সংগীতের মহাগুরুর জন্মবার্ষিকীতে ব্যতিক্রমী আয়োজন
বাংলা সংগীতের ইতিহাসে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এক অনন্য নাম সংগীতের সাধনা ও আত্মত্যাগের জীবন্ত প্রতীক। আজ, বুধবার (৮ অক্টোবর), এই কিংবদন্তি সাধকের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৬২ সালের এই দিনে তৎকালীন ত্রিপুরা প্রদেশের শিবপুর গ্রামে (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর) জন্ম নেন তিনি। বাংলা সংগীতের ইতিহাসে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এক অনন্য নাম , সংগীতের মহাগুরুর জন্মবার্ষিকীতে ব্যতিক্রমী আয়োজন আজ রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লা চত্বরে ।
শৈশবে ‘আলম’ নামে পরিচিত আলাউদ্দিন খাঁ ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতি, শব্দ ও সুরের প্রতি গভীর অনুরাগ দেখিয়েছিলেন। আগরতলার রাজদরবারের সভাসংগীতজ্ঞ ও তানসেন বংশীয় রবাবী ওস্তাদ কাশিম আলী খাঁ ছিলেন তাঁর সংগীতগুরু। মাত্র দশ বছর বয়সে তিনি ঘর ছেড়ে যোগ দেন এক যাত্রাদলে সেখানেই প্রথম পরিচয় ঘটে গ্রামীণ সংগীতের প্রাণধারা জারি, সারি ও বাউলের সঙ্গে।
পরবর্তীতে কলকাতায় গিয়ে তিনি গোপালকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। গুরু মৃত্যুর পর যন্ত্রসংগীতে মনোনিবেশ করেন এবং বাঁশি, সেতার, বেহালা, তবলা থেকে শুরু করে নানা বাদ্যযন্ত্রে অর্জন করেন অসাধারণ দক্ষতা। তাঁর তত্ত্বাবধানেই গড়ে উঠেছিল মাইহারের ঐতিহ্যবাহী মাইহার ঘরানা, যা পরবর্তীতে বিশ্ব সংগীতের পরিমণ্ডলে শ্রদ্ধার আসনে স্থান করে নেয়।
সংগীতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন ‘সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার’ (১৯৫২), ‘পদ্মভূষণ’ (১৯৫৮), ‘পদ্মবিভূষণ’ (১৯৭১) এবং বিশ্বভারতীর সম্মানজনক ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি। ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের মাইহারে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
লালবাগে বিশেষ আয়োজন
এই মহান শিল্পীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লা চত্বরে আয়োজিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে উদ্যাপন কার্যক্রম।
বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভিডিও বার্তার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন হবে। প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বিশেষ অতিথি সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন নবীন প্রজন্মের শিল্পীরা ও ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর প্রপৌত্র সিরাজ আলী খান। সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে প্রদর্শিত হবে কিংবদন্তির জীবন ও কর্মভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র। এরপর খেয়াল পরিবেশন করবেন পণ্ডিত অসিত দে এবং সমবেত সংগীত পরিবেশন করবেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
শাস্ত্রীয় সংগীত পরিবেশনায় অংশ নেবেন অভিজিৎ কুণ্ডু (ধ্রুপদ), প্রশান্ত ভৌমিক ও ফাহমিদা নাজনীন (তবলা), শুক্লা হালদার (এসরাজ), নিলয় হালদার (সারেঙ্গি), ইসরা ফুলঝুরি খান ও ইলহাম ফুলঝুরি খান (সরোদ), সোহিনী মজুমদার ও মোহাম্মাদ কাওছার (সেতার)।
রাত ৮টা ১০ মিনিটে আফসানা খান (সেতার) ও রুখসানা খান (সরোদ) যুগলবন্দী পরিবেশনা উপস্থাপন করবেন। পরিশেষে, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ ও আলাপচারিতায় অংশ নেবেন বিশিষ্ট আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন।
লালবাগ কেল্লায় আজকের এই আয়োজন শুধু এক সংগীতগুরু নয়, বরং এক যুগের সংস্কৃতি, ত্যাগ ও সুরের আত্মাকে শ্রদ্ধা জানানোর দিন।