তরুণ নির্মাতা যুবরাজ শামীম। ২০১৪ সালে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘পুতুল’ দিয়ে নির্মানে আগমন। এরপর ২০১৭ সালে নির্মাণ করেন আরেকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘কন্ট্রাস্ট’। যেটি বুসানের কিডস অ্যান্ড ইয়ুথ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-সহ আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। এরপর গণ-অর্থায়নে নির্মান করেন প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আদিম’।
‘আদিম’ সিনেমা দিয়ে তিনি মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে স্পেশাল জুরি ও নেটপ্যাক পুরস্কার অর্জন করেন। এবার এই নির্মাতা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বিশ্বের সবচেয়ে সহজ সিনেমাটা বানাবেন। যে ছবিতে থাকবে না কোনো প্রযোজকের চিন্তা বা নির্দিষ্ট সময়ে ছবি শেষ করার তাড়া। নিজেই এ জন্য একটি মুঠোফোন নিয়ে প্রকৃতির মধ্যে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। পরিচালনার পাশাপাশি এ সিনেমার প্রধান চরিত্রেও অভিনয় করছেন তিনি। সিনেমাটির নাম ‘এক ঋতুর অনন্তকাল’।
সিনেমাটি যুবরাজের চতুর্থ সিনেমা। সিনেমাটির শুটিং করছেন গাজীপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। মন চাইলেই মুঠোফোন নিয়ে গল্প অনুযায়ী ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যান। যুবরাজ বলেন, ‘বিশ্বের প্রত্যেক পরিচালকের আলাদা দর্শন আছে। আমি আমার মতো করে সে পথই খুঁজে নিয়েছি। স্বাধীনভাবে কাজ থেকে খাঁটি আনন্দ পাচ্ছি কি না, সেটা বিবেচ্য। আর্ট মেকিং প্রসেসটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোন টেকনোলজিতে কী শুটিং করছি, আদৌ কেউ তা দেখবে কি না, কিছু হচ্ছে কি না, এ ভাবনা আমাকে তাড়িত করে না। সব সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে গিয়ে সিনেমা বানাব। পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ সিনেমাটা আমি বানাব’।
এই নির্মাতা মনে করেন, ‘শিল্পী যা করেন, তা-ই শিল্প। আলাদা করে শিল্প বলে কিছু নেই। আর নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একজন মানুষ শিল্পী হয়ে ওঠেন। একেকজন শিল্পীর ভ্রমণ একেক রকম।’ তিনি বলেন, ‘এবারের সিনেমার মধ্য দিয়ে সেই স্বাধীনতা পেয়েছি। আমি এখন শিল্পের আলটিমেট স্বাধীনতা অনুভব করছি, যা এর আগে কোনো কাজে অনুভব করিনি। আমার কাছে স্বাধীনতাই জীবনের আলটিমেট ভ্যালু।’
‘আদিম’-এর পর দ্বিতীয় সিনেমা ‘অতল’-এর কাজ শেষ করেছেন। সেই সিনেমায়ও একটি চরিত্রকে প্রধান করে গল্প তুলে ধরেছেন। ফটোগ্রাফি করার ক্যামেরায় একটিমাত্র লেন্স দিয়ে শুটিং করেছেন। চিত্রগ্রাহক নিজেই ছিলেন মূল অভিনেতা। ক্যামেরার পেছনে শুধু ছিলেন যুবরাজ। এই পরিচালক বলেন, ‘সিনেমাটিতে একটা শিল্পীর জার্নির গল্প তুলে ধরেছি। কীভাবে সিনেমার মধ্যে আমার বসবাস, সিনেমা আমাকে জীবনের কতটা প্রশান্তি দিচ্ছে, এসব বিষয়। এখানেও শুরুতে ভেবেছিলাম, আমিই অভিনয় করব। পরে মনে হলো, আমি ভাবনার সঙ্গে যাচ্ছি না। তখন নাঈম তুষার ভাইকে প্রস্তাব দিই। তিনি শুনে রাজি হয়ে যান। আমরা একটি স্কুটার নিয়ে ঘুরে ঘুরে প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে শুটিং করেছি।’
সব মিলিয়ে সিনেমাটিতে খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। দুই বছর ধরে, বিভিন্ন ঋতুতে ২০ দিন শুটিং করেছেন। সিনেমায় সময়কে ধরতে ভোর ও গোধূলিলগ্নকে বেছে নিয়েছেন। দুটি সময়ের আলাদা অর্থ রয়েছে।
যুবরাজ জানালেন, অতল থেকেই তার কাছে মনে হয়েছে, এক ঋতুর অনন্তকাল সিনেমায় তিনি অভিনয় করতে পারেন। সেভাবেই এখন শুটিং চলছে। শুটিং শেষে নিজেই সিনেমাটির সম্পাদনাসহ পোস্টের বাকি কাজ করবেন।
সিনেমাগুলো নিয়ে খুবই আশাবাদী যুবরাজ। তার প্রথম সিনেমার চেয়েও এগুলো ভিন্নতর কিছু হবে। ‘অতল বিশ্বের প্রথম সারির একটি উৎসবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউরোপের আরও অনেক উৎসবে জমা দিয়ে ভালো সাড়া পেয়েছি। ইতিমধ্যে কয়েকটি উৎসব থেকে প্রতিযোগিতায় থাকার কনফার্মেশন পেয়েছি। আমি চাই, ভালো একটি চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটির প্রিমিয়ার হোক। যে কারণে একটু সময় নিচ্ছি,’ বলেন তিনি।
যুবরাজ শামীম চতুর্থ সিনেমার শুটিংয়ের পাশাপাশি তৃতীয় সিনেমা ‘গন্ধম’ -এর শুটিং-পরবর্তী কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। আছে তার নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও, যার নাম দরবার শরিফ।