Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
শুক্রবার, জুন ২৮, ২০২৪
Your Image

‘হীরামান্ডি’ নিয়ে যত কথা

হীরামান্ডি নিয়ে যত কথা । ছবি: গুগল

২০২৪ সালে সঞ্জয় লীলা বানসালীর ওটিটিতে অভিষেক হল ‘হীরামান্ডি – দ্যা ডায়ামন্ড বাজার’ সিরিজ দিয়ে। এখন অবধি নেটফ্লিক্সে রাজত্ব করছে এই সিরিজ। নারীদের জয়জয়কার তোলা এই সিরিজের মুখ্য চরিত্রে আছেন সকল নারী। মনিষা কৈরালা, সোনাক্ষী সিনহা, ফরিদা জালাল, রিচা চাড্ডা, অদিতি রাও হায়দারি, শারমিন সেগাল, সানজিদা শেখসহ আরও অনেকে।

‘হীরামান্ডি’ সিরিজের মুখ্য চরিত্রে থাকা নারীরা । ছবি: ইন্ডিয়া টিভি নিউজ

কিন্তু এই হীরামান্ডির আসল চরিত্র হলো শাহী মহল। যেখান থেকে এই চিত্রনাট্যের সূচনা। রেহানা নাকী মালিকাজান, কে হবে এই মহলের মালিক-জান, এই টানাপড়েন থেকেই সিরিজটি শুরু। আট পর্বে গিয়ে তবেই শেষ।

আট পর্বে সিরিজ শেষ হলেও শেষ হয়নি হীরামান্ডি নিয়ে জল্পনা কল্পনা! আসলেই কী আছে এই হীরামান্ডি?

লোকমুখে ছড়াতে ছড়াতে যেভাবে গল্প হয় অর্ধেক সত্য অর্ধেক কল্পনা- তেমনই এই সিরিজের গল্পও খানিকটা পরিচালকের চিন্তার প্রতিচ্ছবি হলেও হীরামান্ডি আসলেই পৃথিবীর বুকে আছে!

হীরামান্ডির বর্তমান অবস্থা । ছবি: গুগল

স্বপ্নের ও স্বপ্নীল হীরামান্ডি! জানা গেছে অবিভক্ত ভারত-পাকিস্তানের লাহোরে ছিল এই হীরামান্ডি। অর্থাৎ হীরার বাজার। তবে হীরা সেখানে পাওয়া যেতনা। কিন্তু মান্ডি তথা বাজার বসতো ঠিকই। তাহলে কেন এর নাম হীরা হলো?

ভারতীয় লেখক খুশওয়ান্ত সিং লিখেছেন, ‘মহারাজা রঞ্জিত সিংয়ের শাসনামলে এই জেলার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী হীরা সিং-এর নামানুসারে হীরামান্ডির নামকরণ করা হয়েছিল। তার আগে, মুঘলদের রাজকীয় মহলের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে এটিকে শাহী মহল্লা (রয়্যাল নেবারহুড) বলা হত।’

অর্থাৎ এর সাথে আছে মুঘলদের সম্পর্কও। সেখানে আরও বলা আছে, হীরামান্ডির আরেক নাম শাহী মহল। কারণ লাহোর দূর্গের পাশেই ছিল এই শাহী মহল।

বাঈজি, মুজরা – এসব শব্দ দিয়ে এলাকার অধিবাসীরা পরিচিত থাকলেও এটি ছিল রেডজোনের মত। কেউ বলেন গেটের বাইরে দাড়িয়ে মন পছন্দ খদ্দের ধরা ছিল তাদের কাজ। আবার কেউ বলে এই রূপ স্বাধীনতার পরের।

কারণ একটা সময় হীরামান্ডি ছিল তাওয়ায়েফদের স্থান।

হীরামান্ডিতে চলছে গান বাজনা । ছবি: অ্যাবাউট দ্য পিপল

হীরামান্ডিতে গান বাজনা মুজরাই ছিল আসল। এখানকার নারীরা তাদের আচরণ, ব্যবহার, সুন্দর পোশাক, গীত ও নৃত্যশৈলী দিয়ে নবাবদের আকৃষ্ট করতো। এক এক জন নারী বেছে নিতেন তাদের পছন্দের নবাব। আর নবাবরা সেই নারী শিল্পীর ভরণ পোষনের দিকে লক্ষ্য রাখতেন। উজবেকিস্তান, আফগানস্তান থেকে শিষ্টাচার ও সৌন্দর্য মানদণ্ডে অতুলনীয় বণিকারা থাকতেন এই হীরামান্ডিতে।

যেটি এই সিরিয়ালেও দেখা গেছে। যেখানে অদিতি রাওয়ের সাথে দেখা যায় ফারদিন খানকে। ফারদিন খানের এই কামব্যাক ছিল নবাবরূপে – যে কিনা আবার ফারিদান অর্থ্যাৎ সোনাক্ষী সিনহার খপ্পড়েও পড়ে যান।

‘হীরামান্ডি’ সিরিয়ালে ফারদিন খান ও অদিতি রাও । ছবি: দ্য হিন্দু

হীরামান্ডির গল্প অনুসারে, বংশ পরম্পরায় নবাবরা এসে এক একজন তাওয়ায়েফ বেছে নেন। আবার চলেও যান। কালক্রমে নিজের বংশের পুত্র হলে তাকে নিয়ে রাজ আসনে বসিয়েছেন , আর কন্যা হলে নতুন তাওয়ায়েফ পেয়েছে শাহী মহল। মালিকাজানের ছেলে জুরাবারের মতন। ক্লাইমেক্সে দেখা যায় রিচা চাড্ডাকে ফিরিয়ে দেওয়া নবাব নিজেই মালিকাজানের পুত্র।

এসবের মাঝে হারিয়ে যায় আবারও সেই লাহোরের গল্প। নবাবদের ঘরে সম্রাজ্ঞী থাকলেও, ইতিহাস বলে হীরামান্ডির শিল্পীরাই পেতেন লাহোরের রানীর মত সম্মান। তবে স্বাধীনতার সাথে এই চিত্রনাট্যের মতন তেমন জোড়ালো সম্পর্ক ছিল কিনা তা জানা যায়নি। বরং শ্যাম বেনেগালের ‘মন্ডি’ সিনেমাতে দেখানো হয়েছে রাজনৈতিক কর্মীদের সাথে বিরোধ ঘটে এই তাওয়ায়েফদের।

‘মন্ডি’ সিনেমার পোস্টার । ছবি: আইএমডিবি

ওদিকে সঞ্জয়ও স্বীকার করেছেন, তার চিত্রনাট্যও কল্পনা আর সত্যের মিশেল। কল্পনা যেভাবে নারীদের শক্ত অবস্থানে দাড় করিয়েছে , ইতিহাস ঘেটে সেই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ সরকারের কাছের ও নিরাপদ স্থানে বিদ্রোহকারী কিন্তু আসলেও নির্ভাবনায় লুকিয়ে থাকতে পারে। আর কোনও ঐতিহাসিক গল্পেই নারীকে খুব বেশি যোদ্ধার চরিত্রে দেখা যায় না, বরং ত্যগই করতে দেখা যায়!

আসলেই কী এতো বড় বিদ্রোহের পেছনে নারীদের সক্রিয় ভুমিকা নেই?
ইতিহাস বলে, আছে!

ফিরে আসি হীরামান্ডিতে। অবাক হলেও সত্য, এখনও হীরামান্ডি টিকে আছে। ৪০০ বছর ধরে চলছে মুজরার আসর, কিন্তু জৌলুস কমেছে। নেট দুনিয়ার কারণে দুই একটা ভিডিও ছড়িযে পরে আজকাল। তবে এখন তাওয়ায়েফদের সেই ঠাটবাট হারিয়ে গিয়ে লাল-এলাকা হয়েই টিকে আছে এই অংশটি। এর আগে ‘কলঙ্ক’ সিনেমাতেও শাহীমহলের কথা উল্লেখ করা আছে।

হীরামান্ডির বর্তমান রূপ । ছবি: গুগল

ওয়েব সিরিজে দেশপ্রেম মিশিয়ে ফেলাতে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়, আরেকদিকে লাহোরে হীরামান্ডি এখনও আছে বলে সেদেশের পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়েও সমালোচনার ঝড় উঠছে বারবার।

আবার অনেকে মনে করেন, সঞ্জয় বুঝে শুনেই ওটিটির জন্য এটি করেছেন কারণ তিনিও জানতেন পাকপটভূমিতে কল্পিতসত্য এই গল্প ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক বিবেচনায় হলে ছাড়ার মত হয়তো পরিস্থিতি হতো না।

আলোচনা বা সমালোচনা যাই হোক, সেট ও গেটআপে দর্শকদের চাহিদায় উৎড়ে গেছে ‘হীরামান্ডি- দ্যা ডায়মন্ড বাজার’।

এবং প্রশ্ন তৈরি করছে বারবার- এখনও কী তবে লাহোর বাজে ঘুঙরুর ছন্দে? নাকী দেশপ্রেমের বলিদান হয়ে নারীরা আজও বেঁচে আছে শাহীমহলের ইটের গাঁথুনিতে?

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের বাংলাদেশের সিরিজে অভিষেক

বাংলাদেশে অভিষেক করতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের দর্শকপ্রিয় অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। ‘কারাগার’ খ্যাত বাংলাদেশি…
0
Share