আজ ১৬ এপ্রিল বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও সুরকার স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন জুনিয়রের জন্মদিন। সংক্ষেপে সবাই যাকে চার্লি চ্যাপলিন নামেই চেনে। চার্লি চ্যাপলিন এক আশ্চর্য সুন্দর শিল্পীযার কথা মনে আসলেই চোখে ভেসে আসে একটা লোক যার পরনে কোট, ঢিলেঢালা প্যান্ট, মাথায় ক্যাপ, ছোট গোঁফ, হাতে ছড়ি আর পায়ে হাস্যকর জুতো। যিনি বলেছিলেন একটা কমেডি সিনেমা বানাতে আমাকে শুধু একটি পার্ক, একজন পুলিশ ও একজন রূপসী নারী দিলেই হয়ে যাবে।
চার্লি চ্যাপলিন, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই মূকাভিনেতা ১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল দক্ষিণ লন্ডনের ওয়ালওর্থের ইস্ট স্ট্রিটে জন্মগ্রহণ করেন। প্রচণ্ড দারিদ্র্য আর অর্থকষ্টে জর্জরিত থাকায় মাত্র সাত বছর বয়সেই উপার্জনের পথ খুঁজতে হয় তাকে এবং নয় বছর বয়সে ছোটদের যাত্রাদল ‘দ্য এইট ল্যাঙ্কাশায়ার ল্যাডস’–এ যোগদানের মাধ্যমে শুরু হয় অভিনয়জীবন। ১৯১৪ সালে ‘মেকিং আ লিভিং’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রজগতে প্রবেশ করেন তিনি। তবে তার ‘দ্য ট্র্যাম্প’ তাকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে আমাদের কাছে। এই সিনেমায় চার্লি চ্যাপলিনের বেশভূষা তাকে এক হাস্যকর চরিত্র হিসেবে চিহ্নিত করে। আবার রাজকীয় ব্যক্তিত্বও প্রদর্শন করতে চায় একই সঙ্গে।
তার নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হলো- দ্য কিড (১৯২১), পরে তিনি আ ওম্যান অব প্যারিস (১৯২৩), দ্য গোল্ড রাশ (১৯২৫) এবং দ্য সার্কাস (১৯২৮) চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন এবং এসব চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেন। ১৯৩০-এর দশকে তিনি সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণ করার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন এবং নির্বাক সিটি লাইটস (১৯৩১) ও মডার্ন টাইমস (১৯৩৬) নির্মাণ করে প্রশংসিত হন।
চ্যাপলিন তার পরবর্তী চলচ্চিত্র দ্য গ্রেট ডিক্টেটর নির্মানের মাধ্যমে (১৯৪০) অতিমাত্রায় রাজনৈতিক হয়ে ওঠেন এবং অ্যাডলফ হিটলারকে ব্যঙ্গ করেন। ১৯৪০-এর দশকে চ্যাপলিনকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় এবং তার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।
তিনি সমাজতান্ত্রিকদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলে অভিযোগ ওঠে। জীবনের শেষ সময়ে তিনি ছিলেন সুইজারল্যান্ডে। ১৯৭৭ সালের বড়দিনে সেদেশেই মহাপ্রয়াণ ঘটে চার্লি চ্যাপলিনের। মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া বিশাল সম্পত্তির লোভে চুরি হয় তার কফিনও। তবে তার কফিনটি নিরাপদেই উদ্ধার করে পুলিশ।
আপাত অর্থে চার্লির সিনেমাগুলো নিছক হাস্যরসপ্রধান মনে হলেও তার চলচ্চিত্রগুলোতে মিশে আছে সূক্ষ্ম রাজনীতি। তার সিনেমা মূলত নিম্নবিত্তের জীবনের উপস্থাপন। তৎকালীন ইউরোপের শিল্পায়নের প্রভাব তিনি দেখিয়েছেন নিম্ন-মধ্যবিত্তের জীবনের উপর, দেখিয়েছেন বেকারত্বের প্রভাব। তুলে এনেছেন ফ্যাসিবাদী ও সর্বগ্রাসী হিটলারের মনস্তত্ত্ব, করেছেন তার সমালোচনা দ্য ডিক্টেটর সিনেমার মাধ্যমে। জীবনের জটিল সমীকরণ তিনি হাস্যরসের ভিতর ফুটিয়ে তুলেছেন সুনিপুন ভঙ্গিমায়। তৎকালীন রাজনীতি ও পুঁজিপতি দুনিয়ার কুটিল সমীকরণ দেখে গভীর জীবনবোধের সাথে তাইতো চার্লি বলেন, আমাদের জীবনে চালাকির চেয়ে সবচেয়ে বেশী দরকার দয়া ও মহত্ব।