ওয়ারফেজের বিশেষ জিপো লাইটার
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ওয়ারফেজ নিয়ে এলো এক দুর্দান্ত খবর। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ব্যান্ড হিসেবে ওয়ারফেজের বিশেষ জিপো লাইটার আসছে। চলতি বছরের শেষের দিকে বাজারে দুটি ভিন্ন ডিজাইনের লাইটার পাওয়া যাবে। চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যেই। এ নিয়ে আগামী মাসে কানাডার কনসার্ট শেষ করে দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে ওয়ারফেজ।
জিপো ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির বাংলাদেশে বিপণনের দায়িত্বে আছে ‘লাক্সকো ট্রেডিং’। গত ২৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির গুলশান অফিসে ওয়ারফেজের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়। খবরটি প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক ইরফান হোসেন নিশ্চিত করেছেন। ইরফান হোসেন বলেন, ‘এটি শুধু একটি চুক্তি নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। প্রায় শত বছরের পুরোনো জিপো সব সময় মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে কাজ করে এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ব্যান্ড হিসেবে ওয়ারফেজের সঙ্গে পথচলা শুরু হলো। একজন বাংলাদেশি হিসেবে যা আমাদের জন্য গর্বের। ওয়ারফেজ ঢাকায় ফিরলেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত সবাইকে জানাব।’
ব্যান্ডটির দলনেতা, ড্রামার শেখ মনিরুল টিপুও চুক্তির বিষয়টি দেশের গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এত এত কিংবদন্তির সঙ্গে জিপো কাজ করেছে, কার নাম রেখে কার নাম বলব। সেখানে আমাদের জায়গা পাওয়া সত্যিই গর্বের। চার দশকের পথচলা উপলক্ষে অনেক বড় একটা উপহার পাচ্ছি, যার কৃতিত্ব ভক্তদের, তাদের ভালোবাসায় আমরা আজ এ অর্জন করতে পেরেছি। বাংলাদেশের পরিবেশকদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে, ডিজাইন চূড়ান্ত হয়ে তা উৎপাদনেও চলে গেছে।’
বাজারে পাওয়া যাবে দুটি ভিন্ন ডিজাইনের জিপো। যার এক পাশে থাকবে ওয়ারফেজ ব্যান্ডের অ্যালবাম আর্ট, আরেক পাশে থাকবে ব্যান্ডের লোগো আর এ নিয়েই আসছে ওয়ারফেজের বিশেষ জিপো লাইটার। এটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তুত করা হচ্ছে, নভেম্বরে বাংলাদেশে পাওয়া যাবে। তবে এটি কিনতে কত খরচ করতে হবে, তা শিগগির সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানাবে ‘লাক্সকো ট্রেডিং’।
মার্কিন সৈন্যদের জন্য জিপো
চমকপ্রদ ডিজাইন, আজীবনের গ্যারান্টি ও বাতাস প্রতিরোধী লাইটার ছাড়াও জিপোর আছে প্রায় শত বছরের ইতিহাস। বিশ্বের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী থেকে কালজয়ী ব্যান্ড, অভিনেতাদের জন্য বিশেষ জিপো বানিয়ে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা বেড়েছে ব্র্যান্ডটির। এ তালিকায় সংগীতশিল্পীদের মধ্যে আছে এলভিস প্রিসলি, এরিক ক্ল্যাপটন, বব মার্লে, জনি ক্যাশ, জেরি গার্সিয়া, বন জোভি, ব্যান্ডের মধ্যে আছে মেটালিকা, আয়রন মেইডেন, গানস এন’ রোজেস, এসি/ ডিসির বিভিন্ন ডিজাইনের বিশেষ জিপো। হলিউড এডিশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে জেমস বন্ড, চার্লি চ্যাপলিন, মেরিলিন মনরো, জেমস ডিনের জিপো। অনেক হলিউড তারকা জিপো লাইটার বহন করেন, অনেকের আছে ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা। হলিউড নির্মাতা কুয়েন্টিন টারান্টিনোর বাড়িতে বেশ কিছু ঐতিহাসিক জিপোর সংগ্রহ রয়েছে, মার্কিন গায়ক ফ্রাঙ্ক সিনাত্রাকে দাফনের সময় তার জিপো লাইটারটিও সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল। তবে জিপোর জনপ্রিয়তা আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, সে সময় সাধারণ ক্রেতাদের জন্য উৎপাদন বন্ধ রেখে শুধু মার্কিন সৈন্যদের জন্য তা উৎপাদন করা হয়।
জর্জ গ্রান্ট ব্লেইজডেল
১৯৩০-এর দশকের শুরুতে, পেনসিলভানিয়ার ব্র্যাডফোর্ডে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন জর্জ গ্রান্ট ব্লেইজডেল। সেখানে একটি লাইটার ধরাতে তাঁর এক বন্ধুকে কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছিল, বাতাসে এটি বাবার নিভে যাচ্ছিল। এই দৃশ্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্লেইজডেল কাজ শুরু করেন একটি সহজে ব্যবহারযোগ্য, বাতাস প্রতিরোধী লাইটার তৈরি করতে। এভাবেই জন্ম নিল উইন্ডপ্রুফ লাইটার, তিনি কোম্পানির নাম রাখলেন জিপো। ১ দশমিক ৯৫ ডলার দামে এটি বাজারে আসে। যার সঙ্গে যুক্ত ছিল নিঃশর্ত আজীবন গ্যারান্টি, কোম্পানির প্রতিপাদ্য ছিল, ‘হয় কাজ করবে, না হলে আমরা বিনা মূল্যে ঠিক করে দেব’।
১৯৩৩ সালে প্রথম জিপো পকেট লাইটারটি বাজারে আসে। যা বর্তমানে ব্র্যাডফোর্ডে জিপোর সংগ্রহশালায় দর্শনার্থীদের জন্য রাখা আছে। প্রতিবছর এক লাখের বেশি দর্শনার্থী মিউজিয়ামটিতে ভিড় জমান।
ওয়ারফেজ ব্যান্ড
দেশ–বিদেশে কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে ওয়ারফেজ। দলটি এখন কানাডায় আছে। ৬ সেপ্টেম্বর কানাডার অন্টারিও প্রদেশের লন্ডন শহরে কনসার্ট দিয়ে শুরু হয় তাদের সংগীত সফর। এরপর ভ্যাঙ্কুভার, এডমন্টন, হ্যালিফ্যাক্স, সেন্ট জনস, রেজিনায় পারফর্ম করে ওয়ারফেজ। এরপর টরন্টো, অটোয়া। ৪ অক্টোবর উইনিপিগের কনসার্ট দিয়ে শেষ হবে তাদের কানাডা সফর।