রুপালী পর্দার মুকুটবিহীন সম্রাট আনোয়ার হোসেন
আজ, ৬ নভেম্বর, রুপালী পর্দার মুকুটবিহীন সম্রাট আনোয়ার হোসেন -এর জন্মদিন।১৯৩১ সালের এই দিনে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মুরুলিয়া গ্রামের মিয়াবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম নজির হোসেন ও মায়ের নাম সাঈদা খাতুন। তিনি ছিলেন তার বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান।
১৯৫১ সালে তিনি জামালপুর স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। স্কুলজীবনেই অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় আনোয়ার হোসেনের। তার প্রথম অভিনীত প্রথম নাটকের নাম ‘পদক্ষেপ’ যা লিখেছেন আসকার ইবনে সাইক।
ঢাকার জীবনে আনোয়ার হোসেন
১৯৫৭ সালে আনোয়ার হোসেন জীবনের নতুন যাত্রা শুরু হয় এই অভিনেতার। ঢাকায় চলে আসেন তিনি। ঢাকায় তিনি যুক্ত হন বেতার নাটকে। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ হাসান ইমাম, ফতেহ লোহানী, সুভাষ দত্ত, চিত্রা সিনহা, মেহফুজসহ তৎকালীন প্রতিভাবান শিল্পীরা। ১৯৫৯ সালে ‘এক টুকরো জমি’ নাটকে অভিনয় করে পাদপ্রদীপে আসেন তিনি। সেই মঞ্চ থেকেই তিনি আসেন চলচ্চিত্রে।
১৯৬১ সালে পরিচালক মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। পরের বছর সালাহউদ্দিন পরিচালিত ‘সূর্যস্নান’-এ নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। এরপর একে একে সালাহউদ্দিন, খান আতাউর রহমান, আমজাদ হোসেন, জহির রায়হান, আলমগীর কবির, সুভাষ দত্তসহ বাংলা চলচ্চিত্রের অসংখ্য অমর পরিচালকের সাথে কাজ করেন তিনি।
‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’য় আনোয়ার হোসেন
১৯৬৭ সালে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে অভিনয় করেন আনোয়ার হোসেন। সেই সিনেমা দিয়েই অমর হয়ে যান এই অভিনেতা। চিরস্থায়ী জায়গা করে নেন দর্শক হৃদয়ে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা চরিত্রকে তিনি তার আবেগ, কণ্ঠের দৃঢ়তা, বেদনা ও দেশপ্রেমে একাকার করে তোলেন। নবাবের মৃত্যুর দৃশ্যে তার সংলাপ ও মুখের অভিব্যক্তি আজও অমলিন। বাস্তবের নবাবের সাথে তিনিও হয়ে উঠে আরেক নবাব, মুকুট বিহীন নবাব।
আনোয়ার হোসেন – ‘দ্যা হার্ট অ্যাটাক মাস্টার‘!
আনোয়ার হোসেন তার অভিনয় জীবনে অসংখ্য সিনেমায় হার্ট অ্যাাটাকে মারা গিয়েছেন। যার কারণে দর্শকেরা তাকে ‘কিং অব হার্ট অ্যাটাক’ কিংবা হার্ট অ্যাটাক মাস্টার’ নামে চেনা শুরু করে। এ নামটিই এখন তার অন্যতম পরিচয় যা দিয়ে জেনারেশন জেড (জেন-জি) প্রজন্ম বিভিন্ন মিম তৈরি করছেন।
আনোয়ার হোসেন তার অভিনয় জীবনে নানারকম চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত সিনেমার মধ্যে আছে,‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘লাঠিয়াল’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘পালঙ্ক’, ‘ভাত দে’, ‘সূর্য সংগ্রাম’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সহ অসংখ্য সিনেমা।
আনোয়ার হোসেন অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, নিগার পুরস্কার, ১৯৮৫ সালের একুশে পদক এবং ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা।
২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর, চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তী অভিনেতা।