২৬ জুন লালন অনুসারী চায়না বেগমের বাড়ি ভা’ঙ’চুর ও হ’ত্যার হু’মকির প্রতিবাদে ও বাংলাদেশের বাউলশিল্পীদের সুরক্ষার দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের অর্ধশতাধিক সংগীতশিল্পী, অভিনয়শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা।
শিল্পীদের দেওয়া বিবৃতি-তে অসহায় চায়না বেগমের উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, ‘বিভিন্ন সময়ে আমরা লক্ষ্য করি যে বাউল, ফকির, সাধকদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া, তাদের ঘরবাড়ি ও বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করা, তাদেরকে বিতাড়িত করা, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা সহ নানান রকমের আগ্রাসন ঘটে। বাউল, ফকির, বয়াতি, লালন অনুসারী এবং স্বভাবকবিদের উপর আগ্রাসন ও নির্যাতন মধ্যযুগে, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসনামলে ছিলো, কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে মানবতাবাদী এই মানুষদের উপর নির্যাতনের বা আগ্রাসনের ঘটনা মোটেও কাম্য নয়। মধ্যযুগে মুসলিম ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বাউল ও ফকিরদের ব্যাপক প্রভাব ছিল। তারা সাধারণত সমাজের প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে থেকে উঠে আসতেন এবং তাদের জীবনযাত্রা ও দর্শনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি, মানবতা ও প্রেমের বার্তা প্রচার করতেন। ব্রিটিশ সরকার তাদের কার্যক্রমকে বিপ্লবী ও বিদ্রোহী হিসাবে দেখত এবং তাদের দমন করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করত। স্বাধীনতার পরেও বাউল ও ফকিরদের উপর নির্যাতনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।’
বিবৃতিদাতারা দাবি করেন, ‘আমরা বাংলাদেশের শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনয় শিল্পী ও সাহিত্যিকরা উক্ত বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা অবগত আছি যে স্থানীয় প্রশাসন লালন অনুসারী চায়না বেগমের ঘটনাটি আমলে নিয়েছেন, কিন্তু এ ধরণের ঘটনা যেন আর কোথাও আর কখনো না ঘটে সেজন্য আমরা রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি।’
এছাড়াও আমাদের দাবি,
- বাউল, ফকির, বয়াতি ও লালন অনুসারীদের নিরাপত্তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ।
- তাদের উপর যে কোনো আক্রমণ বা নির্যাতনের দ্রুত বিচার ও শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করা।
- তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা না দিয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান।
- সাধারণ জনগণের মধ্যে বাউল, ফকির, বয়াতি ও লালন অনুসারীদের সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
বাংলা ফাইভের সংগীতশিল্পী সিনা হাসান কতৃক স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে সম্মতি প্রদান করেছেন কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, জয় শাহরিয়ার, প্রিন্স মাহমুদ, জিয়াউর রহমান, মীর মাসুম, নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, শঙ্খ দাশগুপ্তসহ আরও অর্ধশতাধিক শিল্পীরা।