জুবিন গার্গের মৃত্যু: আসামে পুলিশের গুলিতে উত্তেজনা ও জনবিক্ষোভ
আসামের জনপ্রিয় শিল্পী জুবিন গার্গ গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে মারা যান। জুবিন গার্গের মৃত্যু তে আসামে নেমে আসে শোকের ছায়া। শোকের মাঝেই জুবিনের মৃত্যু ঘিরে উঠে নানা গুঞ্জন। অনেকেই সন্দেহ করেছে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এর পর থেকেই বিচারের দাবি উঠে ভক্তদের মাঝে। তবে গতকাল বুধবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সেটা এতটাই যে পুলিশকে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়তে হয়।
গতকাল জুবিন গার্গের মৃত্যুর মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জেলা কারাগারে আনা হয়। এরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গাড়ি জেলের ফটকে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ভক্তরা বিক্ষোভ শুরু করেন। মুহূর্তেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভক্তরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বহনকারী গাড়িতে পাথর নিক্ষেপ শুরু করেন। এতে বেশ কয়েকটি গাড়ি, এমনকি একটি পুলিশ ভ্যানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জুবিন গার্গের হত্যাকান্ডে ৫ জন গ্রেপ্তার
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন সংগঠক শ্যামকানু মহন্ত, গায়কের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, চাচাতো ভাই ও বরখাস্ত এপিএস কর্মকর্তা সন্দীপন গার্গ এবং দুই নিরাপত্তাকর্মী; যাদের মধ্যে একজনের নাম নন্দেশ্বর বরা। এদিন বিকেলেই বিচারক তাদের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বহনকারী গাড়িবহর জেল চত্বরে ঢোকার সময় ‘জাস্টিস ফর জুবিন’ স্লোগান দিতে দিতে শত শত ভক্ত ভিড় জমান। হঠাৎই বিক্ষোভকারীরা সহিংস হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে পুলিশ আকাশে গুলি ছুড়ে ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে ভিড় ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।
এর মধ্যে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে প্রশাসন। জেলার বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে উত্তেজনা এখনো বিরাজ করছে।’
জুবিন গার্গ ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। পরের দিনই তার নর্থ ইস্ট ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করার কথা ছিল।
সূত্র জানায়, সেদিন স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় জুবিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে কাছের হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। আকস্মিক এই মৃত্যুতে আসাম ও সমগ্র ভারতের সংগীতজগতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
হত্যাকাণ্ডের ইঙ্গিত
প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, এটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু। কিন্তু পরে তার স্ত্রী গরিমা গার্গ এবং অনেক ভক্ত দাবি করেন, এতে ‘অস্বাভাবিক কিছু’ ঘটেছে, যা হত্যাকাণ্ডের ইঙ্গিত দেয়।
এ অভিযোগের পরই আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেন। তদন্তে এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম—সংগঠক শ্যামকানু মহন্ত ও গায়কের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা।
গতকালের সংঘর্ষের পর মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা কঠোর ভাষায় সহিংসতার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘কিছু রাজনৈতিক মহল জুবিন গার্গের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছে এবং ভক্তদের উসকে দিচ্ছে।’
সাধারণ মানুষকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তদন্তকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিন। যারা সহিংসতা উসকে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আসামের সংগীতপ্রেমীরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না, প্রিয় শিল্পী জুবিন গার্গ আর নেই। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে চলছে শোক ও ক্ষোভ। ভক্তরা নানা স্থানে মোমবাতি মিছিল ও নীরব প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ‘ন্যায় চাই, সত্য প্রকাশ হোক’ এমন দাবি জানিয়েছেন।