আজ ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস
আজ ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস। বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালের আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এটি তার ১৪৫তম জন্ম ও একইসাথে তার ৯৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। তার জীবন নিয়ে বাংলায় এখনো কোন জীবনী চলচ্চিত্র তৈরি হয়নি। তবে বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নিয়ে স্প্যানিশ চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ কিভাবে স্প্যানিশ চলচ্চিত্র হয়ে উঠলো ।

পুরুষ শাসিত আধিপত্যবাদী ও অনগ্রসর বাঙালী সমাজে মেয়েরা ছিলো অবহেলিত। তার নিজের অধিকারের জন্য মাথা তুলে দাঁড়াবে এমনটাই চেয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। সেই চাওয়া থেকেই তিনি লিখেন ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নামে একটি গ্রন্থ। যেই গ্রন্থে বাংলার মুসলিম নারীদের তথা পুরো নারী সমাজের পরিবর্তনের স্বপ্ন গেঁথেছেন তিনি। সেই স্বপ্নকে সিনেমার পর্দায় তুলে এনেছেন স্প্যানিশ নির্মাতা ইসাবেল হারগুয়েরা।
বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ যেভাবে স্প্যানিশ চলচ্চিত্র হল
২০২৩ সালে স্প্যানিশ ভাষায় ৮৬ মিনিট দৈর্ঘ্যের একটি অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। যার নাম রাখা হয়েছে ‘এল সুয়েনো দে লা সুলতানা’ (El sueño de la sultana), ইংরেজিতে ‘সুলতানাস ড্রিম’।
বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ ইংরেজি ভাষায় মাদ্রাজের ‘দ্য ইন্ডিয়ান লেডিজ ম্যাগাজিনে’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯০৫ সালে, আর বই আকারে বের হয় ১৯০৮ সালে। ১১৫ বছর আগে প্রকাশিত সেই ‘সুলতানাস ড্রিম’কে ইসাবেল হারগুয়েরা সিনেমার রূপ দিয়েছেন।
২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর স্পেনের ‘সান সেবাস্তিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভালে’ সিনেমাটির প্রিমিয়ারও হয়।

বেগম রোকেয়া সম্পর্কে কিভাবে জানলেন এবং বইটির লেখার সাথে কীভাবে পরিচয় হয়েছে, সে কথা ভ্যারাইটিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছিলেন স্প্যানিশ নির্মাতা হারগুয়েরা। তিনি জানান,২০১২ সালে সেলফ এমপ্লয়েড উইমেনস অ্যাসোসিয়েশনের (এসইডব্লিউএ) সঙ্গে কর্মশালায় যুক্ত হতে ভারতে ভ্রমণ করেছিলেন নির্মাতা ইসাবেল। এক দিন প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে আটকা পড়েছিলেন শহরের একটি আর্ট গ্যালারিতে। সেখানেই প্রথম খুঁজে পান ‘সুলতানাস ড্রিম’ বইটি।
নির্মাতা হারগুয়েরা বলেন, “এত বছর আগে লেখা একটি বই, যেখানে নারীদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছে অন্য এক পৃথিবীর। বইটি পড়ে আমার বিস্ময়ের শেষ ছিল না। একেবারে প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ার মত। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, এটা নিয়ে আমি সিনেমা বানাব।
“কিছুদিন পর সিদ্ধান্ত নিই যে ফিচার ফিল্ম হবে এবং অ্যানিমেশন হবে। কিন্তু অ্যানিমেশন ফিল্ম করতে দক্ষ লোকবলের প্রয়োজন হয়, প্রচুর অর্থ লাগে। আমার মনে হয় কাজটি দুর্দান্ত হয়েছে।”
২০১২ সালে ক্রাউডফান্ডিং বা গণঅর্থায়নের মাধ্যমে এ চলচ্চিত্র নির্মাণের শুরু হয়। চিত্রনাট্য তৈরি করার জন্য অনুদানও পেয়ে যান বাস্ক সরকারের কাছ থেকে। এরপর দীর্ঘ ৮ বছরের গবেষণা শেষে ২০২০ থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়। আর অ্যানিমেশন ও চূড়ান্ত ছবি আঁকার কাজটির দায়িত্বে ছিল ব্ল্যাকবার্ড ডিজাইন।
৫ ভাষায় বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’
এটি ইসাবেল হারগুয়েরার প্রথম ফিচার ফিল্ম। যৌথভবে এর চিত্রনাট্য লিখেছেন জিয়ানমার্কো সেরা। সিনেমটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫টি ভাষা- বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, ইতালীয়, স্প্যানিশ ও বাস্ক।
এই সিনেমায় কলকাতার সংগীতশিল্পী মৌসুমী ভৌমিকের লেখা একটি গানও আছে। গানটির সংগীতায়োজন করেছেন তাজদির জুনায়েদ, গেয়েছেন দীপান্বিতা আচার্য। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে স্পেন ও জার্মানির পাঁচটি প্রতিষ্ঠান।
রোকেয়া পদক ২০২৫
এদিকে আজ রোকেয়া দিবস উপলক্ষে দেশের ৪ নারীকে প্রদান করা হয়েছে রোকেয়া পদক। ‘বেগম রোকেয়া পদক ২০২৫’ প্রাপ্ত চার নারী হচ্ছেন নারীশিক্ষা শ্রেণিতে (গবেষণা) রুভানা রাকিব, নারী অধিকার শ্রেণিতে (শ্রম অধিকার) কল্পনা আক্তার, মানবাধিকার শ্রেণিতে নাবিলা ইদ্রিস ও নারী জাগরণ শ্রেণিতে (ক্রীড়া) ঋতুপর্ণা চাকমা।