Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১১, ২০২৫

এক চড়েই শেষ হয়ে যায় ললিতার ক্যারিয়ার   

এক চড়েই শেষ হয়ে যায় ললিতার ক্যারিয়ার
এক চড়েই শেষ হয়ে যায় ললিতার ক্যারিয়ার

ললিতা পাওয়ারের দুর্ভাগা জীবন

ভারতীয় চলচ্চিত্রে চরিত্রাভিনয়ের শক্তিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা যে শিল্পীদের হাতে সম্ভব হয়েছিল, তাদের মধ্যে ললিতা পাওয়ার অন্যতম উজ্জ্বল নাম। হিন্দি সিনেমায় ‘খলনায়িকা’ চরিত্রের রূপকার হিসেবেও পরিচিত তিনি। তিনি এমন এক অভিনেত্রী, যার প্রতিটি চরিত্র পর্দায় জীবন্ত হয়ে উঠত গভীর অভিনয়, স্বর, দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বকীয় উপস্থিতিতে। কিন্তু পর্দার সাফল্যের আড়ালে তাঁর ব্যক্তিজীবন ছিল বেদনাময়, ঝড়ঝাপটায় ভরা এবং সংগ্রামে পরিপূর্ণ। শুটিংয়ের সময়কালীন এক চড়েই শেষ হয়ে যায় ললিতার ক্যারিয়ার । এমনকি তার দেহাবসানও হয় প্রচন্ড নিঃসঙ্গতায়।  

১৯১৬ সালে মহারাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া ললিতা পাওয়ার খুব অল্প বয়সেই চলচ্চিত্রে পথচলা শুরু করেন। নির্বাক যুগের শেষভাগ ও টকিজের শুরুতেই নায়িকা হিসেবে তার সাফল্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু ক্যারিয়ারের শীর্ষে উঠতেই ১৯৪২ সালে ঘটে এক ভয়াবহ ঘটনা, যা তার পুরো জীবন ও অভিনয়ের ধরণ বদলে দেয়।

যেভাবে এক চড়েই শেষ হয়ে যায় ললিতার ক্যারিয়ার

বিখ্যাত অভিনেতা পরিচালক ভগবান দাদার সঙ্গে একটি ছবির শুটিং চলাকালে দৃশ্য অনুযায়ী গালে চড় মারার অভিনয় ছিল। কিন্তু সে দিন ভুলক্রমে নয়, সত্যি সত্যিই জোরে চড় পড়ে ললিতার গালে। আঘাত এতটাই তীব্র ছিল যে তিনি ঘটনাস্থলেই অজ্ঞান হয়ে যান। তার মুখের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চোখের শিরা ফেটে যায়, এবং মুখ স্থায়ীভাবে বেঁকে যায়। সেই সঙ্গে শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি চোখের সমস্যা। এর প্রভাবে তিনি দুই বছর সম্পূর্ণ কাজহীন হয়ে পড়েন এবং বহু ছবির সুযোগ হারান।

তবে এখানেই থেমে যাননি ললিতা। নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন ছিন্ন হলেও অভিনয়ের প্রতি অটল ভালোবাসা তাকে ফিরিয়ে আনে পর্দায়। স্বাস্থ্যের উন্নতি হলে তিনি ছোট চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। ভূমিকা যত ক্ষুদ্রই হোক, অভিনয়ের দাপটে দর্শকের চোখে পড়তেন প্রতিবার।

রাজকাপুরের ‘শ্রী ৪২০’ ছবিতে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে তিনি আবার আলোচনার কেন্দ্রে আসেন। পরে টেলিভিশনের ঐতিহাসিক ধারাবাহিক ‘রামায়ণ’এ মন্থরা চরিত্রে তার অভিনয় তাঁকে নতুন প্রজন্মের কাছেও চিরস্মরণীয় করে তোলে।

ব্যক্তিজীবনেও দুঃখ তার পিছু ছাড়েনি। ১৯৩০ এর দশকে চলচ্চিত্র প্রযোজক গণপত্রাও পাওয়ারকে বিয়ে করেছিলেন। কয়েক বছরের মাথায় জানতে পারেন স্বামী তার বোনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। সবকিছু ভেঙে গেলেও নিজেকে শক্ত করে বিয়েটি ভেঙে বেরিয়ে আসেন তিনি। পরবর্তীতে প্রযোজক রাজপ্রকাশ গুপ্তকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে জন্ম নেয় একমাত্র সন্তান জয়।

ললিতার ফিরে আসা

আশির দশকে ‘রামায়ণ’ এর সাফল্য তার ক্যারিয়ারে নতুন আলো ফেলে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে মুখে ক্যানসার ধরা পড়লে তিনি চিকিৎসার জন্য পরিবারসহ পুনেতে চলে যান। ১৯৯৮ সালে, ৮২ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার জীবনের শেষ অধ্যায় ছিল আরও নিঃসঙ্গতায় ভরা। মৃত্যুর সময় স্বামী ও ছেলে কেউই শহরে ছিলেন না। দুই দিন পর তার ছেলে অন্য এক ব্যক্তিকে পাঠান খোঁজ নেয়ার জন্য। সেই পরিচিতজন গিয়ে তার নিথর দেহ খুঁজে পান।

তার মৃত্যু এক লড়াকু মানুষের দেহাবসান ঘটালেও তার প্রেরণা আজও অনুপ্রাণিত করে নতুন প্রজন্মের তারকাদের। ললিতা পাওয়ার প্রমাণ করে গেছেন একজন শিল্পীর আসল শক্তি চরিত্রের ভেতরে লুকিয়ে থাকে। সৌন্দর্য বা নায়িকা ইমেজ নয়, অভিনয়ের গভীরতাই একজন অভিনেত্রীকে ইতিহাসে অমর করে তোলে।   

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

স্মরণে সুরের ভুবনের নীরব জাদুকর আবু জাফর

গীতিকার ও সুরকার আবু জাফরের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী অকালে চলে যাননি আবু জাফর। অনেকদিনই বেঁচে ছিলেন এই দেশে। আমাদের…
স্মরণে সুরের ভুবনের নীরব জাদুকর আবু জাফর

শাকিরার সঙ্গে মঞ্চে গাইলেন তার দুই ছেলে

মঞ্চে দুই ছেলেদের সঙ্গে আবেগঘন শাকিরা প্রথমবার দুই ছেলেকে নিয়ে মঞ্চ মাতালেন কলম্বিয়ান পপ সংগীতশিল্পী ও মডেল…
শাকিরার সঙ্গে গাইলেন দুই ছেলে

গোবিন্দ ও তার স্ত্রী দ্বিতীয় সন্তান হারানোর বেদনা প্রকাশ্যে আনলেন

দ্বিতীয় সন্তান হারানোর বেদনা বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা গোবিন্দ ও তার স্ত্রী সুনীতা আহুজার দাম্পত্য জীবন ও…
দ্বিতীয় সন্তান হারানোর বেদনা প্রকাশ্যে আনলেন গোবিন্দ ও তার স্ত্রী
0
Share