Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
রবিবার, জুন ২২, ২০২৫

আব্বাস কিয়ারোস্তামি: একজন ইরানী জীবনানন্দ

“তুমি নাই তাই নিজের সাথেই তর্ক করতেসি আমি”

বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে ইজরায়েল-ইরান যুদ্ধ, আঘাত-পাল্টা আঘাত। সাথে আছে আমেরিকার দৌরাত্ন। ইতোমধ্যেই উভয়পক্ষের হামলায় বহু সাধারণ নাগরিক মারা গেছেন । তবে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ইরান। তবে এই যুদ্ধের আগুন ছাড়াও ইরানের নাম শুনলেই সিনেমাপ্রেমীদের মনে যার কথা সবার আগে মনে আসে তিনি নির্মাতা আব্বাস কিয়ারোস্তামি।

‘থ্রো দ্য অলিভ ট্রি’ সিনেমার একটি দৃশ্য

তিনি আর তার ক্যামেরা মানুষদের নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছেন জীবন কি, সুখ কি, কি অর্থ প্রকৃতির সাথে মানুষের আর শিখিয়েছেন সহমর্মিতা কাকে বলে। কিয়ারোস্তামি সিনেমাপ্রেমীদের নতুন করে অনুভব করতে শিখিয়েছেন ভালোবাসা কি, দেখিয়েছেন জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত, মানুষের প্রতি মানুষের অগাধ ভালোবাসা আর মননের গভীরে বয়ে চলা বিরহ, প্রেম আর গভীর রাজনীতি। নির্মাতাদের দেখিয়েছেন গল্প কাকে বলে, শিখিয়েছেন কি সহজেই না বলা যায় জীবনের কঠিন বাস্তব আর মর্মভেদী গল্পগুলো। আজ এই মহান নির্মাতার জন্মদিন।

‘টেস্ট অব চেরি’

১৯৪০ সালের ২২ জুন তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন কিয়ারোস্তামি। তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় পড়াশোনা করে গ্রাফিকস ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেন। সে সময়ই তিনি শিশু–বয়স্কদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নে (দ্য সেন্টার ফর দ্য ইন্টেলেকচুয়াল ডেভেলপমেন্ট অব চিলড্রেন অ্যান্ড ইয়াং অ্যাডাল্ট) যোগ দেন। এই কাজ করতে গিয়ে তার মনে হয়, পাঠদানের চেয়ে শিশুদের ভিজুয়াল কোনো মাধ্যমে শেখালে কেমন হয়? এই প্রথম শিশুদের জন্য হাতে তুলে নেন ক্যামেরা। বানান শর্টফিল্ম ‘‘ব্রেডস অ্যান্ড অ্যালি”। সেই থেকে যাত্রা শুরু। এরপর একে একে করেছেন কালজয়ী সব সিনেমা। তার বিখ্যাত সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম হৃদয়গ্রাহী সিনেমাগুলো হল। ‘দ্য এক্সপেরিয়েন্স’, ‘দ্য ট্রাভেলার’, ‘আ স্যুট ফর ওয়েডিং’, ‘টেন’, ‘ক্লোজ আপ’, ‘দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস’, ‘টেস্ট অব চেরি’, ‘হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম?

হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম?

কিয়ারোস্তামির আরেক কালজয়ী প্রেমের সিনেমা ‘থ্রো দ্য অলিভ ট্রি’। যেই সিনেমা দিয়ে তিনি ১৯৯৪ সালে প্রথম কান চলচ্চিত্র উৎসবে পামদ’রের জন্য মনোনয়ন পান। তিন বছর পর ‘টেস্ট অব চেরি’ সিনেমা দিয়ে কান উৎসবে সর্বোচ্চ পুরস্কার জয়ও করেন এই নির্মাতা। শুধু কানই নয়, ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবেও গ্র্যান্ড প্রাইজসহ একাধিক পুরস্কার জয় করেছেন এই নির্মাতা। ইউনেস্কোর স্বর্ণপদকসহ বিশ্বের একাধিক সম্মাননা পেয়েছেন এই পরিচালক, লেখক, কবি ও প্রযোজক। কিয়ারোস্তামিকে তুলনা করা হয় সত্যজিৎ রায়, ভিত্তো ডি সিকা, জ্যাকুয়িস টাটিদের মতো বিখ্যাত পরিচালকদের সঙ্গে।

আব্বাস কিয়ারোস্তামি

কিয়ারোস্তামির সিনেমাগুলোর সবই গল্পনির্ভর আর হৃদয়নিংড়ানো বিরহে ভরা। পুরো সিনেমাজুড়ে দর্শক  আনন্দ আর বাতাসে, প্রান-প্রকৃতির মায়া ভরা দৃশ্যের ভিতর দিয়ে যেতে যেতে উপলব্দি করবেন দুঃখ, সহমর্মিতা আর আশাভঙ্গের যাতনা। অস্তিত্বের অসহনীয় লঘুতা। বাতাসে ভাসার প্রকৃতিতে মিশে যাওয়ার  আনন্দের সাথে সাথে খুব কান্না পাবে, ছলছল করে উঠবে চোখ দর্শকের, পৃথিবীকে মনে হবে এক মায়ানদী। মনে হবে কিয়ারোস্তামী একজন ইরানী জীবনানন্দ দাস।  

সিনেমা নির্মাতা হলেও কিয়ারোস্তামি আগাগোড়া একজন কবি। লিওনার্ড কোহেন কিংবা বব ডিলান যেমন কেবলই গায়ক নন মননের গভীরে ছিলো এক কবিসত্ত্বা তেমনি সিনেমা থেকে উঠে আসলেও কিয়ারোস্তামি একজন কবি। তাইতো তিনি লিখেন,

“যখন আমার পকেটে কিছু থাকে না, তখন আমার সাথে কবিতা থাকে

যখন আমার ফ্রিজে কিছু থাকে না, তখন আমার সাথে কবিতা থাকে

যখন আমার হৃদয়টা ফাঁকা, কিছুই নাই, তখন কিছুই আমার নাই আসলে।“

কিংবা ‘এ ওলফ লায়িং ইন ওয়েট’ কবিতার বইয়ে তিনি লিখেন, “তুমি নাই তাই নিজের সাথেই তর্ক করতেসি আমি“।    

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

দেশে ১০ মাসে সার্টিফিকেট পেয়েছে ৯৪টি চলচ্চিত্র

আজ ১৯ জুন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে উঠে এসেছে চমৎকার তথ্য। মন্ত্রণালয় গত ১০ মাসে কি…
0
Share