ঈদে মুক্তি পাওয়া ছয়টি সিনেমা জয় করে নিয়েছে দর্শকদের মন। দর্শকদের পাশাপাশি সিনেমাগুলো নজর কেড়েছে সিনেমাবোদ্ধা, অভিনেতা- অভিনেত্রী এমনকি পরিচালকদেরও। ঈদের ছবি ‘বরবাদ’ ‘দাগি’ ‘জংলি’ ‘চক্কর ৩০২’, ‘জিন ৩’ ও ‘অন্তরাত্মা’ নিয়ে কি বলছেন শোবিজ জগতের মানুষেরা। চলুন দেখে নেয়া যাক।
বরবাদ সিনেমার পরিচালক মেহেদি হাসান হৃদয়, জংলি সিনেমা দেখার পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ অসম্ভব ভালো লেগেছে, সত্যি সুন্দর একটা সিনেমা দেখলাম অনেকদিন পর মনে হল। সিনেমা দেখতে দেখতে কখন যে ইমোশনাল হয়ে গেছি, আসলে বলার মতো না। জংলির পরিচালককে উল্লেখ করে নির্মাতা বলেন, অনেক সুন্দর একটা সিনেমা বানাইছেন, অসম্ভব সুন্দর একটা সিনেমা, খুবই ভালো লেগেছে। সবাই ভালো করছে, (হাসি), বিশেষ করে সিয়াম ভাইকে একদম আলাদা করে দেখেছি, দিঘীকে, বুবলী আপুকে, বলার মতো না, অসম্ভব ভালো করছে। গল্পের সাথে চরিত্রের কোথাও ব্যাঘাত ঘটে নাই।‘
বরবাদ সিনেমা দেখে কাহিনিকার ও নির্মাতা ছটকু আহমেদ বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত ঈদের একটাই ছবি দেখেছি’ বরবাদ’। শাকিব খানের জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের ছবি এটি। দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম’।
তিনি আরো বলেন, ‘সাধারণ গল্পের অসাধারণ নির্মাণ ‘বরবাদ’। ঈদের দিন মধুমিতা সিনেমা হলে ম্যাটিনি শোতে শো ছিল হাউসফুল। প্রযোজক সুমন পারভেজ কালোবাজারে ৪০০ টাকা করে টিকিট কেটে ছবিটি দেখিয়েছে আমাকে। মিশা সওদাগর যে কত শক্তিশালী অভিনেতা, সেটা এই ছবিতেও বোঝা গেছে’।
আর ইধিকা পাল, যিশু সেনগুপ্তসহ—সব দেশি-বিদেশি শিল্পী দারুণ অভিনয় করেছেন। আবহসংগীতেরও জবাব নেই। চিত্রনাট্য ফাটাফাটি। পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয় নিজের প্রথম ছবিতেই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। এককথায় বলব, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ব্যবসায় ‘বরবাদ’ একটি দারুণ সফল ছবি’।
ঈদের সিনেমা দেখেছেন নির্মাতা রায়হান রাফীও। রাফি বলেন, ‘‘তাণ্ডব’ এর শুটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সব ছবি এখনো দেখতে পারিনি। যা দেখেছি, সব কটিই ভালো লেগেছে। ‘বরবাদ’ বড় স্কেলের ছবি, একদম গণমানুষের ছবি। শাকিব খান ভাই আগুন ছড়িয়েছেন সিনেমা হলে, সবাই মিলে উৎসবমুখর পরিবেশে দেখার মতো পয়সা উসুল ছবি। দাগি নিয়ে বলেন, ‘দাগি’ সত্যিকার অর্থেই দাগ কেটেছে মনে, ভীষণ আবেগপ্রবণ সিনেমা।
আফরান নিশো ভাই, তমা মির্জা ভীষণ ভালো অভিনয় করেছেন। এছাড়াও বলেন, ‘জংলি’তে সিয়াম খুবই ভালো করেছে, নিজেকে ভাঙার চেষ্টা করেছে। এত পরিণত অভিনয় করেছে, যা অকল্পনীয়। সবচেয়ে বড় কথা, দর্শক ছবিগুলো দারুণ উপভোগ করছে। মাল্টিপ্লেক্সে উপচেপড়া ভিড় আমাদের উৎসাহ বাড়িয়েছে। এবারের ঈদের ছবির নির্মাতারা সবাই আমার খুব কাছের মানুষ। তাদের এই সাফল্য আমায় আনন্দিত করেছে’।
ঈদের কয়েকটি সিনেমা দেখেছেন নির্মাতা হিমেল আশরাফ। তিনি বলেন, ‘তিনটি ছবি দেখেছি—’বরবাদ’, ‘দাগি’ ও ‘জংলি’। আমি গল্পনির্ভর ছবি পছন্দ করি, তাই দেখার সময় গল্পের বৈচিত্র্যতা খুঁজেছিলাম। তিনটিতেই ভিন্ন ভিন্ন গল্প পেয়েছি, তাতে আমি তৃপ্ত।
নির্মাতা বলেন ‘বরবাদ’ দেখে মনে হয়েছে, মাস পিপলের জন্য বানানো। সিনেমা মানেই লার্জার দ্যান লাইফ, এ ছবি দেখে সেটা বোঝা যায়। কেউ কেউ গল্পহীন ছবি বললেও আমার এতে আপত্তি আছে। শাকিব খান দারুণ করেছেন, ইধিকা পালও দারুণ সুযোগ পেয়েছেন। তবে এই ছবি কোনোভাবেই শিশুদের দেখার উপযুক্ত নয়।
বরবাদের সার্টিফিকেশন নিয়ে নির্মাতা বলেন, ‘সার্টিফিকেশন বোর্ড কিভাবে অ্যাডাল্ট সার্টিফিকেট না দিয়ে সাধারণ সার্টিফিকেট দিয়েছে আমার বোধগম্য হয়নি। পরিচালক হৃদয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়নি, আমার ধারণা আনকাট সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য যিশু সেনগুপ্তের অনেক দৃশ্য কেটে দিয়েছে। নইলে এমন শক্তিশালী ভিলেনের সমাপ্তি এমন হতে পারে না’।
এছাড়াও তিনি বলেন, ‘দাগি’ অসম্ভব ভালো গল্পের ছবি। শিহাব শাহীন ভাই সত্যিকারের গল্পকথক, নিশো ভাই নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। এত দারুণ অভিনয়, চোখে জল এনে দেয়। এম রাহিমের ‘জংলি’ও ভালো লেগেছে, সিয়াম দারুণ করেছে। তবে আমার মনে হয়েছে ছবির মধ্যভাগে চিত্রনাট্য ধীরগতির, এই অংশে গতিশীলতা থাকলে ছবিটা আরো উপভোগ্য হতো। যদিও এর সুন্দর সমাপ্তি সব পুষিয়ে দিয়েছে। এবারের ঈদের সব ছবির গানই ভালো হয়েছে। এ কথা সত্য, বিগত দুই ঈদের মতো জনপ্রিয়তা পায়নি। খুব সম্ভবত পর পর সব ছবির গান চলে আসায় এমনটা হয়েছে’।