‘আলো আসবেই’ গ্রুপের চারজন অ্যাডমিনের মধ্যে একজন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি। অবশেষে নিজের ভুল বুঝতে পেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ এক পোস্ট করেছেন তিনি।
৭ সেপ্টেম্বর, শনিবার নিজের ফেসবুকে অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি লেখেন, ‘আমি এই মুহূর্তে যা লিখতে যাচ্ছি, আমি জানি, তার জন্য আমি গালি ও ট্রলের সম্মুখীন হতে পারি। তবুও আমি আমার পজিশন ক্লিয়ার করতে চাই। আমি প্রথমেই বলে নিতে চাই যে, আমি একটা রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। এর কারণ আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৬৫ সালে বাবা মালিবাগ আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক ছিলেন, তাই আমার বাড়িতে সবসময় এই পরিবেশই ছিল যেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আমি আমার নিজের পক্ষ ভেবেছি। আমার এই পক্ষপাতিত্ব যে ভুল তাও আমি মনে করি না। আমি মনে করি, আমি আমার অংশগ্রহণ ঠিক বিবেচনা করেই করেছি। কিন্তু এই দলের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও আমার নিজের কিছু বিচার-বিবেচনা আছে। আপনারা সকলেই জানেন কেউ কোনো দলের কর্মী হিসাবে কাজ করে, তখন তার সেই দলের নেতাদের কথামতো কাজ করতে হয়। সেসব দলীয় নির্দেশনার বিপক্ষে গিয়ে কাজ করার পরিস্থিতি থাকে না। এবং আমি তা করতেও চাই না দলের কর্মী হিসাবে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘তাই বলে এই হত্যাকাণ্ড, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই নৃশংসতার আমি সমর্থক নই। এক মিনিটের জন্যও ছিলাম না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে বহু কর্মীই তা ছিলেন না। আমাদের অনেকেরই পজিশন নেওয়া দরকার ছিল। অনেক আগেই দরকার ছিল। আমি জানি, আপনাদের অনেকে এই কথাতেও ক্ষুব্ধ হবেন। কিন্তু আশা করি, এটা মানবেন যে, আমরা বাংলাদেশে কী ঘটছে তাও জানতে দেরি করেছি। দলীয় রাজনীতির মধ্যেও খবর ফিল্টার হয়। যার সন্তান গেছে তার অবস্থা ভেবেছি। প্রতি মুহূর্তে আমি, আমাদের কেউ কেউ, একটা পজিশন নিতে গেছি। সেসব পজিশন কারো না কারো কারণে অন্য আরেকটা পজিশন হয়ে গেছে। আমরা বিটিভিতে গেছি, শিল্পীরা সহিংসতা ও ছাত্রদের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে, করেছেনও, তবে সেটা সংবাদে তেমন করে আসেনি। কিন্তু যা এসেছে তাতে আরও ভুল বোঝার জায়গা তৈরি হয়েছে। তবে যা দেখা গেছে সেটাও ঠিক না তা আমি বলব না। আমরা হাসপাতালেও আহতদের দেখতে গেছি। আর তখনো আমি সকল কিছু বুঝে উঠতে পেরেছি তেমন না।’
শিল্পীদের গোপন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ‘আলো আসবেই’র কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছিলাম। সেখানেও আমি বলেছি যে, সকলের সঙ্গে গিয়ে আলাপ করতে হবে। এগুলো বন্ধ করা দরকার। কিন্তু ঘটনা এত দ্রুত ঘটছিল আমি যা সমর্থন করি না তা আপনাদের জানানোর সুযোগ পাইনি। তাছাড়া আমার অনেক সহকর্মীরাও এসবের ভিতরে ছিলেন, পরে হয়ত থাকেননি। তারাও আমাকে অনেক গালাগাল করেছেন। তবু আমি বলতে চাই যে, আমি আমার সহকর্মীদের জন্য অনেক কিছুই করার চেষ্টা করেছি। এখনো তাই করব। এছাড়াও আমরা আমাদের সিনিয়র সহকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পরিনি এক সঠিক দিক নির্দেশনার জন্য। সেসবও আমাকে ভাবিয়েছে।’
ট্রল ও গালির ভয়ে এতদিন মুখ খুলেননি জানিয়ে শামীমা তুষ্টি লিখেছেন, ‘আমি অনেক দেরিতে আপনাদের সামনে এসেছি। কিন্তু আমার অনুভূতি নতুন নয়। শুরু থেকেই হচ্ছিল। আমি সত্যি সত্যি ট্রল-গালির ভয়েই আমি আগে লিখিনি। অনেক ট্রল আর গালি নেওয়ার মতো মানসিক অবস্থায় ছিলাম না। এখন কিছুটা কিছুটা নিজেকে সংযত করতে পেরেছি। সহ্য করার মত ধৈর্য আশা করি আমার হবে, আপনাদের সকল কথা নেওয়ার।’
সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘সে রকম জায়গা থেকেই আমার অবস্থান আমি আপনাদের কাছে পরিস্কার করলাম। আমি সকলের মঙ্গল কামনা করছি। শহীদদের আত্মত্যাগ যেন বাংলাদেশে বিফলে না যায়, সেই প্রত্যাশা করছি।’