কিশোর কুমারের জন্ম বৃটিশ ভারতের মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়ায় ১৯২৯ সালে। তার বাবা কুঞ্জলাল গঙ্গোপাধ্যায় পেশায় ছিলেন আইনজীবী। চার ভাই বোনের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন কিশোর কুমার। কিশোর কুমারের আসল নাম ছিল আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায়।
কিশোর কুমার বলিউডে ক্যারিয়ার শুরু করেন ‘বম্বে টকিজে’ কোরাস সিঙ্গার হিসেবে। সেই সময় বলিউড ইন্ডাস্ট্রির বড় স্টার অশোক কুমার। অশোকের ইচ্ছে ছিল কিশোর তার মতো অভিনেতা হোক। কিন্তু কিশোরের মন পড়েছিল গানের দিকেই।
কিশোর কুমারের অভিনেতা হিসেবে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ হয় “শিকারী” (১৯৪৬) ছবিতে। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে ছিলেন অশোক কুমার। প্রসঙ্গত, ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৫ এর মধ্যে ২২টি ছবিতে কাজ করেন কিশোর কুমার। তার মধ্যে ১৬টি ফ্লপ ছবি। তারপর ‘লড়কি’ ও ‘বাপ রে বাপ ‘ছবিতে সাফল্য পাওয়ার পর অভিনেতা হিসেবে তাকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেন পরিচালক প্রযোজকরা।
১৯৭০ সালে “রূপ তেরা মাস্তানা” গানের জন্য প্রথম ফিল্মফেয়ার আ্যওর্য়াড পান কিশোর কুমার। প্রথমবার ভারতীয় গানে ইউডলিং-এর ব্যবহার কিশোর কুমার করেন। তবে তার গানের মধ্যে ইওডেলিং স্টাইল বিখ্যাত সংগীত শিল্পী জিমি রজার্স (Jimmie Rodgers) এবং টেক্স মর্টন (Tex Morton) এর স্টাইল থেকে অনুপ্রাণিত বলে মনে করা হয়।
বরেণ্য সংগীত পরিচালক শচীন দেব বর্মনের কথাতেই এই ইওডেলিং স্টাইলটি রপ্ত করেন কিশোর কুমার। অভিনেতা রাজেশ খান্নার জন্য প্রায় ২৪৫ টি গান গেয়েছেন কিশোর কুমার। তারপরই রয়েছেন দেব আনন্দ, জিতেন্দ্র ও অমিতাভ বচ্চন। পরে একটি সিনেমাকে কেন্দ্র করে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে মন কষাকষি হয় কিশোর কুমারের।
তার গাওয়া ‘Aake seedhi lagi dil pe’ গানটিতে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের গলায় গানটি একাই গেয়েছেন কিশোর কুমার। তবে মেয়ের অংশটি গাওয়ার কথা ছিল লতা মঙ্গেশকরের।
জীবনে চারবার বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার। তার জীবনে চার খুব আশ্চর্যজনক সংখ্যা। কারণ তিনি জন্মগ্রহণ করেন ৪ আগস্ট ৪ টার সময় এবং তিনি ছিলেন পরিবারের ৪র্থ সন্তান। জীবনে ৪টি বিয়ে করেছেন তিনি; মোট ৪টি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই কিংবদন্তি।
কিশোরের প্রথম স্ত্রী রুমা গুহ ঠাকুরতা। আট বছরের দাম্পত্য জীবন তাদের। দ্বিতীয় স্ত্রী মধুবালা, তার সঙ্গে নয় বছর ঘর করেন। মধুবালাকে বিয়ে করার জন্য মুসলিম হন কিশোর কুমার নাম নেন করিম আবদুল। তৃতীয়বার বিয়ে করেন যোগিতা বালিকে। যিনি বর্তমানে মিঠুন চক্রবর্তীর স্ত্রী। তবে যোগিতা ও কিশোরের বিবাহিত জীবন টিকে ছিল মোটে দু-বছরের জন্যে( ১৯৭৬-১৯৭৮)। চতুর্থবার বিয়ে করেন লীনা চন্দ্রভারকরকে। আমৃত্যু তার সঙ্গেই ছিলেন কিশোর কুমার। শোনা যায় যোগিতা বালি তাকে ছেড়ে মিঠুন চক্রবর্তীকে বিয়ে করায় গান বন্ধ করে দেন এই কিংবদন্তী শিল্পী। তার চারটি বিয়ে থেকে দুটি সন্তান রয়েছে অমিত কুমার ও সুমিত কুমার। দু’জনেই সংগীত শিল্পী।
কিশোর কুমার তার শেষ জীবনে একেবারে একাকীত্বে দিন কাটিয়েছেন। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নিজের একাকীত্বের কথা স্বীকারও করেছেন তিনি। কিশোর কুমার ছিলেন সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ীর মামা। ১৯৮৭ সালে ১৩ অক্টোবর মুম্বাইতে মারা যান এই কিংবদন্তী শিল্পী।
কিশোর কুমার ২৫০০- এরও বেশি গান বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় রেকর্ড করেছেন। তিনি হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, গুজরাটি, ওড়িয়া, ভোজপুরি, কন্নড়, মালায়ালাম, এবং অন্যান্য ভাষায় গান গেয়েছেন।
তিনি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছেন, যার মধ্যে “দূর গগন কি ছাঁও মে”, “দূর কা রাহি”, “ছোটি সি মুলাকাত” উল্লেখযোগ্য।
আজ এই সঙ্গীতজ্ঞ এবং ভারতের চলচ্চিত্র ইতিহাসের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের জন্মদিন।