-মোঃ অলিউর রহমান-
“ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে”
সালমান শাহের ভক্তরা তার মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করে আজকে হয়ত এই গানটিই শুনছেন। আজ ৬ সেপ্টেম্বর, সালমান শাহের ২৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী।
বেঁচে থাকলে হয়ত দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও নিজের অভিনয়ের ছাপ রাখতেন নায়ক। কিন্তু তার অকাল মৃত্যুতে হয়ত তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। বিদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে তার বিচরণ ছাড়াও আরেকটা জিনিস অসমাপ্ত রয়ে গেছে, আর তা হল অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতা। মাত্র তিন বছরের ক্যারিয়ারে অসংখ্য ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও কখনও জাতীয় পুরস্কার পাননি তিনি। চিত্রালী তার মৃত্যুবার্ষিকীতে অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পাওয়া প্রসঙ্গে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে তার সাথে কাজ করা নির্মাতাদের মন্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছে।
১৯৯৬ সালে মতিন রহমানের পরিচালিত ‘তোমাকে চাই’ চলচ্চিত্রের ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় দর্শকমহলে। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর লেখা কবিতা থেকে তার মৃত্যুর পর তৈরি হওয়া গানটি তো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়ই, সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য তুমুল প্রশংসিত হন সালমান শাহ। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য পুরস্কার না পেলেও অভিনেতা তার অন্য চলচ্চিত্রের জন্য মরণোত্তর সেরা অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পাওয়ার জন্য নানা সময়ে গণমাধ্যমে আক্ষেপ প্রকাশ করেন সিনেমাটির নির্মাতা মতিন রহমান।
তার মতোই অনেক পরিচালকেরই অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পাওয়া নিয়ে আক্ষেপ রয়েই গেছে।১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অভিনেতার প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’- এর পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান গণমাধ্যমে এ সম্পর্কে নিজের অভিমত প্রকাশ করেন। নির্মাতার ভাষ্যমতে, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দ মেলা দ্বারা হিন্দি সিনেমার মেধাস্বত্ব নিয়ে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমাটি তৈরি করায় অভিনেতাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার যাতে না দেওয়া হয় তার জন্য এফডিসিতে আন্দোলন করা হয়। বিরোধের পেছনে যুক্তি হিসেবে দেখানো হয় কপি করা সিনেমার জন্য পুরস্কার প্রদান করা যাবে না অভিনেতাকে। তাই ভালো অভিনয় করলেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি সালমান শাহ।
শুধু সোহানই নয়, অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পাওয়ার জন্য নির্মাতা মালেক আফসারী ও গণমাধ্যমে একাধিকবার খেদ প্রকাশ করেছেন। নায়কের সাথে তিনি ১৯৯৬ সালে ‘এই ঘর এই সংসার’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পাওয়ার জন্য তিনি অবশ্য তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেন। তিনি মনে করেন, অভিনেতার অভিনয় না দেখে সে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থন করে তা বিবেচনা করে কখনই চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া উচিৎ নয়। উল্লেখ্য, ঐ বছর সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।সালমানের মা নীলা চৌধুরী তখন জাতীয় পার্টির হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিলেন।
তবে দেলোয়ার জাহান ঝনটু এ সম্পর্কে ভিন্ন মত পোষণ করেন। ১৯৯৫ সালে অভিনেতার সাথে ‘কন্যাদান’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। তিনি মনে করেন, ভালো চরিত্র পাননি বলেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি সালমান শাহ।
কিন্তু এই চার বছরে(১৯৯৩-১৯৯৭) সেরা অভিনেতার জন্য কারা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন জানা আছে কী আপনার?
১৯৯৩ সালে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’র জন্য সেরা অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, ১৯৯৪ সালে ‘দেশপ্রেমিক’ সিনেমাটির জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান আলমগীর, ১৯৯৫ সালে ‘অন্য জীবন’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান রাইসুল ইসলাম আসাদ, ১৯৯৬ সালে ‘অজান্তে’ সিনেমাটির জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান সোহেল রানা এবং ১৯৯৭ সালে ‘দুখাই’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার জেতেন রাইসুল ইসলাম আসাদ ।
১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৭ টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন সালমান শাহ। মৃত্যুর পর অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পাওয়া নিয়ে তার ভক্তদের মনে দুঃখ থাকলেও অনুরাগীদের হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন তিনি। এর থেকে বড় পুরস্কার হয়ত কোন শিল্পীই আশা করেন না।
১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অভিনেতার ‘তোমাকে চাই’ চলচ্চিত্রের ‘তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই’ গানের একটি লাইন দিয়ে অভিনেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাচ্ছে চিত্রালী,
‘কতো আপন তুমি, জানা নাই.. নাই’ ,
তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই