নাজিফা তুষি-নির্মাতা সুমনের প্রস্তুতি
মেজবাউর রহমান সুমন দেশের চলচ্চিত্রে এক যুগান্তকারী নাম হয়ে উঠেছে। তিন বছর আগে তিনি নির্মাণ করেন তার প্রথম সিনেমা ‘হাওয়া’ যা আয় ছাড়াও শিল্পমানে ছিলো অনন্য। ‘হাওয়া’র পর এবার তিনি নির্মাণ করলেন সিনেমা ‘রইদ’। মঙ্গলবার সিনেমাটির পোস্টার প্রকাশ ও ট্রেলার প্রকাশের পর দর্শক থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র অঙ্গনের শিল্পী কলাকুশলীদের মধ্যে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সিনেমার অন্যতম প্রধান চরিত্র নাজিফা তুষির পরিবর্তন নিয়ে। ট্রেলারে তার সম্পুর্ণ ভিন্নরূপ দেখে আলোচনা চলছে কিভাবে নাজিফা তুষির এই অসাধ্য সাধন করলেন? সিনেমা ‘রইদ’ নির্মাণে অবিশ্বাস্য যেসব প্রস্তুতি নিয়েছেন নাজিফা তুষি ও সুমন তা জানিয়েছেন গণমাধ্যমে।

সিনেমা ‘রইদ’- এর ট্রেলারটি ২ মিনিট ২১ সেকেন্ডের। ট্রেলারে আবহ, দৃশ্যকল্প আর চরিত্রের উপস্থিতি উন্মোচন করেছে এক ভিন্ন দুনিয়া। সিনেমাপ্রেমীরা বলছেন সুমন পরিণত ও ‘গভীর’ এক গল্প নিয়ে ফিরছেন ‘রইদ’ সিনেমায়।

‘রইদ’ নিয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সুমন সিনেমার গল্পের উৎপত্তি ও নির্মাণ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জানান, এই সিনেমার গল্পের সূত্র তার শৈশবে। ছোটবেলায় তার পরিচিত দুটি চরিত্রকে ঘিরেই ‘রইদ’-এর জন্ম। গল্পের অর্ধেক অংশীদার তার মা। শৈশব থেকেই এই গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছেন তিনি। সেই স্মৃতি, অনুভূতি আর লোকজ আখ্যানের মিশেলেই তৈরি হয়েছে ‘রইদ’।
সুমন বলেন, ‘হাওয়া’ ছিল সমুদ্রযাত্রার সিনেমা , জল আর অনিশ্চয়তার গল্প। সেখানে স্থলভাগে দাঁড়িয়ে ‘রইদ’ নির্মাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ও চ্যালেঞ্জিং অভিজ্ঞতা । ‘রইদ’-এর গল্প আবর্তিত হয়েছে সাদু, তার পাগল স্ত্রী এবং তাদের বাড়ির পাশের একটি তালগাছকে কেন্দ্র করে। হাজার বছরের পুরোনো লোকজ আখ্যানকে বর্তমান সময়ের ভাষায় নতুন করে নির্মাণ করার চেষ্টা করেছেন তিনি।

‘রইদ’ নির্মাণে অবাক করা প্রস্তুতি নির্মাতার
নির্মাতা জানান ‘রইদ’ –এর সেট নির্মাণের জন্য ফাঁকা জায়গায় প্রায় ৫০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। প্রায় ছয় মাস ধরে সেই গাছগুলোর পরিচর্চা করা হয়েছে, যাতে লোকেশনটি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। গল্পের কেন্দ্রীয় বাড়িটিও শুটিংয়ের জন্য নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাতার বলেন, ‘লোকেশনকে কেবল ব্যবহার নয়, গল্পের অংশ করে তুলতেই এত পরিশ্রম।’

সিনেমাটির অন্যতম প্রধান চরিত্র ‘সাদুর পাগল স্ত্রী’। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী নাজিফা তুষি। ট্রেলারে তাঁর উপস্থিতি, অবয়ব দর্শকের আগ্রহ ও কৌতূহল বাড়িয়ে তুলেছে।
অবিশ্বাস্য প্রস্তুতি নিয়েছেন নাজিফা তুষি
‘রইদ’ নির্মাণে অবিশ্বাস্য প্রস্তুতি নিয়েছেন নাজিফা তুষি। দেশের গণমাধ্যমে দেওয়া নানা সাক্ষাৎকারে ‘সাদুর পাগল স্ত্রী’ চরিত্রটি নিয়ে তার প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেছেন তিনি। তুষি বলেন, ‘হাওয়া’ আর ‘রইদ’ – দুটি সিনেমার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। এই চরিত্রের জন্য টানা ছয় মাস চুলে শ্যাম্পু, সাবান বা কোনো মেকআপ ব্যবহার করেননি তিনি। শুধু পানি দিয়ে গোসল করেছেন। চরিত্রের বাস্তবতা আনতে রোদে দাঁড়িয়ে শরীরে শর্ষের তেল মেখেছেন, যাতে ত্বক পুড়ে দাগ ও মেছতা ফুটে ওঠে।
চরিত্রের প্রয়োজনে দাঁতের রং ও গঠনেও পরিবর্তন এনেছেন তুষি। স্থানীয় মানুষের মতো হতে পাথরের চুন খেয়েছেন, যার ফলে মুখ ও জিব পুড়ে যেত, কথা বলাও ভারী হয়ে আসত। তুষির ভাষায়, ‘হাওয়া’র চেয়েও ‘রইদ’ আমার জন্য সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং কাজ ।’
নামহীন নাজিফা
সিনেমায় তুষির চরিত্রটির কোনো নাম নেই। এই নামহীনতা চরিত্রটিকে আরও প্রতীকী করে তুলেছে বলে মনে করেন অভিনেত্রী। শুটিংয়ের সময় প্রয়োজনে শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি, সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত কাপড় কিনে পরেছেন। বাস্তব জীবনের কাছাকাছি থাকতে নিজের আরামকে পুরোপুরি পাশে সরিয়ে রেখেছিলেন।
সহশিল্পী হিসেবে ‘রইদ’-এ তুষির সঙ্গে অভিনয় করেছেন অভিনেতা মোস্তাফিজুর নূর ইমরান। তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা করে তুষি বলেন, সহশিল্পী হিসেবে ইমরানের উপস্থিতি চরিত্র নির্মাণে বড় সহায়ক হয়েছে।
রটারড্যাম চলচ্চিত্র উৎসব ‘রইদ’
‘রইদ’-এর পোস্টার প্রকাশের দিনই জানানো হয় বড় সুখবর। বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব রটারড্যাম–এর ৫৫তম আসরের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগ ‘টাইগার কম্পিটিশন’-এ অফিশিয়ালি নির্বাচিত হয়েছে ‘রইদ’। এই বিভাগে নির্বাচিত হওয়া মানেই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি।