নতুন কমেডি সিরিজে মিস্টার বিন
নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশনের পর্দায় এক অদ্ভুত নীরব মানুষ হাজির হয়েছিলেন, যিনি কথা না বলেই হাসাতে জানতেন পুরো বিশ্বকে। সেই চরিত্রের নাম ‘মিস্টার বিন’। তার আসল নাম রোয়ান অ্যাটকিনসন। কিন্তু তার আসল নামটাই এখন সবচেয়ে অপরিচিত। সম্প্রতি এই অভিনেতার একটি কমেডি সিরিজ প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে দেখা যায় কমেডি বাচ্চা নিয়ে বিপাকে আছেন মিস্টার বিন ।

রোয়ান অ্যাটকিনসন ফিরেছেন নতুন কমেডি সিরিজ ‘ম্যান ভার্সেস বেবি’ নিয়ে। সিরিজটি গত বৃহস্পতিবার রাতে মুক্তি পেয়েছে জনপ্রিয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে। এটি ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ম্যান ভার্সেস বি’ সিরিজের পরবর্তী অধ্যায়। আগের মতোই এখানে অ্যাটকিনসনকে দেখা যাচ্ছে ট্রেভর বিংলি চরিত্রে একজন দুর্ভাগা, কিছুটা অদক্ষ, কিন্তু অদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলার ক্ষেত্রে সিদ্ধহস্ত মানুষ।
বাচ্চা নিয়ে বিপাকে মিস্টার বিন
নতুন সিরিজে আগের তুলনায় কিছুটা বদলে গেছে ট্রেভর বিংলির জীবন। এবার সে আর শুধু নিরাপত্তাকর্মী নয়, বরং কাজ করছে একটি স্কুলের কেয়ারটেকার হিসেবে। জীবন কিছুটা স্থিতিশীল বলেই মনে হয়। কিন্তু বড়দিনের সময় একটি বিলাসবহুল পেন্টহাউসের দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়তেই আবারও শুরু হয় বিপত্তি। স্কুলের বড়দিনের অনুষ্ঠানের শেষে যখন কেউ ‘বেবি জিসাস’এর প্রতিকৃতি নিতে আসে না, তখন সেই শিশুর দায়িত্ব এসে পড়ে বিংলির ওপর। ছুটির দিনগুলোয় এই অপ্রত্যাশিত অতিথিই হয়ে ওঠে তার সঙ্গী এবং নতুন সব ঝামেলার উৎস।

সিরিজটি মুক্তির আগে ‘মিস্টার বিন’ ভক্তদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ তৈরি হলেও সমালোচকদের কাছ থেকে খুব বেশি প্রশংসা পায়নি। বেশির ভাগ সমালোচক এটিকে গড়পড়তা বলেই মূল্যায়ন করেছেন। তবু ট্রেভর বিংলি চরিত্রটির সঙ্গে মিস্টার বিনের মিল চোখে পড়ার মতো। দুজনই সামান্য সমস্যাকে এমন মাত্রায় নিয়ে যান, যা শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা। যেমন ‘ম্যান ভার্সেস বি’ সিরিজে একটি মৌমাছিকে তাড়াতে গিয়ে বিংলি শেষ পর্যন্ত ভুয়া বিস্ফোরকভর্তি মৌচাক বানিয়ে ফেলেছিল। এই অতিরঞ্জিত প্রতিক্রিয়াই তাকে মিস্টার বিনের সঙ্গে একই সারিতে দাঁড় করায়।
তবে চরিত্র দুটির মধ্যে মৌলিক পার্থক্যও রয়েছে। মিস্টার বিন প্রায় কথাহীন, সামাজিক আচরণে বেখাপ্পা এবং যেন বাস্তব পৃথিবীর সঙ্গে তার সম্পর্কই নেই। বিপরীতে ট্রেভর বিংলি কথা বলতে পারে, সামাজিক শিষ্টাচার বোঝে এবং তার একটি স্পষ্ট অতীত আছে। গল্পে জানা যায়, তার এক কিশোরী মেয়ে রয়েছে, যাকে সে আদর করে ‘সুইটপি’ বলে ডাকে। অন্যদিকে মিস্টার বিনকে বহু দর্শকই মনে করেন যেন ভিনগ্রহ থেকে আগত। অবশ্য নব্বইয়ের দশকের সিরিজের কিছু পর্ব তো শুরুই হতো আকাশ থেকে আলোয় তাকে নামতে দেখিয়ে।
এই সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য মিলিয়েই ট্রেভর বিংলি চরিত্রটি আসলে রোয়ান অ্যাটকিনসন ও লেখক উইল ডেভিসের যৌথ সৃষ্ট এক আধুনিক ‘মিস্টার বিন’। স্ট্রিমিং যুগের দর্শকের কথা মাথায় রেখে বিলাসবহুল জীবনের পটভূমিতে নির্মিত এই সিরিজটি এমন এক ধাঁচের স্ল্যাপস্টিক কমেডি উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়।

মিস্টার বিন চরিত্র নিয়ে রোয়ান অ্যাটকিনসনের মন্তব্য
এরই মধ্যে লন্ডনে ‘ম্যান ভার্সেস বেবি’র বিশেষ প্রদর্শনীতে হাজির হয়ে রোয়ান অ্যাটকিনসন খোলামেলা মন্তব্য করেছেন তার কিংবদন্তি চরিত্র ‘মিস্টার বিন’ নিয়ে। অভিনেতার ভাষায়, একজন মানুষ হিসেবে তিনি মিস্টার বিনকে পছন্দ করেন না। অ্যাটকিনসন বলেন, চরিত্রটি ‘স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক ও নৈরাজ্যবাদী’। তার কথায়, “আমি নিশ্চিতভাবেই মিস্টার বিনের সঙ্গে কোনো দিন ডিনারে বসতে চাইব না।”
তবে একই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, একজন চরিত্র হিসেবে বিন তার কাছে আকর্ষণীয়, কারণ চরিত্রটির মধ্যে রয়েছে শিশুসুলভ স্বার্থপরতা ও অদ্ভুতভাবে সমস্যা সমাধানের প্রবণতা যা অনেকটা তার নিজের দশ বছর বয়সী সত্তার মতো।