দে! ইন্ডিয়া সিনেমাতেও তিনি সামাজিক ও দেশাত্মবোধক চরিত্রে দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছেন।
একসময় শাহরুখ চেয়েছিলেন অ্যাকশন হিরোরূপে নিজেকে প্রমাণ করতে। সেক্ষেত্রেও তিনি সফল। ডন সিরিজ ও পাঠান, জওয়ান সিনেমায় দেখিয়েছেন অ্যাকশনের মুন্সিয়ানা।
শাহরুখ খানের নায়িকারা
তিন দশকের ক্যারিয়ারে শাহরুখ প্রথম দিকে নায়িকা হিসেবে কাজল, মাধুরী দীক্ষিত, রানী মুখার্জি, জুহি চাওলার সাথে অভিনয় করেছেন। এরপর তিনি জুটি বেঁধেছেন শ্রীদেবী, রাভিনা ট্যান্ডন, মনীষা কৈরালা, মহিমা চৌধুরীদের সঙ্গে। পরবর্তী প্রজন্মে শাহরুখ নতুন করে নায়ক হন দীপিকা পাডুকোন, ক্যাটরিনা কাইফ, আনুশকা শর্মাদের, তাতেও করেছেন বাজিমাত।
শাহরুখ পরিচালকদের মধ্যে কাজ করেছেন যশ চোপড়া, মনি রত্নম, সঞ্জয়লীলা বানসালি, ফারাহ খান, করণ জোহর, সিদ্ধার্থ আনন্দ, রোহিত শেঠি, রাজকুমার হিরানী, অ্যাটলিদের সঙ্গে। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন শাহরুখ।
কেবল ভারত নয় ভারতের গন্ডি পেরিয়ে তিনি পরিণত হয়েছেন গ্লোবাল স্টার হিসেবেও। তার স্টারডম আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়ার নানা দেশে ছড়িয়েছে বিশাল ফ্যানবেসের মাধ্যমে। প্রতি বছর জন্মদিনে হাজারো ভক্ত কলকাতা, মুম্বাই এবং বিদেশ থেকে তাকে দেখতে আসেন। তার ফ্যান ক্লাব থেকে নানা সামাজিক দায়িত্ব পালনে ক্যান্সার রোগী, বৃদ্ধাশ্রম ও বিশেষ চাহিদাযুক্ত শিশুদের জন্য নিয়মিত চ্যারিটি ইভেন্ট আয়োজন করা হয় তার জন্মদিনকে ঘিরে।

শাহরুখ খানের নারীর প্রতি শ্রদ্ধা
শাহরুখ নারীর প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহমর্মিতা দেখানোতেও সিদ্ধহস্ত। এজন্য তার নারী ভক্তের সংখ্যা অগুনতি। কিশোরী থেকে আশি বছরের বৃদ্ধা সবাই ভালোবাসেন এই অভিনেতাকে। মানেন আদর্শও।
ব্যক্তিজীবনে গৌরি খানকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন শাহরুখ। সেই সংসারে তিন সন্তান আরিয়ান, সুহানা ও আব্রাম। শাহরুখের উত্থানের কাহিনিজুড়ে আছে তার পরিবার। শাহরুখ প্রায়ই বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় অর্জন আমার পরিবার।’
কাজের অবসরে নিজের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসেন কিং খান। এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেছিলেন যে নিজের সন্তানদের রক্ষা করতে তিনি চলন্ত গাড়ির সামনেও ঝাঁপিয়ে পড়তে একটুও ভাবেন না। যদিও এমন পরিস্থিতিতে তাকে পড়তে হয়নি কখনো।
শাহরুখ কেবল সিনেমাই নয় মানবিকতা, বিনয়, সততার গুণেও পরিপূর্ণ। এসব গুণাবলী তাকে চলচ্চিত্রের বাইরের মানুষের কাছে প্রিয় করে তুলেছে। তবে বিতর্কও উঠেছে নানা সময়ে। কখনো কখনো তার বক্তব্য বা কাজ নিয়ে হয়েছে সমালোচনাও। কিন্তু তিনি সবসময় আত্মবিশ্বাস, শ্রম, মেধার বিকাশ ঘটিয়ে এগিয়ে গেছেন। ৬০ বছরে এসেও সেই যাত্রা চলমান।
শাহরুখের আবাস ‘মান্নাত’ এখন মুম্বাইয়ের অন্যতম দ্রষ্টব্যস্থান হয়ে উঠেছে। আজকের বিশেষ দিনটিতে প্রিয় নায়ককে একমুহুর্ত দেখার অপেক্ষায় হাজার হাজার মানুষ ভিড় করবেন মান্নাতের সামনে।
দুই সপ্তাহব্যাপি সিনেমা উৎসব
শাহরুখের ৬০ তম জন্মদিন উপলক্ষে একটি বিশেষ সিনেমা উৎসবের আয়োজন করেছে পিভিআর ইনক্স। দুই সপ্তাহব্যাপী এক চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ভারতজুড়ে। ভারতের ৩০টির বেশি শহরের ৭৫টিরও বেশি সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত হবে উৎসবটি।
পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আমেরিকা, যুক্তরাজ্য-ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং আরও অনেক স্থানে ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
উৎসবটি গত ৩১ অক্টোবর শুরু হয়েছে। চলবে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত। এই উৎসবে প্রদর্শিত হবে শাহরুখ খানের ৭টি আইকনিক ছবি। সাতটি সিনেমা হল; কাভি হাঁ কাভি না (১৯৯৪), দিল সে (১৯৯৮), দেবদাস (২০০২), ম্যায় হুঁ না (২০০৪), ওম শান্তি ওম (২০০৭), চেন্নাই এক্সপ্রেস (২০১৩), এবং জওয়ান (২০২৩)।