আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতে নিওন (Neon) এক স্বতন্ত্র নাম হয়ে উঠেছে। এটি একটি আমেরিকান স্বাধীন চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও বিতরণ সংস্থা, যারা মূলত স্বাধীন চলচ্চিত্র এবং বিদেশী ভাষার সিনেমা বাজারজাত করে। উদ্ভাবনী বিপণন কৌশল এবং সাহসী চলচ্চিত্র নির্বাচনের জন্য নিওন বেশ পরিচিত। এই নিওনই যেন সিনেমার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
২০১৭ সালে বর্তমান সিইও টম কুইন এবং টিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলো নিওন। যিনি আলামো ড্রাফটহাউস সিনেমা চেইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন। সেবছর মানে ২০১৭ সালেই কলোসাল (Colossal) সিনেমার মুক্তি দিয়ে প্রথম যাত্রা শুরু করে নিওন।
কান চলচ্চিত্র উৎসবের শেষ পাঁচটি পাম ডি’অর বিজয়ী চলচ্চিত্র নিয়ন থেকে এসেছে। প্যারাসাইট, টাইটান, ট্রায়াঙ্গেল অফ স্যাডনেস, অ্যানাটমি অফ আ ফল এবং সম্প্রতি, আনোরা তাদের সফলতার তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এই পাঁচটির মধ্যে প্যারাসাইট ও আনোরা সিনেমা দুটি আবার অস্কারে বেস্ট পিকচার অ্যাওয়ার্ডও জিতেছে। এছাড়াও গতবছর প্রকাশ করেছে ইরানী নির্বাসিত ফিল্মমেকার মোহাম্মাদ রাসুলফ পরিচালিত সিনেমা রাজনৈতিক সিনেমা ‘দ্য সিড অফ দ্য স্যাক্রেড ফিগ’ এর মতো সিনেমা।
অন্যান্য স্টুডিও যখন গতানুগতিক প্রচারণায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে, নিওন তখন অভিনব উপায়ে দর্শকদের কাছে পৌঁছে যায় গুণগত সব সিনেমা নিয়ে। ‘অনোরা’র প্রচারণার অংশ হিসেবে লস অ্যাঞ্জেলেসের এক অটো বডি শপের সামনে পপ-আপ মার্চেন্ডাইজ বিক্রি, এমনকি অস্কার ভোটারদের পরিবর্তে যৌন কর্মীদের জন্য বিশেষ স্ক্রিনিংয়ের আয়োজন করে তারা। নিওনের সিইও টম কুইন বলেন, ‘আমরা নিজেদের ছন্দে চলি। সিনেমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
নিওনের কর্মী মাত্র ৬০ জন। এই অল্পসংখ্যক লোকবল নিয়ে নিওন ডিজনি বা নেটফ্লিক্সের মতো বড় স্টুডিওকে পেছনে ফেলে সেরা ছবির পুরস্কার জিতে নিয়েছে। ‘অনোরা’র জন্য নিওন ১৮ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, যা সিনেমাটির বাজেটের তিনগুণ। তবে ‘প্যারাসাইট’-এর জন্য ২০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল তারা। নিওনের এই সাফল্য শুধু তাদের নিজেদের নয় বরং সমগ্র স্বাধীন চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য এক অনুপ্রেরণা। তারা প্রমাণ করেছে, ছোট বাজেটের সিনেমাও বড় স্বপ্ন দেখতে পারে এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে।
নিওনের চলচ্চিত্র নির্বাচনেও রয়েছে বিশেষত্ব। তারা শুধু বাণিজ্যিক সাফল্যের পেছনে ছোটে না, বরং শিল্পের গভীরতা ও সামাজিক বার্তা বহনকারী সিনেমাকে অগ্রাধিকার দেয়। ‘আনোরা’র মতো সিনেমা অস্কার জয় করে প্রমাণ করে, নিওনের এই দৃষ্টিভঙ্গি কতটা সঠিক। নিওনের হাত ধরে চলচ্চিত্র জগতে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে, যেখানে সৃজনশীলতা, সাহসিকতা, শিল্পপ্রেম এবং নৈতিকতার সার্বজনীন চর্চার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্যারাসাইট কিংবা আনোরার মতো সিনেমাগুলো নির্বাচন করে নিওন মূলত মানুষকে দেখাতে চায় সামাজিক ভেদাভেদ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের অন্ধকার দিক আর তা থেকে উৎপন্ন এক গভীর অসুখ, অপরিমেয় যাতনা।