Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
বুধবার, অক্টোবর ১, ২০২৫

অসভ‍্যতার ডিম্ব থেকে ফুটে বের হবে নতুন অসভ‍্যতার বাচ্চা কাচ্চা

অসভ‍্যতার ডিম্ব থেকে ফুটে বের হবে নতুন অসভ‍্যতার বাচ্চা কাচ্চা
ছবি: আফজাল হোসেন

অসভ‍্যতার ডিম্ব থেকে ফুটে বের হবে নতুন অসভ‍্যতার বাচ্চা কাচ্চা

বাংলাদেশের শোবিজ জগতের অন্যতম শক্তিমান ও জনপ্রিয় অভিনেতা আফজাল হোসেন। তিনি একাধারে অভিনেতা, পরিচালক, চিত্রশিল্পী এবং বিজ্ঞাপন নির্মাতা। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই অভিনেতা সম্প্রতি দেশ ও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে নিজের সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে গদ্য লিখেছেন যেখানে উঠে এসেছে নানা প্রসঙ্গ। তিনি লিখেছেন – অসভ‍্যতার ডিম্ব থেকে ফুটে বের হবে নতুন অসভ‍্যতার বাচ্চা কাচ্চা । এই শক্তিমান ও জনপ্রিয় অভিনেতা আরো কি লিখেছেন পড়ে নেয়া যাক।

“আমরা একটা কঠিন রোগে ভুগছি। রক্তে তার কারণ লেখা নেই। সে রোগ মনের। রোগ পুষতে থাকলে কি দশা হতে পারে, সবার জানা। জেনে, বুঝে রোগ লালন পালন করতে থাকবো, না নিরাময়ের কথা ভাববো?

আমরা কী ভালো কথা, ঘটনা, বিষয়ের প্রতি ততটা আকর্ষণবোধ করি- স্বাভাবিক ভাবে যতটা করা উচিৎ? উচিৎ অনুচিৎ নয়, উপভোগের দিকেই আমাদের মন। মন্দের বদলে মানুষের উজ্জ্বলতা, অসাধারণত্বে সহজে মুগ্ধ হতে পারতাম কিন্তু হতে পারি না।

আজকাল ভালো, অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো বিষয়ে আমাদের মন বসে না। ভালো কিছু বলতে ও শুনতে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। জোর আগ্রহ তৈরি হয়েছে মন্দ বলা ও শোনার প্রতি। অভ‍্যাসের এই বদল আমাদের ভয়ানক মানুষে রূপান্তরিত করছে- টের পাই না।

ভালো কিছু বলতে ও শুনতে ভালো লাগে না

দেশে অহরহ কেবল মন্দই ঘটছে- তা নয়। আনন্দের, গৌরবের, আশা জাগানিয়া কতকিছু ঘটে, ঘটছে- সেসব আমাদের মনের দরজায় এসে কড়া নাড়লে শুনেও না শোনার ভান করে থাকি, দরজা খোলার জন‍্য উঠতে ইচ্ছা করে না। সে খবর অনেকেরই জানা বলে আমাদের উদ্দেশ্যে পরিবেশিত হয়ে থাকে মন বিধ্বংসী মন্দ খবর, আলোচনা, সমালোচনা।

মন্দের গন্ধে আমরা অনেকেই জেগে উঠি। যা মন্দ, তার গন্ধ মনে সাড়া ফেলে দেয় অথচ জগত বা এই দেশ মন্দ, খারাপে ভর্তি নয়। সৃষ্টিকর্তা মানুষদের জন‍্য অনেককিছু ভালো দিয়েছেন- তিনি চেয়েছেন, ভালোর প্রতিই মানুষ বিশেষভাবে আগ্রহী হোক। মানুষ সৃষ্টিকর্তার চাওয়ার বিপরীতে হয়েছে উল্টো।

ছবি: নির্মাতার ফেসবুক

সাংঘাতিক আলোচনা অনুষ্ঠান

টেলিভিশন চ‍্যানেল আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ‍্যমে ঢু মারলে দেখা যায়, দেশ নিয়ে সাংঘাতিক সাংঘাতিক আলোচনা অনুষ্ঠান। এসবের অধিকাংশই আলোচনার চেয়ে বেশিমাত্রায় সমালোচনামূলক। অনুষ্ঠানে আলোচনা থাকে চিমটি খানেক, ধামা ভর্তি থাকে নুন ঝাল আর মশলা মাখানো সমালোচনা, মন্দ কথা। থাকে- কারণ মন ভরে আমরা অনেকে ওসবই খেতে পছন্দ করি।

রোজ আগ্রহ নিয়ে মানুষ এসব দেখতে বসে এবং রোজই ধারণা পাওয়া হয়, দেশ রসাতলে যাচ্ছে। জানা হয়, ভালো কিছু, আশা করার মতো কিছু ঘটছেই না দেশে। দায়িত্বশীল সকল মানুষ খুবই মন্দ, নানাবিধ দোষ তাদের- এসব বললে শোনা হয় মন দিয়ে। মন ডুবিয়ে শুনি, দেখি তার অর্থ দ্রুত বিশ্বাসও করে ফেলি।

অমুক মানুষটা খারাপ- এটা শোনা মাত্র মন সায় দেয়, হ‍্যাঁ খারাপ। ভালো বললে মনে উত্তেজনা, উৎসাহ জাগে না। মনে হয় না, আর একটু শুনি। ক্লান্ত লাগে, গা ম‍্যাজম‍্যাজ করে। মন্দ হচ্ছে আমাদের জন্য উত্তেজনাকর, অনুপ্রেরণা ও বিনোদনে পূর্ণ মহৌষধ।

মনে বহুকাল ধরে নান অসন্তোষ, অপ্রাপ্তির হতাশা জমে আছে। সদা উদ্বেগ আশংকা আর হতাশা জমে থাকা মন মন্দ ঘটনা গিলতে পছন্দ করে। পছন্দ করে মানুষ সম্পর্কে মন্দ কথা শুনতে ও বিশ্বাস করতে।

রোজ আমরা সাবধান, সচেতন থাকি- লবন যেনো বেশি খাওয়া না হয়। মিষ্টি খেতে ভালো লাগে অনেকের, কিন্তু বেশি খাওয়া ক্ষতিকর ভেবে, কম খাওয়ার ব‍্যাপারে সচেতন থাকি। একইভাবে মানুষ যদি রোজই মন্দের চর্চাতে অনেকটা সময় কাটায়- তাও নিশ্চয়ই শরীর ও মনের জন্য অত‍্যন্ত ক্ষতিকর।

মন্দের প্রতি আমাদের আকর্ষণ

আমরা অতি আগ্রহ নিয়ে প্রায় প্রত‍্যহই যা শুনি এবং দেখে থাকি, সবই কি দেশপ্রেমের তাড়নায় দেখি, শুনি? উত্তর হচ্ছে- না। উদ্বেগ বাড়াতে পারার মতো ঘটনার প্রতি, মসলাদার মন্দের প্রতি আমাদের অতি আকর্ষণ। যে মানুষ যতো সংকটের কথা বলতে পারবে, তাকে ততো যোগ‍্য মনে হয়। যে বেশী বিরক্ত, ক্রুদ্ধ ও অন‍্যের প্রতি অবমাননাসূচক বাক‍্যবান নিক্ষেপ করতে পারে- সে মানুষকেই সাহসী, মহান ও কৃতি বলে মনে হয়।

যদি ভালো কথার প্রতি টান থাকতো, ভালো বিষয়ের প্রতি যদি আগ্রহ আকর্ষণ থাকতো- এতো বেশি রাজনীতি নিয়ে কচলা কচলি হতো না। পরিস্থিতি দেখে শুনে মনে হয়, এদেশের মানুষ তরকারির বদলে রাজনীতি মেখে ভাত খায়। গ্লাসভর্তি রাজনীতি পান করে, ঘুমায় রাজনীতির বিছানা বালিশে।

তা যদি হবে, দেশ জুড়ে জমিতে ফসল ফলায় কারা। সন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছে কারা? অসুস্থদের চিকিৎসাদান, বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো, বিদেশে গিয়ে জান কয়লা করা রোজগারের টাকা দেশে পাঠানো- নিজেরা আধাপেট খেয়ে দেশকে সম্ভাবনাময় বানানো- ইত‍্যাদি মহান কর্মসমূহ ভূত এসে করে দিয়ে যায় না।

স্বপ্নবাজ চলচ্চিত্র নির্মাতা

অন্ধকার কেটে কেটে আলোর পথ খুঁজে বের করে লেখক, শিল্পী, সৃজনশীল মানুষেরা। স্বপ্নবাজ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সামনে হোঁচট খাওয়া পথ, তবু তারা পথ বদলায় না। প্রত‍্যন্ত অন্চলে বাস করা কোনো মেয়ে দেশ সেরা ফুটবলার হবে স্বপ্ন দেখে। গ্রাম, সমাজ, পরিবার – সকলেই মেয়ের এ ইচ্ছাকে অসভ‍্যতা, বেলেল্লাপনা বিবেচনা করে। সকল কিছুই বিরুদ্ধে তবু স্বপ্ন থেকে বিচ‍্যুত হয়না অবহেলায়, অসহায়ত্বে বেড়ে ওঠা সাধারণ সে মেয়ে বা মেয়েরা।

প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে একদিন তারা তাদের অসাধারণত্ব প্রদর্শন করে দেশকে গর্বিত বানায়। দেশের মানুষ বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের কলায়, কৃতিত্বে মুগ্ধ, বিস্মিত হয়। পৃথিবী অবাক হয়ে বাংলাদেশের গুন গায়। 

আমরা প্রত‍্যহ থাকি পরচর্চা, পরনিন্দা নিয়ে। রাজনীতি পরনিন্দা আর অসভ‍্যতা লালন পালন করে এবং বলে- দেশ ও মানুষের ভালো চায়। আমরা অন‍্য ঘরানার নই- রয়েছি একই ঘোরের মধ‍্যে। মন প্রান ভরে শুনতে চাই- মন্দ কথা, পরচর্চা পরনিন্দা এবং মনে করি, এভাবেই দেশের ভালো হবে।

অসভ্যতায় “তা” দিয়ে দিয়ে আশা করে বসে আছি, সুন্দর কিছু ফুটবে। কাকের বাসায় কোকিল ডিম পেড়ে যায়, কোকিলের ডিম থেকে কী কাকের বাচ্চা ফোটে? তেমনি- যতই আশা করে বসে থাকি, দিন বা ভাগ্য কোনটাই বদলাবে না। অসভ‍্যতার ডিম্ব থেকে ফুটে বের হবে নতুন অসভ‍্যতার বাচ্চা কাচ্চা।“

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

আপন ভাইয়ের সাথে ছবি দিয়ে বিপদে কেয়া পায়েল    

বিপাকে পড়েছেন কেয়া পায়েল দেশের ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী কেয়া পায়েল। কাজের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ…

আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন থালাপতি বিজয়

তামিলাগা ভেটরি কাজাগাম অতীত জীবনে থালাপতি বিজয় এত বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি কখনোই হয়নি। অভিনয় থেকে রাজনীতিতে পা…

‘বান্ধব’ ছবির গল্প চুরির অভিযোগ অস্বীকার নির্মাতার

চুরির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে ‘বান্ধব’ আগামী ৩ অক্টোবর দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে সুজন বড়ুয়া পরিচালিত…
Exit mobile version