Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
বুধবার, জুন ১৮, ২০২৫

নেটফ্লিক্সে ওসামা বিন লাদেনকে খোঁজা ও হত্যা নিয়ে তথ্যচিত্র  

আমেরিকার ওয়ার অন টেরর যুগের অন্যতম আলোচিত ও রহস্যময় ঘটনা আবর্তিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে কেন্দ্র করে। বছরের পর বছর ধরে তাকে ধরার চেষ্টা করে গেছে আমেরিকা। দীর্ঘ এক দশকের ব্যর্থতার পর একদিন ঠিকই সফল হয় আমেরিকা। এক গোপন অপারেশনের মাধ্যমে হত্যা করা লাদেনকে। তাকে খুঁজে পাওয়া আর হত্যা করা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে এক তথ্যচিত্র। উঠে এসেছে অনেক অজানা কথা।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির অধিকারী গোয়েন্দা সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছিল। দশকব্যাপী এই ব্যর্থতার পরে একটি ‘ক্লু’ পায় সিআইএ। সেই ক্লু ধরেই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি নেতার খোঁজ পেয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। তারপর অত্যন্ত গোপন অভিযানের মাধ্যমে হত্যা করা হয় লাদেনকে।

অ্যাবোটাবাদের এই বাড়িটিতে ছিলেন ওসামা বিন লাদেন

আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা প্রধানকে হত্যা করার ঘটনার বিস্তারিত উঠে এসেছে নেটফ্লিক্সের নতুন এক তথ্যচিত্রে। গত মাসে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় তিন পর্বের তথ্যচিত্র ‘আমেরিকান ম্যানহান্ট: ওসামা বিন লাদেন’।

 ড্যানিয়েল সিভান ও মোর লৌসি এটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন। তথ্যচিত্রটির পর্ব তিনটির শিরোনাম যথাক্রমে ‘আ নিউ কাইন্ড অব এনিমি’, ‘গ্লাভস আর অফ’ ও ‘অপারেশন নেপচুন স্পিয়ার’।

এই তথ্যচিত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট অনেক গুরুত্বপুর্ণ কর্মকর্তার জবানি আছে এতে, যা আগে কখনো কোনো তথ্যচিত্রে আসেনি।

নাইনইলেভেন

সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের (টুইন টাওয়ার) উত্তর টাওয়ারে ঢুকে পড়ে একটি উড়োজাহাজ। সকাল ৯টা ৩ মিনিটে দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত হানে দ্বিতীয় উড়োজাহাজ। সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে তৃতীয় উড়োজাহাজটি দিয়ে হামলা চালানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনে। আর চতুর্থ উড়োজাহাজটির সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু ছিল মার্কিন ক্যাপিটল ভবন। কিন্তু এই উড়োজাহাজের যাত্রীরা জঙ্গিদের রুখে দিয়েছিলেন। সকাল ১০টা ৩ মিনিটে উড়োজাহাজটি পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়। নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন প্রায় তিন হাজার মানুষ।

শুরুতে সিআইএ নিশ্চিতভাবে জানত না, কে বা কারা এই সন্ত্রাসী হামলার পেছনে রয়েছে। পরে তারা উড়োজাহাজের যাত্রীদের তালিকাসহ অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়, এই হামলার পেছনে রয়েছে আল-কায়েদা। বুশকে এই তথ্য জানালে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ঘোষণা দেন, এই সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে নির্মূল করা হবে।

নতুন দিগন্তের শুরু

২০০৯ সালে বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি ওসামা বিন লাদেনকে ধরার তৎপরতা দ্বিগুণ করার নির্দেশ দেন। তিনি সিআইএর পরিচালক লিওন পেনেট্টাকে জানিয়ে দেন, ওসামা বিন লাদেনকে ধরাই হবে তার (পেনেট্টা) কাজের অগ্রাধিকার।

পেনেট্টা একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেন, যেটি শুধু ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে পাওয়া নিয়েই কাজ করছিল। তারা বিশেষভাবে মনোযোগ দেয় কুরিয়ার (বাহক) শনাক্তকরণে। ওসামা বিন লাদেনের ভিডিওগুলো কীভাবে সংবাদমাধ্যমে যায়, কে তা পৌঁছে দেয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করতে করতে মার্কিন গোয়েন্দারা আবু আহমেদ নামের এক কুরিয়ারকে শনাক্ত করেন।

২০১০ সালের গ্রীষ্মে মার্কিন গোয়েন্দাদের জন্য একটা ‘ব্রেকথ্রু মোমেন্ট’ আসে। ফোনকল ট্র্যাক করে পাকিস্তানের পেশোয়ারে আবু আহমেদের অবস্থান শনাক্ত হয়। তিনি পেশোয়ার থেকে গাড়িতে করে অ্যাবোটাবাদ গেলে তাকে অনুসরণ করেন মার্কিন গোয়েন্দারা। আবু আহমেদ গাড়ি নিয়ে অ্যাবোটাবাদের একটি বাড়ির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন।

মার্কিন গোয়েন্দারা বিভিন্ন উপায়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন। বিশেষ করে তারা লক্ষ করেন, বাড়িটি থেকে বাইরে ময়লা-আবর্জনা আসে না, যা অনেকটা অস্বাভাবিক।

মার্কিন গোয়েন্দারা আলামতসহ নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখতে পান, আবু আহমেদ ও তার ভাইয়ের পরিবার ছাড়াও তৃতীয় একটি পরিবার বাড়িটিতে আছে। কিন্তু এই তৃতীয় পরিবারটির সদস্যরা কখনো বাড়ির বাইরে আসেন না।

ওসামার অবয়ব

স্যাটেলাইট ও নজরদারি ভিডিওতে মার্কিন গোয়েন্দারা দেখতে পান, কিছুটা বয়স্ক এক ব্যক্তি বাড়িটির আঙিনায় নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করছেন। তারা তার ছায়ার দৈর্ঘ্য পরিমাপ করেন, তা ওসামা বিন লাদেনের উচ্চতার সঙ্গে তুলনা করেন। এ ছাড়া হাঁটার ভঙ্গি, শরীরের গঠনসহ অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে তারা ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে সাদৃশ্য পান।

যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট স্পেশাল অপারেশনস কমান্ডের অ্যাডমিরাল উইলিয়াম ম্যাকরাভিনকে অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঠিক হয় অভিযান চালাবে বিশেষ বাহিনী নেভি সিলের অত্যন্ত দক্ষ ও গোপনীয় ইউনিট টিম-৬। অভিযানের জন্য সেরা সদস্যদের বাছাই করা হয়। কঠোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

‘অপারেশন নেপচুন স্পিয়ার

পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের জালালাবাদ ছিল এই অভিযান পরিচালনার প্রধান ঘাঁটি। অ্যাবোটাবাদে পাকিস্তানের মিলিটারি একাডেমিসহ অন্য সামরিক স্থাপনা থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অভিযানটি ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর। ওবামা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, অভিযানের ব্যাপারে পাকিস্তানকে আগাম জানাবেন না। কারণ, আল-কায়েদার কাছে অভিযানের তথ্য পাচার হয়ে যেতে পারে।

পাকিস্তানের রাডার–ব্যবস্থা কোথায় আছে, রাডারগুলো কী রকম, সেগুলো কীভাবে ফাঁকি দেওয়া যায়, তা বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্র। অভিযানের জন্য বিশেষ ধরনের নতুন হেলিকপ্টার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়, যা সহজে রাডারে ধরা পড়ে না।

অভিযানের সাংকেতিক নাম রাখা হয় ‘অপারেশন নেপচুন স্পিয়ার’। আর ওসামা বিন লাদেনের সাংকেতিক নাম দেওয়া ‘জ্যারোনিমো’।

অভিযানের ২৪ ঘণ্টা আগে ছিল হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্স ডিনার। সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত এই বার্ষিক অনুষ্ঠানে ওবামা এমনভাবে হাস্যরস করেন যে কেউ বুঝতেই পারেনি কী ঘটতে চলছে।

২০১১ সালের ১ মে রাতে হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে ওবামাসহ তার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা জড়ো হন। তারা সবাই ছিলেন উদ্বিগ্ন।

দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে (২ মে প্রথম প্রহর) হেলিকপ্টারে করে অভিযানিক দল পৌঁছে যায় অ্যাবোটাবাদের বাড়িটিতে। তিনতলা বাড়িটিতে প্রবেশ করে প্রথমে আবু আহমেদকে গুলি করে হত্যা করে নেভি সিল টিম-৬। এরপর দ্বিতীয় তলায় অভিযান শেষে টিম-৬ পৌঁছে যায় তৃতীয় তলা। সেখানেই ওসামা বিন লাদেনকে পাওয়া যায়। তিনি আত্মসমর্পণ না করায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

মূল অভিযানের মিনিট বিশেকের মাথায় গ্রাউন্ড ফোর্স কমান্ডার তাঁর রেডিও যোগাযোগমাধ্যমে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার খবর পাঠান। হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমের নীরবতা ভেঙে ওবামা বলে ওঠেন, ‘উই গট হিম।’

ওসামা বিন লাদেনের মরদেহ নিয়ে হেলিকপ্টারে করে রওনা দেয় নেভি সিল টিম-৬। ফেরার সময় মার্কিন অভিযানিক দলের উপস্থিতি টের পায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। আকাশে ছুটে যায় পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো বিপদ ছাড়াই অভিযানিক দল জালালাবাদে ফিরতে সক্ষম হয়।

অভিযান সফল। সিচুয়েশন রুমে থাকা ওবামাসহ সবার মধ্যে নেমে আসে স্বস্তি। গভীর রাতে ওবামা টেলিভিশনে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেন, অভিযান চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়েছে। জাস্টিস হ্যাজ বিন ডান।

ওসামা বিন লাদেনের মরদেহ কী করা হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন ওবামা। শেষে তার মরদেহ সাগরে সমাহিত করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ওসামা বিন লাদেন অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।

এই পুরো ঘটনা নিয়েই তৈরি করা হয়েছে তিন পর্বের তথ্যচিত্র (ডকুমেন্টারি) ‘আমেরিকান ম্যানহান্ট: ওসামা বিন লাদেন’।

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

বিএনপি করেন বলে নির্যাতিত অভিনেত্রী রিনা খান

ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় খল অভিনেত্রী রিনা বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে জুলুমের শিকার হয়েছেন বলে জানান। তার বড়…

‘তাণ্ডব’ পাইরেসির এক নাম্বার আসামী গ্রেপ্তার

ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত শাকিব খানের ‘তান্ডব’ প্রেক্ষাগৃহে চলছে বেশ দাপটের সঙ্গে। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহ ছাড়াও মুভিটির…
0
Share