রবিবার ৬ জুলাই ছিল প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের পঞ্চম মৃত্যু দিবস। ২০২০ সালের এই দিনে প্রয়াত হন তিনি। শিল্পীর প্রয়াণ দিবসে তাকে স্মরণ করেছেন তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু, জনপ্রিয় উপস্থাপক ও অনুষ্ঠান নির্মাতা হানিফ সংকেত।
প্রয়াণ দিবসে বন্ধুকে স্মরণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন হানিফ সংকেত। স্মৃতিচারণা করে তিনি লিখেছেন, ‘আজ বন্ধু এন্ড্রু কিশোরের পঞ্চম প্রয়াণ দিবস। যার কাছে গানই ছিল জীবন-মরণ, গানই ছিল প্রাণ। এই গানের জন্যই মানুষ তাকে ভালোবাসত, দিয়েছিল “প্লেব্যাক সম্রাট” উপাধি। কিশোর যেমন প্রাণ খুলে দরাজ গলায় গাইতে পারত, তেমনি সবার সঙ্গে প্রাণ খুলে মিশতে পারত।’
হানিফ সংকেত তার পোস্টে জানিয়েছেন, এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। শিল্পী হিসেবে এন্ড্রু কিশোর যেমন অনন্য ছিলেন, তেমনি মানুষ হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ। হানিফ সংকেত লিখেছেন, ‘কিশোরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে। একসঙ্গে অনেক আড্ডা দিয়েছি, বহুবার বিদেশে গেছি, একসঙ্গে থেকেছি। কিশোর ছিল “ইত্যাদি”র প্রায় নিয়মিত শিল্পী। একজন আদর্শ শিল্পী, একজন মানবিক মানুষ ছিল কিশোর। গানের মাধ্যমেই এন্ড্রু কিশোর বেঁচে থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। বন্ধু ভুলিনি তোমায়, ভুলব না, ভুলতে পারব না। ভালো থেকো, শান্তিতে থেকো।’
বেশ নীরবে-নিভৃতে কাজ করলেও হানিফ সংকেতের ইত্যাদি অনুষ্ঠানে সরব থাকতেন এই শিল্পী। বন্ধুত্বের জায়গা থেকে হানিফ সংকেতের ইত্যাদিতে গান উপহার দিতেন এন্ড্রু কিশোর।
১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্ম এন্ড্রু কিশোরের। তার পুরো নাম এন্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ। মা মিনু বাড়ৈ ছিলেন সংগীতানুরাগী এবং কিশোর কুমারের ভক্ত। সেই সূত্রেই ছেলের নাম রাখেন কিশোর। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতেই গানের ভুবনে পা রাখেন এন্ড্রু কিশোর। ১৯৭৭ সালে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমায় আলম খানের সুরে প্রথম গান করেন কিশোর। এরপর একে একে ১৫ হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। যা বাংলাদেশি কোনো শিল্পীর ক্ষেত্রে বিরল দৃষ্টান্ত। তার গাওয়া কিছু জনপ্রিয় গান ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা আমায়’, ‘পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমার ছোঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি’, ‘সব সখীরে পার করিতে’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘তুমি চাঁদের জোছনা নও’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘কিছু কিছু মানুষের জীবনে’, ‘এক বিন্দু ভালোবাসা দাও’ ইত্যাদি।
অসংখ্য ব্যক্তিগত পুরস্কারের পাশাপাশি সেরা গায়ক হিসেবে মোট আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন এন্ড্রু কিশোর।