শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১১১তম জন্মবার্ষিকী
আজ ২৯ ডিসেম্বর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১১১তম জন্মবার্ষিকী। এ বছর তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করে আনা হয়েছে। এবার জয়নুলের ১১১তম জন্মবার্ষিকীতে থাকছে না মেলা-সম্মাননা কোন কিছুই।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মদিনকে ঘিরে অন্যান্য বছর তিন দিনের আয়োজন থাকে। বিপরীতে এবার এক দিনই উদযাপিত হবে দেশের আধুনিক শিল্পকলার পথিকৃৎ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান।

জয়নুলের ১১১তম জন্মবার্ষিকী: কেন থাকছে না মেলা-সম্মাননা ?
‘জয়নুল মেলা’ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে চারুকলার ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম শেখ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কিছু দিন বন্ধ ছিল, আর জয়নুল মেলায় তো আমাদের সব বিভাগের ছেলেমেয়েরা নানা শিল্পকর্ম তৈরি করে অংশগ্রহণ করে। “বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে এবার প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে, জয়নুল মেলা এবার না করার।”
এবার ‘জয়নুল সম্মাননা’ও দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন চারুকলার ডিন। জয়নুলের জন্মবার্ষিকীর আয়োজন এবার ‘সংকুচিত’ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এমনিতে তো তিন দিনের আয়োজন হয়। এবার এক দিনের আয়োজন হচ্ছে। আয়োজনের পরিসর কিছুটা তো ছোট হয়েছে।”

চারুকলার একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “শুরুতে জয়নুল মেলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ‘রাজনৈতিক অস্থিরতায়’ এবার মেলা না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
দেশে ২০০৯ সাল থেকে ‘জয়নুল মেলা’ অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে। আজ সোমবার দিনব্যাপী ‘জয়নুল জন্মবার্ষিকী ২০২৫’ এর অনুষ্ঠান আয়োজন পালিত হচ্ছে। সকাল ১০টায় শিল্পাচার্যের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে এবং সকাল ১১টায় অনুষদের শিক্ষকদের শিল্পকর্ম নিয়ে থাকছে প্রদর্শনী। বেলা ১২টায় হয়েছে স্মারক বক্তৃতা।
‘জয়নুল মেলা’ উপলক্ষে বিগত বছরগুলোয় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকশিল্পীরা নানা লোকজ পণ্য নিয়ে পসরা বসাতেন। বায়োস্কোপসহ নানা আয়োজন নাগরিক জীবনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করত সেসকল লোকজ শিল্পীরা। এবার দেখা যাবে না মাটির টেপা পুতুল, শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি, সরাচিত্র, শোলার তৈরি ফুল, পাখি, নকশি কাঁথা চারুকলার আঙিনায়।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কর্মজীবন
বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন এই কিংবদন্তী শিল্পী। তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা, গুন টানা, মই টানা, ম্যাডোনা ৪৩, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক, বিদ্রোহী ইত্যাদি। ১৯৭০ সালে গ্রামবাংলার উৎসব নিয়ে তিনি আঁকেন ৬৫ ফুট দীর্ঘ বিখ্যাত ছবি ‘নবান্ন’।
এছাড়াও তার বিখ্যাত চিত্রকর্মের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘দ্য রেবেল ক্রো’ (জলরং, ১৯৫১), ‘দুই মহিলা’ (গোয়াশ, ১৯৫৩), ‘পাইন্যার মা’ (গোয়াশ, ১৯৫৩) এবং ‘মহিলা’ (জলরং, ১৯৫৩), ৬৫ ফুট দীর্ঘ স্ক্রল পেইন্টিং (চাইনিজ ইঙ্ক, জলরঙ ও মোম) ‘নবান্ন’, ৩০ ফুট দীর্ঘ ‘মনপুরা’ ইত্যাদি।

শিল্পকলায় অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন শিল্পাচার্য খেতাব। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন তাঁর চিত্রশিল্পে গ্রাম বাংলার রূপ, কৃষক, কৃষকের স্বপ্ন, সংগ্রাম তুলে ধরেছেন। এছাড়াও তাঁর ছবিতে আছে প্রতিবাদ, অধিকার-সাম্য-স্বাধীনতার কথাও।
তিনি তার নেতৃত্ব ও মেধা দিয়ে বাংলাদেশে আধুনিক শিল্পকলার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি ১৯৪৮ সালে ঢাকায় ‘ইনস্টিটিউট অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফ্টস’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমানে যেটিকে আমরা ‘চারুকলা ইনস্টিটিউট’ হিসেবে জানি।এছাড়াও যুদ্ধের পর ১৯৭৫ সালে জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁও-এ একটি লোকশিল্প জাদুঘর এবং ময়মনসিংহে একটি গ্যালারি (শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা) প্রতিষ্ঠা করেন।
এই মহান শিল্পী ফুসফুসে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৭৬ সালের ২৮ মে পরলোকগমন করেন।