বাড়িটিকে আদর করে ডাকতেন তারা ভাঙা বাড়ি। রাহুল আনন্দ এবং স্ত্রী উর্মিলা শুক্লার সেই ভাঙা বাড়িটিকে আসলে পুড়িয়ে ফেলা হলো এবং ভেঙে ফেলা হলো সোমবার ৫ আগস্ট। দুর্বৃত্তদের হামলায় তাদের সাজানো বাড়িটি এখন পরিত্যাক্ত।
সম্প্রতি জলের গান ব্যান্ডের কর্ণধার ও ভোকাল রাহুল আনন্দের বাড়িটি আলোচনায় আসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর পরিদর্শনের পর। তিনি এই বাড়িটিতে বিশেষ সময় কাটান। ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের সেই আলাপচারিতায় মেশানো ছিল সুর ও শব্দের অবগাহন।
এই বাড়িটির বিশেষত্ব ছিল, কখনো শিল্পী এই বাড়ির গেট আটকাতেন না। দরজা সবসময় খোলা থাকতো। এবং এখানে বসেই জলের গানের সুর বাধা হতো, কথা লেখা হতো। বানানো হত নানা রকমের বাদ্যযন্ত্র।
বেশ কয়েক বছর ধরে এই বাসাতেই বসত গেড়ে ছিলেন রাহুল আনন্দের পরিবার। সেখান থেকে এক কাপরে তের বছরের সন্তানসহ বের হয়ে আসতে হয় রাহুল- উর্মিলা দম্পতিকে। এ বিষয়ে জলের গান ফেসবুক পেজ থেকে একটি দীর্ঘ পোস্ট দেওয়া হয়, যেখানে ব্যান্ডটি জানিয়েছে, ‘তবে কি এই ঠিকানায় আবাস হওয়াটাই কিছু মানুষের এত ক্ষোভের কারণ? এত রাগের বহিঃপ্রকাশ? যারা ইতিমধ্যে সেখানে গিয়েছেন কিংবা ফেসবুকে পোস্ট দেখেছেন, তারা সকলেই খবরটি জানেন। হ্যাঁ!, রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার, এবং আমাদের সকলের প্রিয় জলের গানের এই বাড়িটি আর নেই। সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এবং আশীর্বাদে বাড়ির সকল সদস্য নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন এবং এখন নিরাপদে আছেন। কিন্তু রাহুলদা এবং আমাদের দলের সকল বাদ্যযন্ত্র, গানের নথিপত্র এবং অফিশিয়াল ডকুমেন্টস ছাড়াও দাদার পরিবারের খাট-পালং, আলনা আর যাবতীয় সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে! সব!’
এই পোস্টে আরও লেখা হয়, ‘জলের গানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি শুধু রাহুল আনন্দের বসতবাড়ি ছিল না; ছিল পুরো দলটির স্বপ্নধাম, আনন্দপুর। যেখানে তৈরি হয়েছে কত গান, কত সু্র, আর দাদার ভাবনাপ্রসূত শত শত বাদ্যযন্ত্র। শুধু তা-ই নয়। জলের গানের অফিশিয়াল স্টুডিও হিসেবেও ব্যবহৃত হতো বাড়িটি। দলের সকলের দলগত সংগীতচর্চা থেকে শুরু করে, সকল স্টুডিও ওয়ার্ক-রেকর্ডিং, মিক্সিং, এডিটিং এখানেই হতো।’
পোস্টটিকে অফিসিয়াল বিবৃতি হিসেবে উল্লেখ করে তারা আরও লেখেন, ‘জলের গানের বাদ্যযন্ত্র। রাহুল আনন্দের বিরাট ভাবনা ও স্বপ্নের দিকে ধাবমান এক নিরন্তর প্রয়াস।
আমাদের দেশীয় কাঠে তৈরি, আমাদের নিজেদের বাদ্যযন্ত্র। শুধুই কি আমাদের? এই দলের? জলের গানের? না! এই প্রয়াস সকল নবীন মিউজিশিয়ানদের জন্য, যারা বিশ্বাস করবে, আমরাও আমাদের বাপ-দাদার মতো নিজেদের বাদ্যযন্ত্র নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারি! এই প্রয়াস সেই স্বকীয়তার; যার বলে এই দেশের মানুষ গর্বের সাথে বলতে পারে, এই আমাদের নিজেদের বাদ্যযন্ত্রে বেজে ওঠা অনন্য শব্দতরঙ্গ, যা কি না পুরো পৃথিবীর বুকে কেবল এই বাংলাদেশের মাটিতেই ঝনঝন করে বাজে, সুর তোলে, স্বপ্ন দেখায়। যেই স্বপ্নের ঝিলিক সুদূর ফ্রান্স থেকে আরেকজন মিউজিশিয়ানকে আমাদের দেশে টেনে আনে। পুরো পৃথিবীর লক্ষ কোটি মানুষের চোখের আলো পড়ে আমাদের এই দেশে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের এই বাড়িটিতে।’
বিবৃতির সঙ্গে যুক্ত করা হয় এই বাড়িতে রেকর্ড করা শেষ গান।
ছবি: সংগ্রহ