গ্যাংস্টার বা আন্ডারওয়ার্ল্ড! শব্দটা শুনতেই কঠিন মনে হয়। কম-বেশি সবার জানা ৭০-৮০’র দশকে বলিউডে আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রভাব ছিল তুঙ্গে। সিনেমায় বিনিয়োগ তো ছিলই, এছাড়াও কাস্টিং নির্বাচন কিংবা সেরা পারফরমারের পুরস্কার কে পাবেন, তা-ও কিন্তু ঠিক করা হতো আন্ডারওয়ার্ল্ডের ইশারায়।
সেই সময়ে স্বেচ্ছায় বা জবরদস্তির মুখে মাফিয়া বসদের সম্পর্কে জড়িয়ে পরতেন বলিউডের ডিভা অর্থাৎ নায়িকারা। ‘নায়িকা আর মাফিয়া’ প্রসঙ্গে বলিউড পাড়ায় পাওয়া যায় বেশ মুখরোচক ও রোমাঞ্চকর সব গল্প।
চলুন জেনে আসি সেই সব বলিউড নায়িকাদের সম্পর্কে যারা গ্যাংস্টারদের প্রেমে পড়েছিলেন। তবে যদিও সেটি প্রেম, নাকি ক্যারিয়ার রক্ষার কৌশল মাত্র সেই বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে আজও!
হিনা কাউসার:
১৯৭০-এর দশকের বেশ পরিচিত মুখ প্রখ্যাত পরিচালক কে. আসিফের মেয়ে হিনা কাউসার। সেই সময়ে ‘চোরন কি বারাত’, ‘পরওয়ারিশ’, ‘ঘর ও বাজার’-এর মত বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় সিনেমায়ও দেখা গেছে তাকে। ১৯৯১ সালে ভারতীয় গ্যাংস্টার ইকবাল মির্চিকে বিয়ে করেন তিনি। সেই সময়ে বেশ আলোচনায় উঠে এসেছিলেন হিনা-ইকবাল জুটি।
সোনা মাস্তান মির্জা:
১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে হিন্দি সিনেমায় দেখা গিয়েছিল অভিনেত্রী সোনা মাস্তান মির্জাকে। অভিনয়ের খুব একটা পরিচিতি না পেলেও, একটা সময় গ্যাংস্টার হাজি মাস্তানের সাথে তার সম্পৃক্ততা প্রকাশ্যে আসার পর আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। ২০১০ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন মুম্বাই’ সিনেমাটির কথা কম-বেশি সবার মনে আছে। গুঞ্জন রয়েছে সিনেমাটি হাজি মাস্তান ও সোনা মাস্তানের জীবনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত।
মমতা কুলকারনি:
১৯৯৩ সালে ‘তিরাঙ্গা’ সিনেমা দিয়ে বলিউডে অভিষেক করেন ৯০ দশকের সেনসেশন মমতা কুলকারনি। আমির খানের সাথে ‘বাজি’, নানা পাটেকরের বিপরীতে ‘ক্রান্তিবীর’-এর মত সিনেমা ছাড়াও তাকে দেখা গিয়েছিল। জানা যায়, আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিমের দোসর ছোটা রাজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন পর্দা কাঁপানো এই অভিনেত্রী। তবে ছোটা রাজন ভারত ছাড়ার ফলে বিচ্ছেদ হয়ে যায় মমতা-রাজন জুটির।
আনীতা আইয়ুব:
পাকিস্তানী বংশোদ্ভুত বলিউড অভিনেত্রী আনীতা আইয়ুবের সমাপ্তিটা বেশ হৃদয়বিদায়ক ছিল। তিনি ১৯৯৩ সালে বলিউডে ডেবিউ করেন ‘পেয়ার কা তারানা’ সিনেমা দিয়ে। খুব একটা বেশি সময় বলিউডকে দিতে পারেননি অনীতা। মূলত গ্যাংস্টার দাউদ ইব্রাহিমের সাথে যোগসূত্রের খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সিনেমায় ছন্দপতন ঘটে তার। একটা সময় মুম্বাই বোমা বিস্ফোরণের মত ঘটনায় নাম উঠে আসে এই অভিনেত্রীর।
মণিকা বেদি:
বলিউডের ৯০-এর দশকের গ্ল্যাম নায়িকা মনিকা বেদী। সালমান খান, সুনীল শেঠি ও গোবিন্দের মতো অভিনেতাদের সাথে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু যখন এই অভিনেত্রীর ক্যারিয়ার একটু একটু করে গতি পাচ্ছে ঠিক তখন তার নাম জড়িয়ে পরে কুখ্যাত ডন আবু সালেমের সাথে।
গ্যাংস্টারের সাথে সম্পর্কে! রীতিমত সেই সময়ের খবরের মূল হেড লাইনে উঠে আসেন মণিকা। ১৯৯৮ সালে দুবাইয়ের একটি শোতে দেখা হয়েছিল তাদের। একপর্যায়ে খবর রটে, মণিকা বেদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আবু সালেমকে বিয়ে করেছেন।
মন্দাকিনী:
১৯৮৫ সালে নিজের প্রথম সিনেমা রাজ কাপুর পরিচালিত ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’ দিয়ে দর্শকের মন জয় করে নেন বলিউড অভিনেত্রী মন্দাকিনী। তবে দুর্ভাগ্যবসত নিজের নামের মত ভাগ্যেও খুব দ্রুত মন্দা নেমে আসে এই অভিনেত্রীর।
গ্যাংস্টার দাউদ ইব্রাহিমের সাথে একটি ছবি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই ক্যারিয়ারের পতন শুরু হয় মন্দাকিনীর। ১৯৯৬ সালে ‘জোরদার’ সিনেমার পর রুপালি পর্দা থেকে চিরদিনের মত হারিয়ে যান দর্শকপ্রিয় এই অভিনেত্রী।
পরে জানা যায়, বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়ে ১৯৯০ সালে এক সন্ন্যাসীকে বিয়ে করেছিলেন মন্দাকিনী।
জেসমিন ধুনা:
এবার আসা যাক আরেক বলিউড ডিভা জেসমিন ধুনার প্রসঙ্গে। এই বলিউড অভিনেত্রী ডেবিউ সিনেমা ‘সরকারি মেহমান’ দিয়ে খুব একটা সাড়া ফেলতে না পারলেও, ১৯৮৮ সালে ‘বীরানা’ সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর রাতারাতি সেনসেশন হয়ে ওঠেন জেসমিন । গ্যাংস্টার দাউদ ইব্রাহিমের সাথে প্রেমের গুঞ্জন উঠেছিল তাকে নিয়েও। ঠিক সেই সময় হঠাৎ-ই বিনোদনজগৎ থেকে অদৃশ্য হয়ে যান বলিউড ডিভা জেসমিন ধুনা।