মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদী বিধৌত অঞ্চলে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ জেলা ভোলার ঐতিহ্যবাহী জনপদ চরফ্যাশনে ধারণ করা হয়েছে এবারের ইত্যাদির পর্ব। মঞ্চ তৈরি করা হয় ব্রিটিশ আমলে তৈরি প্রায় শত বছর প্রাচীন ঐতিহাসিক ট্যাফনাল ব্যারেট স্কুলের সামনে। আর এই অনুষ্ঠান ধারণ উপলক্ষে পুরো ভোলাজুড়েই ছিল উৎসবের আমেজ।
এ সময় আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও অনুষ্ঠানস্থলের বাইরেঅর্ধ লক্ষাধিক মানুষ উপস্থিত হন অনুষ্ঠান দেখার জন্য।
স্থানীয়রা জানান, এর আগে ভোলায় কখনো কোনো অনুষ্ঠানে এত দর্শক-সমাগম হয়নি। অনেক দর্শকই আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনার ছাদ ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেও দীর্ঘ সময় ধরে অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করেছেন তাদের প্রিয় অনুষ্ঠান। কিছুক্ষণ পরপরই চলছিল হাজার হাজার দর্শকের উচ্ছ্বাসপূর্ণ চিৎকার আর তালি।
এবারের অনুষ্ঠানে গান রয়েছে দুটি। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভোলা জেলাকে নিয়ে রয়েছে মনিরুজ্জামান পলাশের কথায় একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে নৃত্য। পরিবেশন করেছেন স্থানীয় শতাধিক নৃত্যশিল্পী। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছে এস কে জাহিদ, কণ্ঠ দিয়েছেন রাজিব ও তানজিনা রুমা। গানটির সুর করেছেন হানিফ সংকেত এবং সংগীত আয়োজন করেছেন মেহেদী।
আর একটি গান গেয়েছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রবি চৌধুরী ও আঁখি আলমগীর। ‘আমাকে না বলে’ শিরোনামে গানটির সুর ও সংগীত করেছেন শ্রোতাপ্রিয় শিল্পী ইমরান মাহমুদুল, লিখেছেন রবিউল ইসলাম জীবন।
দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান ভোলাকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৩ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে নির্বাচিত দর্শকরা এই পর্বের অতিথি ভোলা জেলারই সন্তান জনপ্রিয় তারকা তৌসিফ মাহবুবের সঙ্গে অভিনয় করেন।
এ ছাড়া এবারের অনুষ্ঠানে রয়েছে পর পর দুবার পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করা প্রথম ও একমাত্র বাঙালি ভোলার সন্তান এম এ মুহিতের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার।
দ্বিতীয়বার তিনি ও নিশাত মজুমদার যখন একসঙ্গে এভারেস্ট জয় করেছিলেন— তখন তাদের হাতে শোভা পাচ্ছিল ‘ইত্যাদি’ লেখাটি। কিন্তু কেন, সেসবের উত্তরও পাওয়া যাবে এই সাক্ষাৎকারে।
১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ভোলা জেলায় যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছিল, একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় সেই ভয়াল চিত্র উঠে এসেছে একটি পর্বে।
পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অনেক আগে থেকেই ভোলায় শুরু হয় মহিষকে কেন্দ্র করে এক অনন্য বাণিজ্যিক কার্যক্রম। মহিষের বাথান ও মহিষ নিয়ে রয়েছে আর একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন। নদীবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে মৎস্য খাত। তবে জীবিকার তাগিদে মাছ ধরতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন অনেক জেলে। তেমনি একটি জেলে পরিবারের করুণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এবারের পর্বে। এবারে বিদেশি প্রতিবেদন দেখানো হবে চীনের বেইজিংয়ের দুর্দান্ত সামার প্যালেসের ওপর। গ্রীষ্মকালীন এই প্রাসাদটি প্রাসাদ, বাগান এবং হ্রদের একটি কমপ্লেক্স।
সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ও প্রসঙ্গ নিয়ে সামাজিক অসঙ্গতি ও সমাজ সংস্কারের ওপর রয়েছে বেশ কিছু তীক্ষ্ণ ও তীর্যক নাট্যাংশ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বনাম সেকেলে বৃদ্ধা, গরমে চরম অবস্থা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিতর্ক, মোবাইলিংয়ের বিষাক্ত ছোবল, সন্তানের ফোন আসক্তিতে অভিভাবকদের ভূমিকা, প্রচারণা যার সিনেমার মুল্লুক তার, প্রচলিত কথা এখন অচল, নতুন ছবি নিয়ে পুরনো কথা, ভাইরাস আতঙ্ক, চোরের সংজ্ঞাসহ বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ।
এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন— দিলারা জামান, সোলায়মান খোকা, আব্দুল আজিজ, সুভাশিষ ভৌমিক, আরফান আহমেদ, আমিন আজাদ, মুকিত জাকারিয়া, রকি খান, জিল্লুর রহমান, শাহেদ আলী, আশরাফুল আলম সোহাগ, জাহিদ শিকদার, জামিল হোসেন, নিপু, সুজাত শিমুল, কামাল বায়েজিদ, নজরুল ইসলাম, সাবরিনা নিসা, রাজীব সালেহীন, শুভরাজ, সুবর্ণা মজুমদার, সূচনা শিকদার, আনোয়ারুল আলম সজল, বেলাল আহমেদ মুরাদসহ আরো অনেকে। বরাবরের মতো এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম।
ইত্যাদির এই পর্বটি আগামী ২৯ আগস্ট, শুক্রবার রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর প্রচারিত হবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।