২ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় ঘটে গেছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। দেশনাটক দলের প্রদর্শনী চলার সময়ে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নাটক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। ৩ নভেম্বর ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে সেই ঘটনার প্রকৃত কারণ জানালেন তিনি।
জামিল বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ২২ জায়গার শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা হয়েছে। সেসব আমার মাথায় ছিল। ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে দর্শক ছিল। উত্তেজিত কেউ গিয়ে যদি দর্শকদের আক্রমণ করে বসে সেই শঙ্কা ছিল। দর্শকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা প্রদর্শনী বন্ধ করি। আমি ভেতরে গিয়ে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।’
ঘটনাটি প্রসঙ্গে জামিল আহমেদ বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শিল্পকলার আয়োজনে যাত্রা উৎসব চলছে। আমি এবং নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির সেখানে ছিলাম। নাট্যশালার সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে শুনে আমি সেখানে যাই। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলি। তারা বলেন, এহসানুল আজিজ বাবু স্বৈরাচারের দোসর। তার নাট্যদলের প্রদর্শনী করতে দেবে না। আমি তাদের বুঝিয়েছি, দেশ নাটকের জনা বিশেক সদস্যও জুলাই গণঅভ্যুথানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধও হয়েছেন।’
গেলো এক মাসের প্রসঙ্গ তুলে তিনি আরও বলেন, ‘গত এক মাসে এখানে এমন অনেক নাটকের দল নাটক করেছে, যাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আমি এবং আমার সহকর্মীরা বলেছি, তাদের নাটক করতে দিতে হবে। দর্শক তাদের নাটক দেখে বিবেচনা করবে, তাদের নাটক দর্শক দেখবে কি না। তারা কিন্তু নাটক করেছে। কোনো সমস্যা হয়নি। দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরাণ’ নাটক নিয়েও আপত্তি ছিল না। উত্তেজিত জনতার আপত্তি কেবল একজন ব্যক্তিকে নিয়ে। পরে তারা দেশ নাটকের প্রদর্শনীও বন্ধের দাবি তোলেন।’
প্রসঙ্গত, দেশ নাটকের সিনিয়র সদস্য এহসানুল আজিজ বাবু ছাত্র আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনের বিপক্ষে সোচ্চার ছিলেন। এদিকে ১৭ অক্টোবর বাবু তার ফেসবুকে প্রকাশিত একটি পোস্টে লেখেন, ‘আসুন আমরা সবাই এই দেশকে বাঁচাই, জয় বাংলা বলে এই বাংলাদেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।’ পোস্টটির সাথে একটি ছবিও প্রকাশ করেন বাবু। ছবিটিতে দেখা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের ছবি ‘এডিট করে জিন্নাহ টুপি পরানো হয়েছে’। ঐ পোস্টটি ঘিরেই কিছু মানুষ জাতীয় নাট্যশালার সামনে আসেন বলে জামিল আহমেদের ভাষ্য।
পোস্টের প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, ‘যে পোস্ট করা হয়েছিল, সেটি অত্যন্ত নিম্নরুচির। এটি বাবুকেও আমি বলেছি। আমি তাকে বলেছি, এভাবে নিম্নরুচির পোস্ট ফেসবুকে না লিখে যুক্তি দিয়ে নাটক করুন। নাটকের মধ্য দিয়ে সরকারের সমালোচনা করুন।’
সব মিলিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা এহসানুল আজিজ বাবুর উপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন। অতঃপর দেশ নাটকের শো বন্ধের দাবিতে ২ নভেম্বর বিকেল থেকেই নাট্যশালার মূল ফটকের বাহিরে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীরা। পরবর্তীতে, বাহিরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় এবং মব সৃষ্টি হওয়ার কথা জানিয়ে জামিল আহমেদ নাটক বন্ধ করে দিতে বলেন।