জেমসের মাথায় গামছা পড়ার রহস্য
বাংলা রক সংগীতের কিংবদন্তী শিল্পী জেমসের অনেক বিষয়ই এখনো অজানা শ্রোতাদের কাছে। এমন অনেক বিষয় শ্রোতারা এখনো নতুন করে শুনছেন। জেমসের মাথায় গামছা পড়ার রহস্য তার মধ্যে অন্যতম। তবে এবার জানা গেল মাথায় কেন গামছা পড়তেন জেমস, সেই ইতিহাস।
মাথায় গামছা পড়ার পাশাপাশি জানা গেল একজন মাটির মানুষ জেমস। আরো পাওয়া গেল জেমসের ‘পথের বাপই বাপরে মনা, পথের মা-ই মা গানের উৎস। সম্প্রতি এসব গল্প শুনিয়েছেন আলোকচিত্রশিল্পী নজরুল সৈয়দ।
জেমসের জন্মদিন স্মরণে এক ফেসবুক পোস্টে এই আলোকচিত্রশিল্পী বলেন, ‘সাভারের অরুণাপল্লীতে আমার নিজের বাড়ির সমপর্যায়ে একটা বোনের বাড়ি আছে; যেখানে যখন খুশি গিয়ে দিনমান ল্যাটাতে পারি, গান শুনতে আর সিনেমা দেখতে পারি, কফিতে চুমুক দিতে দিতে আড্ডাতে পারি। এই অরুণাপল্লীর উল্টোদিকের খোলা জায়গাটায় খুব বিখ্যাত একটা দারুণ গান তৈরির ইতিহাস আছে, এটা সম্ভবত অরুণাপল্লীর বাসিন্দারাও জানে না।
গান তৈরির নেপথ্যে একটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের ছবি তোলা, এমনটাই জানিয়ে এই আলোকচিত্রশিল্পী বলেন, ‘‘বছর ত্রিশেক আগে, ১৯৯৬ সাল। জেল থেকে বলছি, পালাবে কোথায়, প্রিয় আকাশি, ভালবাসার যৌথ খামার ইত্যাদি গেয়ে রকস্টার জেমস ততদিনে গুরু হয়ে উঠছেন। হয়ে উঠছেন ‘নগর বাউল’ তকমায় নতুন ক্রেজ। আনন্দভুবন নামে তখন দারুণ স্মার্ট এক বিনোদন পত্রিকা ছিল।
ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে
মেজাজই আলাদা, অন্য কোনও সিনে ম্যাগাজিনের সঙ্গে মেলানোই যায় না। এর আগে বাংলাদেশের কোনও বিনোদন ম্যাগাজিন বোধহয় ভাবতে পারেনি সিনেমার নায়িকা ছাড়া একটা ‘ব্যাটাছেলে’র ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ করা যেতে পারে, আনন্দভুবন ভেবেছিল। প্রথমবারের মতো জেমস ভাইয়ের ছবি ছাপা হয়েছিলো কোনো বিনোদন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে, ঈদসংখ্যায়ও।’
জেমসের গলায় গামছা আসার গল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তো সেই ছবি তুলতেই আনন্দভুবন টিম গিয়েছিল সাভারে। অরুণাপল্লীর গেটের উল্টোদিকের ধূ ধূ মাঠে ছবি তোলার প্রস্তুতি চলছে।
গামছা ও কৃষকের সাথে জেমস
স্থানীয় এক কৃষক আসিরুদ্দিন মন্ডল একটা গামছায় করে গুড় আর মুড়ি নিয়ে এলেন, জেমস ভাইকে খেতে দিলেন। গুড় আর মুড়ি খেতে খেতে জমে উঠলো দুজনের আলাপ। বেশ মারফতি আলাপ। সেই আলাপের এক পর্যায়ে আসিরুদ্দিন মন্ডল বললেন ‘এই পথই আমাগো বাপ, পথই আমগো মা’। আড্ডার শেষে নিজের চাদরের বিনিময়ে মন্ডল সাহেবের গামছাটা নিয়ে নিলেন জেমস ভাই। তারপর থেকে দীর্ঘ অনেক বছর তার পোশাকের অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে ছিলো গামছা।‘
আলোকচিত্রশিল্পী নজরুল সৈয়দ বলেন, ‘‘ফটোসেশন শেষে ঢাকায় ফেরত। কিন্তু মাথার মধ্যে রয়ে গেলো কৃষক আসিরুদ্দিন মন্ডলের বলা সেই কথাটা ‘পথই আমগো বাপ, পথই আমগো মা’। সেই কথাটা একসময় তুলে দিলেন গীতিকার আনন্দর মাথায়। ধীরে ধীরে সেটা গান হয়ে উঠলো। দুবছর পর ’লেইস ফিতা লেইস’ অ্যালবামে আত্মপ্রকাশ করলো ‘পথের বাপই বাপ রে মনা পথের মাই মা, এই পথের মাঝেই খুঁজে পাবি আপন ঠিকানা। পথের দুখই দুখ রে মনা পথের সুখই সুখ, পথের ভীড়েই খুঁজে পাবি অচিন প্রিয় মুখ।’ এরপর? ইতিহাস…”
এই ছবির নেপথ্যের নায়কের কথা জানিয়ে নজরুল বলেন, ‘সেদিনের সেই ঐতিহাসিক ছবি এটা। আসিরুদ্দিন মন্ডল আর জেমস ভাই পরস্পর আলিঙ্গনাবদ্ধ। ছবিটি তুলেছিলেন আমার অত্যন্ত প্রিয় তানভির ভাই। জেমস ভাইয়ের সঙ্গে পরে একাধিক ফটোসেশনে আমি ছিলাম, তার বাড়িতে আর সাউন্ডগার্ডেনে অসংখ্য আড্ডায় ছিলাম। কিন্তু দুঃখ একটাই, এই ফটোসেশনটাতে আমি ছিলাম না। তানভির ভাই, টিঙ্কু ভাই, আদিত্যদা, তুয়া আপাদের কাছে শুধু গল্পই শুনেছি।’