নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে প্রার্থীতার জন্য প্রাথমিক ভোটারদের ভোটে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। মামদানি একজন রাজনীতিবিদ হলেও বিনোদন জগতেও রয়েছে তার আনাগোনা। কারণ তার পরিবারেই আছেন একজন সিনেমা নির্মাতা। এছাড়াও মামদানী একজন র্যাপার ছিলেন। “মিস্টার কার্ডামম” তার উপাধি। মামদানী তার গানের মাধ্যমে উপনিবেশবাদ, জাতিগত সমস্যা এবং অভিবাসীদের অধিকার আদায় প্রসঙ্গে কথা বলে আসছে অনেক আগে থেকেই। মামদানীর গান তথা র্যাপ তার নিজের রাজনীতি ও ভাবাদর্শেরই অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সিনেমা নির্মাতা মায়ের কাজে প্রভাববিস্তার
মামদানি ভারতীয়-আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের ছেলে। মীরা নায়ার “মিসিসিপি মাসালা”, “সালাম বোম্বে!”, “মনসুন ওয়েডিং”, “দ্য নেমসেক” এবং “ভ্যানিটি ফেয়ার” এর মতো চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন। তবে মামদানি নিজে অভিনয়, র্যাপ গান, সিনেমা ট্র্যাক সং করলেও তার মায়ের নির্মান ক্যারিয়ারেও প্রভাব ফেলেছেন।
২০১৮ সালের জয়পুর সাহিত্য উৎসবে এক সাক্ষাৎকারে, মীরা নায়ার প্রকাশ করেন যে তাকে “হ্যারি পটার” চলচ্চিত্র পরিচালনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তার ছেলে মামদানী যার বয়স তখন ১৪ বছর সে তার মাকে হ্যারি পটার পরিচালনা না করে “দ্য নেমসেক” পরিচালনা করার জন্য তাগিদ দেন। এবং মামদানী তার মাকে ‘হ্যারি পটার’-এর পরিবর্তে ‘দ্য নেমসেক’ পরিচালনা করাতে রাজিও করান।
নায়ারের মতে, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ২০০৪ সালে রিস উইদারস্পুন অভিনীত তার “ভ্যানিটি ফেয়ার” চলচ্চিত্রটি দেখার পর তাকে “হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য অর্ডার অফ দ্য ফিনিক্স” পরিচালনার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তবে, সেই সময়ে তিনি “দ্য নেমসেক” পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন – চিকিৎসাগত অবহেলার কারণে তার শাশুড়ির অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর পর ব্যক্তিগত শোকের উপর ভিত্তি করে তৈরি নির্মিত একটি সিনেমা।
মীরা বলেন যে, যদিও তিনি “দ্য নেমসেক”-এর শুটিং থেকে প্রায় মাসখানেক দূরে ছিলেন, তবুও তিনি ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সাথে সেই সিনেমা নির্মানের জন্য বৈঠকও করেছেন। কিন্তু বাদ সাধে তার ছেলে মামদানী।
মীরা বলেন, মামদানী আমাকে বলেছে, ‘মা, অনেক ভালো ভালো পরিচালক আছে ‘হ্যারি পটার’ বানাতে পারবে, কিন্তু একমাত্র তুমিই ‘দ্য নেমসেক’ বানাতে পারো।”
এমনকি মামদানি তার মা মীরাকে ‘দ্য নেমসেক’-এ গোগল চরিত্রে ক্যাল পেনকে অভিনয়ে নিতেও রাজি করান।
এক্স-এ পোস্ট করা একটি সাক্ষাৎকারে, নায়ার লিখেছেন যে তিনি গোগল চরিত্রের জন্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকাদের খুঁজছিলেন, কিন্তু মামদানি তাকে “হ্যারল্ড অ্যান্ড কুমার গো টু হোয়াইট ক্যাসেল” দেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ২০০৪ সালের স্টোনার কমেডির পোস্টারে যখন তিনি প্রথম পেনকে দেখেন, তখন তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল, “এই বোকা লোকটিকে আমি কীভাবে পছন্দ করতে পারি?”
যাইহোক, ছবিতে পেনের অভিনয় দেখার পর, নীরা পেনের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাকে চরিত্রটি করতে অনুরোধ করেন। সে সময়ে, পেন একজন কৌতুক অভিনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু তার সাথে দেখা করার পর, নায়ার বলেছিলেন যে তিনিই “প্রকৃত চরিত্র” যে কিনা গোগোল চরিত্রকে পরিপুর্ণভাবে চিত্রায়িত করতে পারে”।
মামদানির সুপারিশ সম্পর্কে নায়ার বলেন, “এটি ছিল একটি মূল্যবান ও সুন্দর পরামর্শ। এছাড়াও আমি যখন আমার গল্প, বা আমি কার কথা ভাবছি, বা কে ভালো – বা কে নয় সে সম্পর্কে কথা বলি তখন আমি সর্বদা তার (মামদানীর) কথা শুনি।”
ডিজনির ‘কুইন অফ ক্যাটওয়ে’ তে মামদানী
২০১৬ সালে মীরা নায়ার পরিচালনা করেন ডিজনি ছবি “কুইন অফ ক্যাটওয়ে”। এই ছবিতে মদিনা নালওয়াঙ্গা, ডেভিড ওয়েলোও এবং লুপিতা নিয়ং’ অভিনয় করেন। এই সিনেমার ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে উভয় জায়গাতেই মামদানির উপস্থিতি ছিল।
জীবনীমূলক এই ক্রীড়া নাটকটি উগান্ডার গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী ফিওনা মুতেসির জীবন নিয়ে বানানো। সিনেমাটি ফিওনার দাবা খেলতে শেখা এবং আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বানানো। ছবিটি মূলত টিম ক্রোথার্সের বই “দ্য কুইন অফ কাটওয়ে: আ স্টোরি অফ লাইফ, চেস অ্যান্ড ওয়ান এক্সট্রাঅর্ডিনারি গার্লস ড্রিম অফ বিকমিং আ গ্র্যান্ডমাস্টার”-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি।
এই সিনেমায় মামদানি ছিলেন তৃতীয় সহকারী পরিচালক এবং সঙ্গীত তত্ত্বাবধায়ক হিসেবেও কাজ করেছিলেন এবং “কুইন অফ কাটওয়ে” তে বুকি স্টুডেন্টের ভূমিকায় অভিনয়ও করেন।
এই চলচ্চিত্রের সাউন্ডট্র্যাকের জন্য “#1 স্পাইস” শিরোনামের একটি র্যাপ গানও পরিবেশন করেছিলেন মামদানী। “#1 স্পাইস” এর মিউজিক ভিডিওতে মামদানী এবং উগান্ডার র্যাপার HAB,-এর সাথে মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রের সঙ্গীত তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে, তিনি ২০১৭ সালের গিল্ড অফ মিউজিক সুপারভাইজারস অ্যাওয়ার্ডসের জন্যও মনোনীত হন মামদানী।
মামদানীর অভিনয় জগত অবশ্য তারও আগের। ২০১২ সালে মামদানী তার মায়ের পরিচালিত “দ্য রিলাক্ট্যান্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট” ছবিতে একজন অভিনেতা হিসেবে প্রথম পর্দায় আসেন। যদিও তার সিনেমায় তার ভূমিকা ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য।
মিউজিক ভিডিও
২০১৬ সালে ইয়ং কার্ডামম নামে সাথে তিনি উগান্ডার র্যাপার এইচএবি-এর সাথে “নো গোয়িং ব্যাক টু দ্য ভিলেজ”-এর জন্য সিদ্দা মুকিয়ালো শিরোনামের একটি ইপিতে (এক্সটেন্ডেড প্লে) সহযোগী ছিলেন।
২০১৯ সালে, মামদানী মিস্টার কার্ডামম নামে ইউটিউব চ্যানেলে নিজের পরিচালনায় ও অভিনয়ে “নানি” শিরোনামের একটি একক প্রকাশ করেন। রান্নার বইয়ের লেখক এবং অভিনেত্রী মধুর জাফরি এককটির মিউজিক ভিডিওতে মামদানির দাদীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
শিল্পীকে বিয়ে
মামদানী ২০২৫ সালে সিরিয়ান-আমেরিকান শিল্পী রমা দুওয়াজিকে বিয়ে করেন। দুওয়াজি পৈতৃক নিবাস সিরিয়ায় কিন্তু তার জন্ম আমেরিকার টেক্সাসে। দুওয়াজি একজন চিত্রকর এবং অ্যানিমেটর। স্ত্রীকে নিয়ে ইন্সটাগ্রামে মামদানী লিখেন “রমা শুধু আমার স্ত্রী নন, তিনি একজন অসাধারণ শিল্পী যিনি তার নিজের কাজের মাধ্যমে পরিচিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে।”
মামদানির সাথে দুওয়াজির প্রথম পরিচয় হয় ডেটিং অ্যাপ ‘হিঞ্জ’-এ। রসিকতা করে তাইতো মামদানী লিখেছেন “ডেটিং অ্যাপগুলিতে এখনও আশা আছে।”