নেপাল সরকার পতন: আলোচনায় বলিউড তারকা
বলিউডের একসময়ের শীর্ষ অভিনেত্রী মালা সিনহা। ২০ বছর রাজত্বের সাথে সবমিলিয়ে ৪০ বছর কাজ করেছেন এই অভিনেত্রী। গুরু দত্ত, অশোক কুমার, দিলীপ কুমার, রাজকুমার, মনোজ কুমার, রাজেশ খান্না থেকে অমিতাভ বচ্চনের মতো বড় শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। উপহার দিয়েছেন অনেক সুপারহিট ছবি। তবে এবার তিনি আলোচনায় ভিন্ন প্রসঙ্গে। নেপাল সরকার পতন এর সাথে উঠে এলো বলিউড অভিনেত্রীর নাম ও একটি ঘটনা।
১৯৭৮ সালের একটি ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ক্যারিয়ারে তখন সোনালি সময় পার করছেন মালা। একদিন তার বাথরুম থেকে উদ্ধার হলো ১২ লাখ টাকা! সেই সময়ে এই টাকা ছিল অনেক মুল্যবান। উদ্ধার হওয়া টাকার সঠিক হিসাব দিতে পারেননি অভিনেত্রী। এই ঘটনা বিনোদন দুনিয়ায় হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। যার রেশ পৌঁছেছিল আদালত চত্বরে।
সেই সময় খবরে এসেছিল, মালা সিনহা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলে উঠেছিলেন, ‘সব টাকা দেহব্যবসা করে কামিয়েছি!’ শোনা যায়, মালা সিনহাকে তার বাবা ও আইনজীবী পতিতাবৃত্তির এই মিথ্যা গল্প বলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। মালা সিনহাও নাকি তার বাবা ও আইনজীবীর পরামর্শ মেনে চলেন। মালা আদালতে জানিয়েছেন যে তিনি এই টাকা পতিতাবৃত্তির মাধ্যমে অর্জন করেছিলেন। ভেবেছিলেন এটা বললেই হয়তো বেঁচে যাবেন তিনি। তবে শেষরক্ষা হয়নি। মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা দিতে হয়েছিল তাকে।
তবে সেই মালা সিনহা সম্প্রতি আবারও আলোচনায় উঠে এসেছেন নেপালের সরকার পতনের পর। নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হতেই আবারও আলোচনায় বলিউডের এই প্রয়াত অভিনেত্রী।
ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্যমতে
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে নেপালে চলমান রাজনৈতিক সংকটের আপাতসমাধান হলো বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সুশীলা কার্কি প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় নতুন করে আবার উঠেছে মালা সিনহা প্রসঙ্গ। কারণ, অনেক বছর আগে সুশীলার স্বামী দুর্গা প্রসাদ সুবেদি মালা সিনহাকে বহন করা একটি বিমান ছিনতাই করেছিলেন!
ঘটনাটি ১৯৭৩ সালের ১০ জুনের। বিরাটনগর থেকে কাঠমান্ডুর পথে উড়াল দিয়েছিল রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইনসের ১৯ আসনের টুইন অটার বিমান। বিমানে যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন বলিউড তারকা মালা সিনহা ও তার স্বামী নেপালি অভিনেতা সি পি লোহানি। বিমানের ককপিট দখল করেন নেপালি কংগ্রেসের তিন তরুণ কর্মী—দুর্গা প্রসাদ সুবেদি, নাগেন্দ্র ধুঙ্গেল ও বসন্ত ভট্টরাই। পুরো পরিকল্পনার নেপথ্যে ছিলেন গিরিজা প্রসাদ কৈরালা, যিনি পরে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তখন সদ্য জেল থেকে ছাড়া পাওয়া সুবেদি ছিলেন কৈরালার ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
৩০ লাখ রুপি
এই ছিনতাইয়ের মূল লক্ষ্য ছিল রাজতন্ত্রবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য অর্থ জোগাড় করা। বিমানে সরকারের ৩০ লাখ রুপি বহন করা হচ্ছিল। ক্রুর সঙ্গে অল্প সময়ের টানাপড়েন শেষে ছিনতাইকারীরা বিমানের পাইলটকে বাধ্য করেন ভারতের বিহারের ফরবিশগঞ্জে ঘাসের মাঠে নামাতে। সেখানে আগেই অপেক্ষা করছিলেন আরো পাঁচ সহযোগী, তাদের মধ্যে ছিলেন পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়া সুশীল কৈরালা। ছিনতাইকারীরা বিমানের ভেতর থেকে নগদ টাকাভর্তি তিনটি বাক্স নামিয়ে নেন। এরপর অন্য যাত্রীদের নিয়ে বিমানটি আবার উড্ডয়ন করে। টাকা ট্রাকে করে দার্জিলিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
সুশীলা ভারতে পড়াশোনার সময়ই বারানসির বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএইচইউ) দুর্গা সুবেদির সঙ্গে পরিচিত হন। সুবেদির সেই অতীত এখন আবার আলোচনায়।
এই ঘটনার কয়েকদিন পরেই সুবেদী এবং তার সহযোগীদের মুম্বাইতে গ্রেপ্তার করা হয় এবং দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, কিন্তু ১৯৭৫ সালে ভারতে জরুরি অবস্থা জারির সময় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।