ঢাকাই সিনেমার গুণী পরিচালকদের তালিকায় অন্যতম এক নাম- চাষী নজরুল ইসলাম। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্যামেরার পেছনে সক্রিয় থাকার পর লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি। ‘ওরা ১১ জন’ খ্যাত এই পরিচালকের চলে যাওয়ার আজ নয় বছর পূর্ণ হলো।
বাংলার বাঘ খ্যাত রাজনীতিবিদ শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক রেখেছিলেন চাষীর নাম। মূলত তার মামার নামের পদবি থেকে তার নামের শুরুতেও যুক্ত হয় ‘চাষী’ পদবি। মামা চাষী ইমাম উদ্দিনের নাম থেকে ‘চাষী’ এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাম থেকে ‘নজরুল ইসলাম’ মিলিয়ে তার নাম রাখা হয় ‘চাষী নজরুল ইসলাম’। যে নামটি পরবর্তীকালে লেখা হয় বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের পাতায়।
১৯৪১ সালের ২৩শে অক্টোবর মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার সমষপুর গ্রামে জন্ম চাষী নজরুল ইসলামের। বাবা-মায়ের জ্যেষ্ঠপুত্র চাষীর ডাক নাম ছিল- তনু। বাবার চাকরিস্থল জামশেদপুরে শৈশব কাটান তিনি।
চাষীর চলচ্চিত্রের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া ১৯৬১ সালে। খালাতো বোনের স্বামী সৈয়দ মোহাম্মদ আওয়ালের মাধ্যমে চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। একই বছর তিনি কাজ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন খ্যাতিমান পরিচালক ফতেহ লোহানীর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার। তার প্রথম কাজ করা সেই চলচ্চিত্রটির নাম ছিল- ‘আছিয়া’। এর দুই বছর পর ‘দুই দিগন্ত’ সিনেমায় বিখ্যাত সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার ওবায়েদ-উল-হকের সহকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন নন্দিত এই পরিচালক।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র- ‘ওরা ১১ জন’। এরপর আর থেমে থাকেননি তিনি। একে একে তিনি নির্মাণ করেছেন কালজয়ী সব সিনেমা।
‘ওরা ১১জন’ ব্যতীত নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলামের সেরা সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘হাছন রাজা’, ‘সংগ্রাম’, ‘হাঙর নদীর গ্রেনেড’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘দেবদাস’, ‘মেঘের পরে মেঘ’ ইত্যাদি। জীবদ্দশায় তিনি নির্মাণ করেছেন ৩০টি চলচ্চিত্র। তার নির্মিত একেকটি সিনেমা একেকটি শৈল্পিক জাদু!
ইতিহাস নির্ভরতার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে সিনেমা দেখতে আকৃষ্ট করা পরিচালক চাষীর অর্জনের ঝুলিতে আছে একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আন্তর্জাতিক কলাকার পুরস্কার, শের-ই-বাংলা স্মৃতি পুরস্কার, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু স্বর্ণপদক, জহির রায়হান স্বর্ণপদকসহ অসংখ্য পুরস্কার।