চলছিল ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’ নামের একটি ঢাকাই সিনেমার কাজ। যেখানে প্রধান চরিত্রে ছিলেন অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। আর এ ছবি পরিচালনা করছিলেন পরিচালক সুমন ধর। কিন্তু একদিন হঠাৎ এই পরিচালকের কাছে আসে একটি ফোন কল। এরপর অসমাপ্তই রয়ে যায় সিনেমাটি নির্মাণের কাজ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতার তোপের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে একে একে বের হয়ে আসতে শুরু করে নানান সেক্টরের নানান অজানা কাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’ সিনেমার পরিচালক সুমন ধর জানালেন ছবিটির পেছনের অজানা এক কাহিনী।
সুমন জানান, ‘ সিনেমাটি ঘোষণা দেওয়ার পরপর আমার কাছে একটি নম্বর থেকে একাধিকবার ফোন আসে। অপরিচিত নম্বর, তাই ধরিনি। পরদিন আরেকটা নম্বর থেকে ফোন। শুটিংয়ের ব্যস্ততার কারণে ফোন ধরা হয়নি। পরের দিন আবার ফোন, টেকনিশিয়ান ফোন করছেন ভেবে ফোনটা ধরি। ফোন ধরে বুঝি নায়ক জায়েদ খান ভাই। আগের দিনও তিনিই ফোন করেছিলেন।’
পরদিন সুমন দেখা করতে যান হারুনের সঙ্গে তার অফিসে। গিয়েছিলেন জায়েদ খানও। হারুন সেসময় নাকি চেয়ারে বসে দুলছিলেন। এরপর ইশারায় সুমনকে বসতে বলেন।
সুমন সালাম দিতেই হারুন বলেন, ‘কী অবস্থা? শুনলাম, আপনি একটা সিনেমা করছেন, আমি ইয়াসমিন বলছি?’ এতে সুমন সম্মতি জানাতেই বদলে যায় হারুনের রূপ। তিনি ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকান সুমনের দিকে। দৃষ্টি ভয়ংকর হলেও খুব শীতল কন্ঠে হারুন নাকি বলেছিলেন, ‘এটা নিয়ে অনেক কথাবার্তা আছে। এই ছবি আসলে করা যাবে না। আমাদের এখানে বড় বড় আরও শক্তিশালী গল্প আছে। ওগুলো আপনাকে দিই, সেখান থেকে করেন।’
২০১৭ সাল থেকে সুমন এ ছবিটির জন্য অনেক পরিশ্রম করে আসছিলেন। এমন তথ্য জানিয়েও সম্মতি পাওয়া যায়নি হারুনের কাছ থেকে।
এরপর বিদ্যা সিনহা মিমকেও ফোন করেন হারুন। ফোন করে বলেন, ‘এই ছবি হবে না, বুঝেছ?’… এরপর দু–এক মিনিট আরও কথা বলে শেষ হয় সেই ফোনালাপ।
এই ঘটনার পর আর হয়নি ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’ ছবিটি। ঘটনাটির কেবল চারদিন আগেই নাকি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন মিম।
কেন ছবিটি হারুন করতে দিলেন না? এর পেছনের কারণ হিসেবে সুমন জানান, ১৯৯৫ সালের ২৩ আগস্ট রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি বাসে করে দিনাজপুর যাওয়ার পথে ইয়াসমিন নামের এক কিশোরী রাস্তায় নেমে অপেক্ষা করছিল। সেই সময় টহল পুলিশের একটি ভ্যান আসে এবং দিনাজপুরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে একপ্রকার জোর করেই তাকে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে গোবিন্দপুর নামক জায়গায় পাওয়া যায় ঐ কিশোরীর লা’শ। এর প্রতিবাদে দিনাজপুরের মানুষ আন্দোলনও করে। সেই আন্দোলনে আবার গু’লি চালায় পুলিশ। তখন নি’হত হয়েছিল সাতজন। আর আহত হয়েছিল প্রায় দুই শতাধিক মানুষ। এই সত্য ঘটনা ছবিতে ফুটে উঠতো বলেই ছবিটি নির্মাণে বাঁধা এসেছিল বলে সুমন দাবি করেন। তবে এখন আর কেউ এই ছবি নির্মাণে বাধা দিবেন না বলে আশা করেছেন এ পরিচালক।