Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
সোমবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৫

শিল্পকলা একাডেমির মাসব্যাপী যাত্রাপালা – প্রাচীন নাট্যধারার পুনর্জাগরণ

শিল্পকলা একাডেমির মাসব্যাপী যাত্রাপালা
শিল্পকলা একাডেমির মাসব্যাপী যাত্রাপালা

হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাচ্ছে নতুন প্রজন্ম

বাংলাদেশি যাত্রাপালা আমাদের লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় নাট্যধারা। এর শিকড় প্রোথিত রয়েছে বৈষ্ণব ধর্মীয় আন্দোলন ও কীর্তন-পালার ঐতিহ্যে। রাধা-কৃষ্ণের লীলা, রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনি দিয়েই মূলত যাত্রাপালার সূচনা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় গল্পের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতাও যাত্রাপালার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ আমলে যাত্রাপালা গ্রামবাংলার মানুষের সচেতনতার মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় যাত্রাপালা হয়ে ওঠে প্রতিবাদের শক্তিশালী শিল্পরূপ। স্বাধীনতার পর ৭০ ও ৮০–এর দশকে যাত্রাপালা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং দেশের প্রায় সব জেলাতেই নিয়মিত মঞ্চায়ন হতো। তবে টেলিভিশন, সিনেমা ও ডিজিটাল বিনোদনের প্রসারে নব্বইয়ের দশক থেকে যাত্রাপালার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে যাত্রাপালাকে টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নতুন করে উদ্যোগ নিচ্ছে। বাংলার প্রাচীন ও জনপ্রিয় লোকজ নাট্যধারা যাত্রাপালাকে নতুন করে সামনে আনতে শিল্পকলা একাডেমির মাসব্যাপী যাত্রাপালা আয়োজন ।

শিল্পকলা একাডেমির মাসব্যাপী যাত্রাপালা

এরই ফলশ্রুতিতে বিজয়ের মাসে দেশজুড়ে যাত্রাপালার ঐতিহ্যকে নতুন করে প্রাণ দিতে বিশেষ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। আজ থেকে ঢাকার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে শুরু হচ্ছে এই যাত্রাপালা প্রদর্শনী, যা চলবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মঞ্চে উঠবে দেশজ ঐতিহ্যের এই জনপ্রিয় নাট্যরূপ।

এই মাসব্যাপী আয়োজনে খুলনা, নরসিংদী, সিলেট, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পেশাদার ৩১টি যাত্রাদল মোট ৩১টি যাত্রাপালা পরিবেশন করবে। আয়োজকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বশীল পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যাত্রাপালা তার ঐতিহ্যগত অবস্থান হারাতে বসেছে, আর সেখান থেকেই এই উদ্যোগ।

যাত্রাপালা আমাদের নিজস্ব শিল্পধারা

শিল্পকলার নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক দীপক কুমার গোস্বামী এ প্রসঙ্গে বলেন, যাত্রাপালা আমাদের নিজস্ব শিল্পধারা হলেও বর্তমানে তা এক ধরনের স্থবিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলেও এখন আগের মতো যাত্রাপালার আয়োজন চোখে পড়ে না, অনেক স্থানেই অনুমতির জটিলতা রয়েছে। এই বাস্তবতায় যাত্রাপালাকে আবারও শক্ত অবস্থানে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন।

তিনি আরও জানান, বর্তমান প্রজন্মের অনেক তরুণ শুধু যাত্রাপালার নাম শুনেছে, সরাসরি কখনো দেখা হয়নি। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে তরুণদের সঙ্গে যাত্রাপালার সরাসরি পরিচয় ঘটানোই তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য।

এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছে সূর্যতরুণ নাট্য সংস্থা, নিউ জহুরা অপেরা, বাংলার নায়ক অপেরা, নিহা যাত্রা ইউনিট, নিউ সুমি অপেরা, নিউ স্টার অপেরা, বনফুল অপেরা, উর্মি অপেরা, রূপসা অপেরা, পুরবী যাত্রা ইউনিট, কাজল অপেরা, গীতাঞ্জলী অপেরা, তিষা অপেরাসহ মোট ৩১টি যাত্রাদল।

শিল্পকলা একাডেমি জানিয়েছে, প্রদর্শনীর টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। টিকিট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ সংশ্লিষ্ট যাত্রাদলগুলোকে দেওয়া হবে, যা তাদের অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা সহায়তা করবে।

শুধু যাত্রাপালা নয়, প্রতিদিন বিকাল পাঁচটা থেকে জাতীয় নাট্যশালার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে দেশাত্মবোধক যাত্রাগানের বিশেষ কনসার্ট, যা পুরো আয়োজনকে আরও বর্ণিল করে তুলবে।

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next
0
Share