Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫

আজ বাংলাদেশের বন্ধু জর্জ হ্যারিসনের জন্মদিন

আজ ২৫ শে ফেব্রুয়ারি রকসংগীতের অমর দিকপাল ও বিটলস ব্যান্ডের অন্যতম সং রাইটার ও ভোকাল জর্জ হ্যারিসনের জন্মদিন। এই তিনিই সেই জর্জ হ্যারিসন যার কাছে বাংলাদেশের মানুষ চিরকৃতজ্ঞ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের কথা সারা বিশ্বকে যিনি তার গানের মাধ্যমে জানিয়েছেন; স্মরণার্থীদের আর্থিক সাহায্যের জন্য আয়োজন করেছেন কনসার্ট। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ আগষ্ট বাংলাদেশে যখন পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাগুলি চলছিল, ঠিক সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে বেজে উঠেছিল হ্যারিসনের গিটার। ‘‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ তিনি গেয়ে উঠেছিলেন ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ, সাচ আ ডিজাস্টার আই ডোন্ট আন্ডাস্ট্যান্ড, বাট ইট শোর লুকস লাইক আ মেস, আভ নেভার নোন সাচ ডিসট্রেস’।

বিটলস ব্যান্ডের জর্জ হ্যারিসন | ছবি: ফেসবুক

জর্জ হ্যারিসন (১৯৪৩-২০০১) তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ আই মি মাইন (১৯৮০)-এ একাত্তরের সেই মহান উদ্যোগ ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ নিয়ে লিখেছেন, কনসার্টের চেয়ে চলমান যুদ্ধের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বিশেষভাবে লেখা হয়েছিল বিখ্যাত গান ‘বাংলাদেশ’। আর সেই কনসার্টের টিকিট, সিডি ও ডিভিডি বিক্রি করে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার বাংলাদেশের স্মরণার্থীদের জন্য ইউনিসেফের তহবিলে পাঠিয়েছিলেন হ্যারিসনরা। এই কনসার্টে আরও ছিলেন নোবেল জয়ী সংগীতশিল্পী ও গানের কবি বব ডিলান, স্বর্গ থেকে দুনিয়ায় নেমে আসা এরিক ক্ল্যাপটন, মদিরার মতো কণ্ঠের বিলি প্রেস্টন, গ্রিকদেবী আফ্রোদিতির মতো লাবন্যময় আর মমতায় অতুলনীয় নারীশিল্পী জোয়ান বায়েজ ও মরমে ভরা সুরের    ওস্তাদ আলী আকবর খান।

বলছি রকসঙ্গীতজ্ঞ জর্জ হ্যারিসনের কথা যিনি ১৯৪৩ সালে যুক্তরাজ্যের লিভারপুলের একটি খেটে খাওয়া পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই । চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। বাবা শুরুতে ছিলেন একজন স্টুয়ার্ড, পরে বাসের কন্ডাক্টর। মা কাজ করতেন একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ক্লার্ক হিসেবে। অনেক কস্টের টাকায় অনেক বায়নার পরে যিনি ৩ পাউন্ড দিয়ে একটি গিটার কিনে দিয়েছিলেন হ্যারিসনকে। তারপরেই হ্যারিসনের গানের পথচলা শুরু। তারপর  Liverpool Institute for Boys এ (বর্তমানে যার নাম Liverpool Institute for Performing Arts) থাকাকালীন সময়ে স্কিফ (skiffle) নামক একটি গানের দল তৈরি করেন জর্জ। এই দলের সাথে ছিলেন তার বড় ভাই পিটার এবং তার বন্ধু আর্থার কেলি।

পন্ডিত রবিসংকরের সাথে জর্জ হ্যারিসন | ছবি: ফেসবুক

একদিন স্কুল বাসে জর্জের সাথে পরিচয় ঘটে তার আট মাসের বড় পল ম্যাককার্টেনি (Paul McCartney)-এর সাথে। এই পল ম্যাককার্টেনি এবং জন লেনন (John Lennon) মিলে তৈরি করেছিলেন ‘দ্যা কোয়ারিমেন্’ (the Quarrymen) নামক একটি ব্যান্ড।

মাধ্যমিক স্কুলে পড়াকালে যেহেতু গিটার আর গানের সাথে হ্যারিসনের বেশ যোগাযোগ তাই পল তাকে কোয়ারিম্যান ব্যান্ডে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। তখনো বিটলস হয়নি। সেই কোয়ারীম্যান থেকে বেশ কয়েকবার ভাঙাগড়া আর লাইনআপ বদলের পর ব্যান্ডটার নাম হলো বিটলস আর দলের প্রধান গিটারিস্ট হিসেবে সামনে এলেন জর্জ হ্যারিসন। সেই দলে জন লেনন বাজাতেন রিদম গিটার আর গাইতেন গান। পলও গাইতেন, সঙ্গে বাজাতেন বেজ গিটার। রিঙ্গো স্টার ছিলেন দলের ড্রামার। এই নিয়ে বিটলস, পৃথিবীর শিরা-উপশিরা নাড়িয়ে দেওয়া চিরঅমলিন রক ব্যান্ড।

জর্জ হ্যারিসন ছিল বিটলস ব্যান্ডের সবচেয়ে স্বল্পভাষী সদস্য। তবে তার ছিলো মোহনীয় আঙুল যেগুলো খেলা করত গিটারের ছয় তার আর ফ্রেডবোর্ডজুড়ে। সেই জাদুকরি হাতে হ্যারিসন লিখেছিলেন চিরবিখ্যাত ‘‘ইফ আই নিডেড সামওয়ান’, ‘‘হোয়াইল মাই গিটার জেন্টলি উইপস’ , ‘’‘উইদিন ইউ উইদাউট ইউ’-এর মতো গানগুলো।  

 সময় গড়িয়ে যখন ১৯৬৬ সাল তখন লণ্ডনে ভারতীয় এক সেতারবাদকের সাথে হ্যারিসনের পরিচয় ঘটে। লোকটি পণ্ডিত রবি শঙ্কর। এর কিছুদিন পর, হ্যারিসন ভারতে আসেন এবং শ্রীনগরে রবি শঙ্করের কাছে ছয় সপ্তাহ সেতারের তালিম নেন।

দ্য বিটলস ব্যান্ড

১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারি বিটসলের সাথে হ্যারিসনের বিচ্ছেদ ঘটে। অবশ্য এই সময়ের ভিতর হ্যারিসনের Wonderwall Music এবং Electronic Sound. নামক দুটি একক এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছিল। এর ভিতরে Wonderwall Music এ্যালবামে, পণ্ডিত রবি শঙ্কর-এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সাথে ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের মিশ্রণ ঘটান তিনি। বিটসলের বাইরে এসে তার তিনটি এ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এই এ্যালবামের গানগুলোকে হ্যারিসনের শ্রেষ্ঠ কাজের নিদর্শন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই এ্যালবামগুলোর ভিতরে “My Sweet Lord”, “What Is Life”, “Wall of Sound” গানগুলো অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করে।

এরপর সময় গড়াতে থাকে ১৯৭১ এ মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ। পন্ডিত রবিসংকরের উৎসাহে বাংলাদেশের সংগীতযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন আর সাথী হন বাংলাদেশের নিপীড়িতের মানুষের, পর পর দুটি কনসার্টে প্রায় ৪০,০০০ দর্শকের সামনে যুদ্ধের বিপরীতে শান্তি, পরাধীনতার বিপরীতে স্বাধীনতার পক্ষে থেকে হাতে তুলে নেন গিটার। গাইতে থাকেন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ। কে জানে!! জর্জ বেঁচে থাকলে হয়তো গিটার হাতে আবারো দাঁড়িয়ে যেতো আহত, নিপীড়িত প্যালেস্টিনিয়ানদের পাশেও। কারণ শিল্পী শান্তির প্রতীক, প্রেমগ্রাহী, মমতাই তার সুর, মানুষই তার আত্মা।

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেল ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা;ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’

দর্শকদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। এ বছর মুক্তি পাওয়া ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’ সিরিজের নতুন সিনেমা…
0
Share