Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
বৃহস্পতিবার, মে ২২, ২০২৫

আমরা কি সন্ত্রাসকে বেশি প্রমোট করে ফেলছি? -গিয়াস উদ্দিন সেলিম

২১ শতকের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র জগতের এক শৈল্পিক ব্যক্তিত্ব নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। যার হাত ধরে দেশীয় চলচ্চিত্র পার করেছে শুন্য দশকের অন্ধকার সময়। তাকে নির্দ্বিধায় যুগসন্ধিক্ষণের চলচ্চিত্র নির্মাতা বলা যায়। যার মনপুরা সিনেমা আলোড়ন তুলেছে দেশ ও দেশের বাহিরে। বাংলা সিনেমার সত্তর-আশির দশকের সেই ধ্রুপদী সিনেমার আধুনিক পুনর্জন্ম ঘটিয়েছেন এই নির্মাতা।

নির্মাতার ভাষ্যে তিনি একজন শ্রেণীসচেতন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদি নির্মাতা। যার প্রমাণ আমরা দেখি তার গল্প বুনন ও গল্পের ছলে সমাজের উপরতলা আর নীচুতলার গল্প উপস্থাপনে। সামন্তবাদী ও জমিদার শ্রেণীর কুচক্রের গল্পে বানানো মনপুরা, তেভাগা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে করা সিনেমা ‘আধিয়ার’, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক, পরাক্রমশালী গোষ্ঠীর ইগো ও ষড়যন্ত্রের গল্পে নির্মিত স্বপ্নজাল সিনেমা এই কথাই প্রমাণ করে যে গিয়াস উদ্দিন সেলিম নিছকই একজন নির্মাতা নন।

তিনি মানুষের ভিতরের স্বৈরাচারী মনোভাবের গল্প বলেন। গিয়াস উদ্দিন সেলিম এই বাংলার জল, মাটি, মিথ আর স্বপ্নে ভরা মানুষদের সারথী, তাই বলেই হয়তো নির্মাণ করেছেন কয়েক শত বছর পুরোনো কিন্তু চির অম্লান মৈয়মনসিংহ গীতিকার গল্পে কাজলরেখা। আজ চিত্রালীর সাথে আলাপ হয়েছে এই জনপ্রিয় নির্মাতার। কিছু কথা আর কিছু ব্যথার সংলাপে চলুন ঘুরে আসি।  

সাক্ষাৎকারঃ রাইসুল ইসলাম

চিত্রালীঃ আপনি কবে থেকে থিয়েটার করা শুরু করলেন?

গিয়াস উদ্দিন সেলিমঃ থিয়েটারটা শুরু হয় যখন আমি এসএসসি পরীক্ষা দেই, ফেনীতে থাকাকালীন সময়ে। এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পরে কিছু বন্ধুর সাথে আমার আলাপ হয়, কিছু সিনিয়রের সাথেও আলাপ হয়, ম্যাক্সিমাম’ই সিনিয়র। ওরা আমাকে বললো ওরা “ সুবচন” নামে একটা কাব্যদল, কবিতা পড়ার দল তৈরি করতে চায়। আমাকে বললো যে চল কবিতা পড়তে হবে। তারপর কবিতা-টবিতা পড়লাম ওদের সাথে। আমি মূলত স্পোর্টসম্যান ছিলাম ওই সময়ে। ক্রিকেট খেলতাম, ফুটবল খেলতাম, খেলা আর বাড়ি। কিছুদিন এমন কবিতা পড়তে পড়তে তারপর তৈরি হল “সুবচন কাব্য নাট্যদল”। তারপর নাম হয়ে যায় ‘সুবচন নাট্য দল’। ১৯৮৩-৮৪ দুই বছর আমি ফেনীতে এই নাট্যদলে ছিলাম। তারপর ১৯৮৫ তে উচ্চ শিক্ষার জন্য রাজশাহী গমন করলাম।

চিত্রালীঃ রাজশাহীতে গিয়ে কিভাবে থিয়েটারে যুক্ত হলেন?

গিয়াস উদ্দিন সেলিমঃ রাজশাহী গিয়ে আমি ‘অনুশীলন’-এর সাথে যুক্ত হলাম। থিয়েটার আসলে কচ্ছপের কামড়, একবার যদি ধরে আর ছাড়েনা। সেখানে কিছুদিন করার পরে আমি নিজেই একটা দল খুললাম। বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার রাজশাহী। যেটা এখনো আছে।

চিত্রালীঃ শিল্প সাহিত্যের প্রতি এতো টান অনুভব করলেন কিভাবে?

গিয়াস উদ্দিন সেলিমঃ জহির রায়হানের উপন্যাস ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ পড়ে আমার ভিতরে পড়ার আগ্রহ তৈরি হয়। এরপর আরো কবিতা, উপন্যাস পড়লাম, নাট্যদলে অভিনয় এইসব মিলিয়েই শিল্প সাহিত্যের প্রতি টানটা প্রবল হয়ে উঠে।

চিত্রালীঃ বিপ্রতীপ ধারাবাহিক নির্মানের পেছনে কারণটা কি ছিল?

গিয়াস উদ্দিন সেলিমঃ ৯৮-৯৯ ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এফপিএবি) কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে একটি সিরিজ করার প্ল্যান করলো আর আমাকে লেখক হিসেবে হায়ার করলো। সেই লেখক হওয়া থেকেই মূলত বিপ্রতীপ নাটকটি লেখা এমনকি পরিচালনাও করা। যেটা আমার প্রথম ডিরেকশান।

চিত্রালীঃ আপনি ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নিয়ে চিত্রনাট্য লিখেছেন, টেন্ডার ড্রপ করেছেন কিন্তু দিনশেষে কাজটি পেলেন না কেন? 

গিয়াস উদ্দিন সেলিমঃ এটা আসলে বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্থ আমলাতন্ত্রের ফলাফল। আমি প্রায় ছয় বছর কাজ করেছি চিত্রনাট্য নিয়ে। তৎকালীন সরকারও বেশ টাকা পয়সা খরচ করেছে আমার মাধ্যমে। প্রায় ১০০ নৌ কমান্ডোর ইন্টারভিউ নিয়েছি আমরা। কিন্তু দিনশেষে ঘুষ আর দুর্নীতির কারণে কাজটা পাওয়া হয়নি।

চিত্রালীঃ আপনি প্রায় ৪০০ বছর আগের মৈয়মনসিংহ গীতিকার গল্প নিয়ে কাজলরেখা বানিয়েছেন, এতো প্রাচীন আর অতীত ক্যানভাসের চিত্র তুলে আনতে চাইলেন কেন?

গিয়াস উদ্দিন সেলিমঃ আমি আমার প্রথম সিনেমাই কাজলরেখা করতে চেয়েছি। বাংলার নিজস্ব সমৃদ্ধ রূপকথা, মিথগুলোকে সবার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছি কিন্তু বাজেটের অনিশ্চয়তার কারণে করে উঠতে পারিনি। ৪০০ বছর আগের সময়টাকে তুলে আনার জটিলতা ও তার পেছনে অর্থব্যয় বড় একটা চিন্তার বিষয় ছিলো। পরে সরকারী কিছু অনুদান পেয়ে সাহস হল করার।

চিত্রালীঃ বর্তমান সময়ের বাংলাদেশী সিনেমা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন শুনতে চাই।

গিয়াস উদ্দিন সেলিমঃ কনটেম্পরারী সিনেমাগুলো বাণিজ্যিকভাবে বেশ উন্নতি করছে। তবে এসবে দেখা যাচ্ছে নায়ক শুধু মারতেছে লোকজনকে। অ্যানিমেল, পুষ্পার প্রভাবটা একটু বেশি সিনেমাগুলোতে। আমরা স্বকীয়তা হারাচ্ছি একই সাথে নিজেদের স্বকীয়তা দাঁড় করাতে পারছি না। আমাদের ভাববার ব্যাপার আছে যে, আমরা কি সন্ত্রাসকে বেশি প্রমোট করে ফেলছি?

চিত্রালীঃ আপনার পরবর্তী সিনেমা সম্পর্কে জানতে চাই।

গিয়াস উদ্দিন সেলিমঃ একটা সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখা হয়েছে। সিনেমার প্রিপারেশনও চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ এ আসতে পারে সিনেমাটি।

চিত্রালীঃ আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

গিয়াস উদ্দিন সেলিমঃ চিত্রালীকেও ধন্যবাদ।  

জেডএইচ/ চিত্রালী

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

তথ্য উপদেষ্টার সাথে রাহাত ফাতেহ আলী খানের সাক্ষাৎ

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন পাকিস্তানের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী রাহাত ফাতেহ…
0
Share