মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে তিন বন্ধু নীলু, সাদেক ও মনসুরকে নিয়ে আজম খান গড়ে তুলেছিলেন ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’। ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করা ব্যান্ডটি ওই বছর বিটিভিতে গায় ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ এবং ‘চার কলেমা সাক্ষী দেবে’। এই দুটি দিয়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন আজম খান ও উচ্চারণ । এরপর উচ্চারণকে সঙ্গে নিয়ে আরও বহু গান উপহার দিয়েছেন তিনি। ২০১১ সালে ৫ জুন আজম খানের মৃত্যুর পর থেমে যায় উচ্চারণ ব্যান্ডের কার্যক্রম। ১৪ বছর পর আবার নতুন উদ্যমে ফিরছে ব্যান্ড উচ্চারণ, এমনটাই জানালেন আজম খানের ছোট মেয়ে অরণী খান।
আজম খানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২২ জুন রাজধানীর এক ক্লাবে আয়োজন করা হয় ‘গুরু রিলোডেড’ নামের অনুষ্ঠান। আজম খানের ভাতিজা আরমান খান ও আদনান খানের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে দীর্ঘদিন পর পারফর্ম করে ব্যান্ড উচ্চারণ। ব্যান্ডটির বর্তমান লাইনআপে আছেন পিয়ারু খান, দুলাল, কোসেক, শিপার ও তুহিন।
সেখানেই আজম খানের পরিবারের সদস্যরা জানান, নতুন করে আবারও শুরু হচ্ছে উচ্চারণ ব্যান্ডের কার্যক্রম। আজম খানের মেয়ে অরণী খান বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যরা সব সময় চাই, আব্বুর গানগুলো সবার মাঝে বেঁচে থাকুক। তার গান যদি কেউ না গায়, না জানে তাহলে তো নতুন প্রজন্ম তাকে চিনবে না। বাবার গান নিয়ে আমরা নতুন করে পরিকল্পনা করছি। তার গড়া উচ্চারণ ব্যান্ড রিফর্ম করার কাজ চলছে’।
অরণী খান জানান, শিগগির সংবাদ সম্মেলন করে উচ্চারণ ব্যান্ডের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম জানিয়ে দেওয়া হবে। ব্যান্ডটির সঙ্গে তিনিও যুক্ত থাকতে পারেন—এমন ইঙ্গিত দিয়ে অরণী বলেন, ‘একটা সময় চিন্তা করেছিলাম, গানের জগতে আসব। আব্বুর সঙ্গেই আসার কথা ছিল। কিন্তু যে সময়টায় আমরা পরিকল্পনা করি, তার পরেই আব্বু চলে যান। আব্বুর হাত ধরে হয়তো আসতে পারিনি কিন্তু তার গান নিয়েই আসছি। উচ্চারণ ব্যান্ডের মাধ্যমে তার গানগুলো আবার নতুনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব।’
বাবার স্মৃতিচারণা করে অরণী বলেন, ‘বাবাকে নিয়ে সব সময় গর্ব বোধ করি। তিনি দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন, রক্ত ঝরিয়েছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন। মানুষের জন্য গান করেছেন। তার গানের কথাগুলো ছিল মানুষের জীবন থেকে নেওয়া। গান করে মানুষের মন জয় করেছেন, মানুষের জন্য বেঁচে ছিলেন। তিনি একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। কিন্তু আমাদের কষ্টটা হচ্ছে, উনি মরণোত্তর পেয়েছেন। এটা যদি উনি বেঁচে থাকতে পেতেন, আমাদের সামনে যদি আব্বু পুরস্কারটা নিতেন, তাহলে আনন্দটা দ্বিগুণ হতো।’