গত ২৯ এপ্রিল রাজধানীর ভাটারা থানায় অভিনয়শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, অপু বিশ্বাস, সোহানা সাবা, নিপুণ আক্তার, জ্যোতিকা জ্যোতি, নুসরাত ফারিয়াসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আবেদন করা হয়েছে। আগেও শিল্পীদের বিরুদ্ধে এমন মামলা হয়েছে। আবারো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিয়ে জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পীরাদের মন্তব্যে যা জানা গেল।
অভিনেতা আশরাফ উদ্দিন উজ্জল গণমাধ্যমের সাথে আলাপে বললেন, ‘একজন সুনাগরিক হিসেবে আমি আইনকে শ্রদ্ধা করি। বিশ্বাস করি, যেটা সঠিক সেটাই সিদ্ধান্ত নেবে আইন। যাদের নামে এই মামলা হয়েছে, তারা আইনি প্রক্রিয়াতে এগোবেন। এখানে আমার তো ব্যক্তিগতভাবে বলার কিছু নেই।
তারা অন্যায় না করলে তো অপরাধী প্রমাণিত হবেন না। তাহলে ভয় কিসের? সংস্কৃতি অঙ্গনে এই মামলা প্রভাব ফেলবে বলেও আমার মনে হয় না। বাংলাদেশের শোবিজ এতটা ছোট নয় যে কাজ বন্ধ হয়ে যাবে ভেবে কোনো অপরাধীকে সাজা প্রদান করা যাবে না বা গ্রেপ্তার করা যাবে না। আমার মনে হয়, আইনের প্রতি সবারই শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।
আইনকে তার গতিতেই চলতে দেওয়া উচিত। বিগত দিনে কি কোনো শিল্পী গ্রেপ্তার হননি? তারা অপরাধী প্রমাণিত হলে সাজাও হয়েছে। এদের বেলায়ও সেটা হবে। এখানে আবেগ দেখানোর কিছু নেই বা আবেগ দেখানোর জায়গাও না’।
মামলা প্রসঙ্গে কথা বলছেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে এতজন অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়াটা আশ্চর্যজনক! সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। কিছুটা অবাক হয়েছি শোনার পর। তবে আইন তার নিজের মতো করেই কাজ করবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে অপরাধীরা সাজা পাবেন।
এখানে তো বলার কিছু থাকে না। তবে এই ১৭ জন শিল্পী যদি গ্রেপ্তার হন তাহলে সংস্কৃতি অঙ্গনে অবশ্যই প্রভাব ফেলবে। একটা নেতিবাচক দিক হয়ে রইবে। জানি না এটা নিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘ কোনো প্রতিবাদ জানাবে কি না! আমাদের (মঞ্চ) কারো সঙ্গে এখনো বিষয়টি নিয়ে কথা হয়নি। হলে বলতে পারব কোনো পদক্ষেপ আছে কি না। এতগুলো ঢালাওভাবে দেওয়া মামলার ব্যাপারে উপদেষ্টারাও কিছু ভাবছেন কি না সেটাও জানি না। কেউ যদি অপরাধ করেন তাহলে অবশ্যই তার বিচার হবে। আমি অপরাধীর পক্ষে নই। তবে অহেতুক হয়রানি যেন কারো করা না হয় সেটাই চাই’।
শোবিজ তারকাদের মামলা বিষয়ে কথা বলেছেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি আজাদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের একের পর এক মামলা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এই মামলা স্পষ্ট করেছে যে এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং হয়রানিমূলক। রাষ্ট্রকে একা রুখতে হবে। নইলে ২৪-এর যে স্পিরিট সেটা নষ্ট হবে। সবাইকে একসঙ্গে দল-মত-নির্বিশেষে দেশের কল্যাণে নিয়োজিত করতে হলে অবশ্যই ভেদাভেদ করা যাবে না। আপনার কি মনে হয় সুবর্ণা মুস্তাফা, আজিজুল হাকিম, ভাবনারা মানুষকে গুলি করেছে? যিনি মামলা দিয়েছেন, দাবি করেছেন তিনি গুলি খেয়েছেন! এখন এসব অভিনয়শিল্পী কি তাকে গুলি করেছে! এসব অসুস্থ চর্চা যদি এখনই শেষ না করা যায় তাহলে রাষ্ট্রকে মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (মঙ্গলবার) অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করব। আমরা চাই ন্যায়বিচার, হয়রানি নয়। এটা কেমন কথা! একেকজনের রাজনৈতিক আদর্শ একেক রকম হবে এটাই স্বাভাবিক। অথচ আপনার মতের সঙ্গে মিলছে না বলে আপনি তাকে শাস্তি দেবেন, দেখে নেবেন, সেটা তো হয় না।
যাদের মামলা দেওয়া হয়েছে তারা যদি অপরাধী প্রমাণিত না হন তাহলে যিনি মামলা দিয়েছেন তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ছোটবেলায় গ্রামে দেখতাম, একজনের সঙ্গে আরেকজনের কথা কাটাকাটি হলেই মামলা দিত। এখন কি সেই যুগ আছে? আমি সরাসরি এই মামলার বিরুদ্ধে’।