রক্ত, স্মৃতি আর মানুষের গল্পে বলা কিছু সিনেমা
১৬ ডিসেম্বর। এই দিনটি আমাদের কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক দিবস নয়। এটি সেই সকাল, যেদিন একটি বিধ্বস্ত জাতি প্রথমবারের মতো মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিয়েছিল। নয় মাস ধরে জমে থাকা কান্না, ভয় আর অপেক্ষা মিলেমিশে রূপ নিয়েছিল একটিমাত্র শব্দে, বিজয়। এই বিজয়ের পেছনে ছিল মানুষ, সাধারণ মানুষ। আর সেই মানুষদের গল্পই সময়ের পর সময় ধরে ফিরে এসেছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে। বিজয়ের পর্দায় মুক্তিযুদ্ধ , ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে সাধারণ মানুষের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও আবেগের ইতিহাস।
যখন ক্যামেরা হয়ে ওঠে সাক্ষী
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত সিনেমাগুলো কেবল ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ নয়। এগুলো যুদ্ধের ভয়, নিঃসঙ্গতা, ভালোবাসা আর টিকে থাকার সংগ্রামের দলিল।
একটি ক্লোজ শটে কাঁপতে থাকা চোখ,
১ টি নিঃশব্দ দৃশ্যে শূন্য ঘর,
একটি শেষ দৃশ্যে উড়তে থাকা পতাকা
এই সবকিছু মিলেই চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ।
ওরা এগারো জন – প্রথমবার পর্দায় যুদ্ধের সাহস
(১৯৭২ | পরিচালক: চাষী নজরুল ইসলাম)
স্বাধীনতার ঠিক পরের বাংলাদেশ, ধ্বংস, শোক আর তাজা স্মৃতির ভারে নুয়ে পড়া এক দেশ। ঠিক সেই সময়েই নির্মিত হয় ‘ওরা ১১ জন’। চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি শুধু বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি নয়, বরং সদ্য স্বাধীন একটি জাতির সাহসী আত্মপ্রকাশ।
এই ছবির শক্তি এর বাস্তবতায়। কারণ এখানে অভিনয় করেছেন প্রকৃত ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা, যারা কোনো চরিত্র নয়, নিজেদের যুদ্ধের অভিজ্ঞতাই তুলে ধরেছেন পর্দায়। বিজয়ের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই যার নির্মাণ শুরু হয় , সেই দুঃসাহসী প্রয়াস ছবিটিকে করে তোলে আরও বিশ্বাসযোগ্য।

নামটিও প্রতীকী, এটি শুধু ১১ জন যোদ্ধার গল্প নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের সময়কার জনগণের ঐক্য, ত্যাগ আর সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। ১৯৭২ সালের ১১ আগস্টে মুক্তি পাওয়া এই ছবি বিনোদনের চেয়ে বেশি ছিল স্মৃতির পুনর্গঠন, যেখানে যুদ্ধকে রোমান্টিক নয়, মানবিক বাস্তবতায় দেখানো হয়েছে।
সংক্ষেপে, ‘ওরা ১১ জন’ একটি চলচ্চিত্রের চেয়েও বেশি, এটি একটি সময়ের দলিল এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাংলা সিনেমার সাহসী সূচনা।
অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী – যুদ্ধের ভেতরে মানুষের গল্প
(১৯৭২ |পরিচালক: সুভাষ দত্ত)
মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র মানেই বন্দুক, যুদ্ধক্ষেত্র আর বিজয়ের দৃশ্য, এই ধারণা ভেঙে দিয়েছিল ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’। ১৯৭২ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত এই ছবি যুদ্ধকে দেখেছে মানুষের চোখ দিয়ে, যেখানে ভয়, দ্বিধা, অপরাধবোধ আর বেঁচে থাকার সংগ্রামই মূল কথা।
এই চলচ্চিত্রে যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা ধরা পড়ে সাধারণ মানুষের জীবনে। নারী ও শিশুর অসহায়তা, নিরাপত্তাহীনতা আর প্রতিদিনের আতঙ্ক এখানে বড় হয়ে ওঠে। উজ্জল ও ববিতার অভিনীত চরিত্রগুলো কোনো নায়কোচিত অবস্থানে দাঁড়ায় না, তারা কেবল টিকে থাকতে চায়, ভালো থাকতে চায়, স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে।

ছবিটির সবচেয়ে ব্যক্তিগত দিকটি এসেছে পরিচালকের ভেতর থেকে। সুভাষ দত্ত নিজেই এখানে অভিনয় করেছেন একজন শিল্পীর ভূমিকায়, যিনি যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিতে না পারার যন্ত্রণা ও আত্মগ্লানিতে ভোগেন। এই আত্মদ্বন্দ্ব ছবিটিকে করে তোলে গভীরভাবে মানবিক। যুদ্ধের সময় একজন শিল্পীর দায়, দায়িত্ব আর অসহায়তা, সবকিছুই তিনি নিঃসংকোচে তুলে ধরেছেন।
‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ তাই শুধু যুদ্ধের দলিল নয়, এটি প্রতিরোধের নীরব ভাষা। সাধারণ মানুষের ছোট ছোট প্রতিবাদ, স্বাধীনতার স্বপ্ন আর মানবিক মূল্যবোধকে ছবিটি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরে, যে কারণে একে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হিসেবেও দেখা হয়।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, এই সিনেমা কোনো বাণিজ্যিক ফর্মুলার গল্প নয়। এটি একজন শিল্পীর আত্মজিজ্ঞাসা, একটি দেশের যন্ত্রণা আর মানুষের অটুট মানবিকতার এক শক্তিশালী দলিল, যেখানে যুদ্ধের আগুনের মাঝেও ভোরের আলো খোঁজা হয়।
আলোর মিছিল – স্বাধীনতার পর অন্ধকারের ভেতর দিয়ে হাঁটা এক দেশ
(১৯৭৪ | পরিচালক: নারায়ণ ঘোষ মিতা)
মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছিল, কিন্তু সব যুদ্ধ কি তখনই শেষ হয়ে গিয়েছিল?
‘আলোর মিছিল’ সেই প্রশ্নটাই ছুড়ে দেয় দর্শকের দিকে। ১৯৭৪ সালে মুক্তি পাওয়া নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের যে কঠিন বাস্তবতা , নৈতিক অবক্ষয়, কালোবাজারি আর মূল্যবোধের সংকট, তা নির্মোহভাবে তুলে ধরে।
এই ছবির গল্প কোনো বড় রাজনৈতিক বক্তৃতায় আটকে নেই। বরং এটি গড়ে উঠেছে একটি পরিবারের ভেতরকার টানাপোড়েন দিয়ে। যুদ্ধের আগে সাধারণ জীবনযাপন করা একজন মানুষ স্বাধীনতার পর হঠাৎ করে দ্রুত ধনী হওয়ার পথে হাঁটে, অবৈধ মজুতদারি আর অসততার মাধ্যমে। তার এই বদলে যাওয়া চেহারাকে মেনে নিতে পারে না পরিবারের মুক্তিযোদ্ধা সদস্যরা। এখান থেকেই শুরু হয় সংঘাত , শুধু মানুষে মানুষে নয়, বিবেক আর লোভের মাঝেও।

এই কাহিনির সবচেয়ে হৃদয়বিদারক পরিণতি আসে কিশোরী ‘আলো’র মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। তার নিথর দেহকে ঘিরে যে মিছিল বের হয়, সেটিই হয়ে ওঠে ছবির নাম , ‘আলোর মিছিল’। এটি কেবল একজন শিশুর মৃত্যু নয়, বরং একটি সমাজের আত্মবোধের প্রতীকী আহ্বান।
রাজ্জাক, ববিতা, ফারুক, আনোয়ার হোসেন, সুজাতা ও খলিল উল্লাহ খানের অভিনয় ছবিটিকে করে তোলে বিশ্বাসযোগ্য ও গভীর। গানগুলোও ছবির আবেগকে বহন করে নিয়ে যায়, বিশেষ করে “এই পৃথিবীর পরে কত ফুল ফোটে আর ঝরে” কিংবা “দুঃখ কোরো না বন্ধু তোমরা”, যেগুলো আজও শোনা হলে মনে পড়ে সেই সময়ের ক্ষত আর প্রশ্নগুলো।
‘আলোর মিছিল’ শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়; এটি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ কী হতে পারত, আর কী হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছিল, তার এক তীব্র আত্মসমালোচনা। চলচ্চিত্রটি ১৯৭৪ সালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ একাধিক বিভাগে বাচসাস পুরস্কার প্রাপ্ত এই ছবিটি আজ বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে সংরক্ষিত, কারণ এটি কেবল বিনোদন নয়, এটি একটি সময়ের বিবেক।
আগুনের পরশমণি – যুদ্ধ যখন ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে
(১৯৯৪ | পরিচালক: হুমায়ূন আহমেদ)
মুক্তিযুদ্ধের গল্প মানেই রণক্ষেত্র, গেরিলা আক্রমণ কিংবা সম্মুখযুদ্ধ, এই চেনা কাঠামোর বাইরে গিয়ে ‘আগুনের পরশমণি’ আমাদের দেখায় আরেক রকম যুদ্ধ। ১৯৯৪ সালে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি তাঁর নিজের উপন্যাস থেকে নির্মিত, এবং এটিই ছিল তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। তবে এটি কোনো পরিচালকের অভিষেকমাত্র নয়, এটি ছিল যুদ্ধকে নতুনভাবে দেখার এক নীরব প্রয়াস।

এই ছবির যুদ্ধ ঘরের বাইরে নয়, ঘরের ভেতরে। অবরুদ্ধ ঢাকার এক মধ্যবিত্ত পরিবার, যারা হঠাৎ করেই আশ্রয় দেয় এক গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে। সেই মুহূর্ত থেকেই একটি সাধারণ ঘর হয়ে ওঠে পুরো বাংলাদেশের প্রতীক, ভয়, অনিশ্চয়তা, দ্বিধা আর দেশপ্রেমে টানাপোড়েনের এক ক্ষুদ্র মানচিত্র।
গেরিলা বদিউল আলমের আগমনে প্রথমে পরিবারটিকে গ্রাস করে আতঙ্ক। ধরা পড়ার ভয়, মৃত্যুর আশঙ্কা, সবই তাদের নীরব করে দেয়। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই ভয় রূপ নেয় মমত্ববোধে, দায়িত্বে, আর এক ধরনের নীরব সাহসে। যুদ্ধ এখানে কোনো বীরত্বের প্রদর্শনী নয়; এটি মানুষের ভেতরের লড়াই, বাঁচব, না দায়িত্ব নেব?
এই লড়াইয়ের সবচেয়ে শক্ত দিকটি ফুটে ওঠে নারীদের মধ্য দিয়ে। মা সুরমা, আর দুই কন্যা রাত্রি ও অপালা, তারা কেউ অস্ত্র ধরেন না, তবু তারাই ছবির সবচেয়ে দৃঢ় শক্তি। বিশেষ করে রাত্রির চরিত্রটি যুদ্ধের ভয়াবহতার মাঝেও মানবিক অনুভূতি, ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের এক সূক্ষ্ম মেলবন্ধন তৈরি করে।
একটি নতুন দিনের সূচনা
ছবির শেষ দৃশ্যটি আজও দর্শকের মনে গভীর ছাপ ফেলে। বদিউল আলমের মৃত্যুর পর তার মুখে এসে পড়ে সকালের আলো, একটি নতুন দিনের সূচনা। সেই আলো শুধু একজন মানুষের মুখে নয়, প্রতীকীভাবে পড়ে একটি দেশের ওপর। যেন যুদ্ধ শেষ, স্বাধীনতার সূর্য উঠছে।
আসাদুজ্জামান নূর, বিপাশা হায়াত, আবুল হায়াত ও ডলি জহুরের সংযত ও বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় ছবিটিকে বাড়তি কোনো নাটকীয়তা ছাড়াই গভীর করে তোলে। ১৯৯৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ আটটি বিভাগে পুরস্কার পাওয়া এই কাজটি আজও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত।
‘আগুনের পরশমণি’ শেষ পর্যন্ত আমাদের শেখায়, মুক্তিযুদ্ধ শুধু রণক্ষেত্রে হয়নি। তা হয়েছে ঘরের ভেতরে, মানুষের মনে, নীরব সিদ্ধান্তের মুহূর্তগুলোতে। আর সেখানেই এই চলচ্চিত্রটির সবচেয়ে বড় শক্তি।
হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড – নীরব এক মায়ের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ
(১৯৯৭ | পরিচালক: চাষী নজরুল ইসলাম)
মুক্তিযুদ্ধের গল্পে আমরা প্রায়ই অস্ত্র হাতে যোদ্ধাদের দেখি। কিন্তু ‘হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড’ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, সব যুদ্ধ বন্দুক দিয়ে হয় না, কিছু যুদ্ধ হয় বুকের ভেতর।
সেলিনা হোসেনের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এবং চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি মুক্তিযুদ্ধকে দেখেছে একজন সাধারণ গ্রামীণ নারীর দৃষ্টিতে। ‘বুড়ি’, নামহীন, পরিচয়হীন এক নারী, যার জীবনে কোনো বীরত্বের ঘোষণা নেই। তবু তিনিই হয়ে ওঠেন এই গল্পের সবচেয়ে বড় যোদ্ধা।

বুড়ির নিজের সন্তান ছিল না। পরে সে আশ্রয় নেয় এক বাকপ্রতিবন্ধী ছেলেকে, মায়ের মতো করেই বড় করে তোলে তাকে। যুদ্ধ যখন হলদিগাঁ গ্রামে এসে পৌঁছায়, তখন ভয় আর আতঙ্কে থমকে যায় সবকিছু। ঠিক সেই সময় দু’জন মুক্তিযোদ্ধা এসে আশ্রয় নেয় বুড়ির ঘরে। এই ঘরটিই হয়ে ওঠে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তের জায়গা।
পাকিস্তানি সেনারা যখন মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে আসে, তখন বুড়ি জানে, একটি ভুল মানে সবার মৃত্যু। সে কোনো ভাষণ দেয় না, কোনো নাটক করে না। সে শুধু একটি সিদ্ধান্ত নেয়। নিজের সন্তানতুল্য ছেলেটিকে সে তুলে দেয় হানাদারদের সামনে, আর মুক্তিযোদ্ধারা পালিয়ে যায়। একটি দেশের সন্তানের জন্য সে বিসর্জন দেয় নিজের সন্তানকে।
এই নীরব আত্মত্যাগ সুচরিতার অভিনয়ে হয়ে উঠেছে অসহনীয়ভাবে বাস্তব। কোনো সংলাপ নয়, চোখের ভাষাতেই বলা হয় সবকিছু। সেই কারণেই এই চরিত্র আজও দর্শকের হৃদয়ে গভীরভাবে গেঁথে আছে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে একাধিক বিভাগে স্বীকৃতি পাওয়া ‘হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড’ কেবল একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি নয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, দেশপ্রেম সবসময় উচ্চস্বরে হয় না, অনেক সময় তা নীরবেই রক্তক্ষরণ করে।
মুক্তির গান – যখন গানই ছিল যুদ্ধের ভাষা
(১৯৯৫ | পরিচালক: তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ)
এই ছবিতে কোনো অভিনয় নেই, তবুও এটি সবচেয়ে বাস্তব।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গান ছিল না নিছক বিনোদন। সেই সময় গান ছিল সাহস জোগানোর হাতিয়ার, ভয়ের বিপরীতে দাঁড়ানোর শক্তি। ঠিক এই সত্যটিকেই গভীরভাবে ধরে রেখেছে তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র ‘মুক্তির গান’।
এই ছবির জন্ম যুদ্ধের অনেক পরে, কিন্তু এর হৃদয় ছিল যুদ্ধের ভেতরেই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মার্কিন নির্মাতা লিয়ার লেভিন ক্যামেরা হাতে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন মুক্তাঞ্চল ও শরণার্থী শিবিরে। প্রায় বিশ ঘণ্টার সেই ফুটেজে ধরা পড়ে একদল তরুণ শিল্পীর অসাধারণ সংগ্রাম, যারা অস্ত্র নয়, গানকে বেছে নিয়েছিলেন প্রতিরোধের ভাষা হিসেবে। দুই দশক পর সেই ফুটেজ থেকেই নির্মিত হয় ‘মুক্তির গান’।
এই শিল্পীদলটির নাম ছিল বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা। ট্রাকে করে তারা ছুটে যেতেন এক শিবির থেকে আরেক শিবিরে, মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে দাঁড়িয়ে গাইতেন, দেশের গান, লড়াইয়ের গান। তাদের কণ্ঠে ভেসে আসত ‘আমার সোনার বাংলা’, ‘জনতার সংগ্রাম চলবে’, কিংবা ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’। যুদ্ধের ক্লান্তি আর অনিশ্চয়তার মাঝখানে এই গানগুলোই হয়ে উঠত মানসিক শক্তির জ্বালানি।
প্রামাণ্যচিত্রটিতে দেখা যায়, একদিকে গোলাগুলির শব্দ, অন্যদিকে মানুষের কণ্ঠে স্বাধীনতার গান। কোনো আলোকসজ্জা নেই, কোনো মঞ্চ নেই, শুধু বিশ্বাস আর দৃঢ়তা। এই সরল দৃশ্যগুলোই ‘মুক্তির গান’-কে করে তোলে গভীরভাবে স্পর্শকাতর।
‘মুক্তির গান’ শেষ পর্যন্ত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মুক্তিযুদ্ধ শুধু বন্দুকের লড়াই ছিল না। এটি ছিল সংস্কৃতির লড়াই, কণ্ঠস্বরের লড়াই, মানুষের মন জয়ের লড়াই। এই প্রামাণ্যচিত্রটি তাই শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি প্রমাণ, একটি জাতি কীভাবে গান দিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।
এখনো অনেক রাত – যুদ্ধ শেষ, কিন্তু অন্ধকার রয়ে গেছে
(১৯৯৭ | পরিচালক: খান আতাউর রহমান)
এই ছবিটি বলে, যুদ্ধ শেষ হয়, কিন্তু রাত অনেক সময় শেষ হয় না।
মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছিল বহু আগেই। কিন্তু মানুষের ভেতরের যুদ্ধ কি তখনই শেষ হয়ে যায়?
এই প্রশ্নটিই নীরবে তুলে ধরে ‘এখনো অনেক রাত’ , ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত খান আতাউর রহমান পরিচালিত একটি গভীর ও সংবেদনশীল চলচ্চিত্র। এটি শুধু একটি ছবি নয়, বরং ছিল এই কিংবদন্তি নির্মাতার শেষ কথার মতো, কারণ এটিই তাঁর পরিচালিত শেষ চলচ্চিত্র।
এই ছবির গল্প যুদ্ধের সরাসরি দৃশ্য দেখায় না। বরং যুদ্ধের পরের সময়টাকে ধরে রাখে, যখন মানুষ বেঁচে আছে, দেশ স্বাধীন, কিন্তু সমাজে হতাশা, বিভ্রান্তি আর স্বপ্নভঙ্গের অন্ধকার এখনো কাটেনি। সেই অন্ধকারকেই খান আতাউর রহমান বলেছেন “রাত”, যা শেষ হতে এখনও সময় লাগে।

চলচ্চিত্রে তিনি ছিলেন সবকিছুতেই, পরিচালক, কাহিনীকার, এমনকি সংগীত পরিচালকও। তাঁর সুরে গড়া গানগুলো ছবির আবহকে আরও গভীর করে তোলে, যেন প্রতিটি গানে লুকিয়ে আছে যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের দীর্ঘশ্বাস।
ফারুক, সুচরিতা, আলীরাজ, ববিতা এবং খান আতাউর রহমান নিজে, সবাই মিলে এমন এক বাস্তবতা তুলে ধরেছেন, যেখানে মানুষ প্রশ্ন করে: আমরা যে দেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সে দেশ কি সত্যিই এমন হওয়ার কথা ছিল?
অনেকেই এই ছবিটিকে খান আতাউর রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’-এর স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখেন। সেখানে ছিল যুদ্ধ-পরবর্তী সমাজ গঠনের আহ্বান, আর ‘এখনো অনেক রাত’-এ আছে সেই স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার বেদনা, সঙ্গে নতুন প্রজন্মের কাঁধে উঠে আসা দায়িত্বের ভার।
‘এখনো অনেক রাত’ তাই কোনো চটকদার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি নয়। এটি ধীরে বলা, গভীরভাবে অনুভব করার মতো একটি কাজ, যা মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা পাওয়ার পরও মানুষকে মানুষ হয়ে উঠতে অনেক সময় লাগে।
শ্যামল ছায়া – নৌকার ভেতর আটকে থাকা একটি দেশের গল্প
(২০০৪ | পরিচালক: হুমায়ূন আহমেদ)
এই ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতির মতো আসে, হঠাৎ, নিঃশব্দে।
মুক্তিযুদ্ধ মানেই গোলাগুলি, বিস্ফোরণ কিংবা রণাঙ্গনের দৃশ্য, এই ধারণা থেকে সরে এসে ‘শ্যামল ছায়া’ আমাদের নিয়ে যায় একেবারে ভিন্ন জায়গায়। হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি যুদ্ধ দেখায় না সরাসরি; বরং যুদ্ধের ছায়ায় আটকে পড়া কিছু মানুষের জীবনযাত্রার ভেতর দিয়ে তুলে ধরে ১৯৭১-এর বাস্তবতা।
এই ছবির গল্প শুরু হয় আষাঢ়ের এক অনিশ্চিত দিনে। পাকবাহিনীর আতঙ্ক থেকে বাঁচতে একদল মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে উঠেছে একটি নৌকায়। নৌকার যাত্রীরা কেউ একে অপরের আপন নয়, ধর্ম, পেশা, বয়স, বিশ্বাস, সবই আলাদা। তবু ভয় তাদের এক জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

এই নৌকায় আছে অন্ধ বাবা ও বৃদ্ধ দাদিকে নিয়ে এক হিন্দু যুবক, গর্ভবতী স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে পালানো এক মাওলানা, এক গ্রাম্য নারী ও তার শাশুড়ি, আবার আছে একজন ইঞ্জিনিয়ার। ছোট এই পরিসরেই ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে মানুষের ভেতরের দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস, সহমর্মিতা আর এক অদ্ভুত ঐক্য, যা কেবল বিপদের সময়েই সম্ভব হয়।
‘শ্যামল ছায়া’র সবচেয়ে বড় শক্তি এখানেই। এখানে যুদ্ধ মানে কেবল মৃত্যু নয়, যুদ্ধ মানে প্রতিটি মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া, কাকে বিশ্বাস করব, কার পাশে দাঁড়াব, আর কতটা মানবিক থাকা সম্ভব। হুমায়ূন ফরীদি, রিয়াজ, মেহের আফরোজ শাওনসহ অভিনয়শিল্পীরা কোনো অতিনাটকীয়তা ছাড়াই এই অনিশ্চয়তাকে বাস্তব করে তোলেন।
ছবির শেষ দৃশ্যটি আজও দর্শকের মনে গেঁথে থাকে। নৌকার ওপর উড়তে থাকা লাল-সবুজ পতাকা যেন শুধু একটি দেশের জন্মের ঘোষণা নয়, বরং সেই যাত্রীদের দীর্ঘ ভয়ের রাত পেরিয়ে ভোরে পৌঁছানোর প্রতীক। সেই কারণেই এই ছবি প্রতি বছর বিজয় দিবসে বারবার ফিরে আসে পর্দায়।
২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শ্যামল ছায়া’ পরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অস্কারের সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে প্রস্তাবিত হয়েছিল, যা এই কাজের আন্তর্জাতিক গুরুত্বেরও স্বীকৃতি।
‘শ্যামল ছায়া’ শেষ পর্যন্ত একটি যুদ্ধের গল্প নয়, এটি মানুষের গল্প। যে গল্পে ধর্মের চেয়ে মানুষ বড়, আর ভয়কে পেরিয়ে যাওয়ার নামই হলো বিজয়।
জয়যাত্রা – যুদ্ধের ভেতর দিয়ে মানুষের পথে হাঁটা
(২০০৪ | পরিচালক: তৌকীর আহমেদ)
“জয়যাত্রা” যুদ্ধকে দেখেছে মানুষের চোখ দিয়ে। এখানে কেউ বড় নায়ক নয়, সবাই সাধারণ।
মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা মানেই অস্ত্র, সম্মুখসমর কিংবা বীরত্বের উচ্চারণ, এই পরিচিত কাঠামো ভেঙে ‘জয়যাত্রা’ আমাদের দেখায় যুদ্ধের আরেক রূপ। তৌকীর আহমেদ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি ২০০৪ সালে মুক্তি পায় এবং আমজাদ হোসেনের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হলেও এটি হয়ে ওঠে নির্মাতার নিজস্ব ভাষায় বলা এক মানবিক দলিল।
এই ছবিতে যুদ্ধ দেখা যায় দূর থেকে, প্রায় ছায়ার মতো। মূল গল্পটি এগোয় কিছু সাধারণ মানুষকে ঘিরে, যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ থেকে প্রাণ বাঁচাতে নৌকায় উঠে পড়ে। তারা জানে না সামনে কী আছে, কোথায় যাবে, আদৌ বাঁচবে কি না। তবু যেতে হয়, কারণ থেমে থাকার মানে মৃত্যু।

এই যাত্রাপথেই ধীরে ধীরে খুলে যায় মানুষের ভেতরের জগৎ। ভয়, অবিশ্বাস, ক্ষুধা, ভালোবাসা আর সহমর্মিতা, সব একসাথে জায়গা নেয় সেই নৌকার ভেতরে। কেউ কারও আপন ছিল না, কিন্তু বিপদের মুখে সবাই একে অপরের হয়ে ওঠে। এই সম্পর্কগুলোই ‘জয়যাত্রা’-কে আলাদা করে তোলে।
তৌকীর আহমেদের নির্মাণশৈলীর সবচেয়ে বড় শক্তি এখানেই। তিনি যুদ্ধকে নাটকীয় করেননি, বরং গ্রামীণ বাংলার প্রকৃতি, নদী, নৌকা আর মানুষের মুখের ভাষার ভেতর দিয়ে তুলে ধরেছেন এক গভীর অনিশ্চয়তা। ক্যামেরা যেন দর্শককে নৌকার ভেতর বসিয়ে দেয়, এই যাত্রার অংশ করে তোলে।
মুক্তির পর ‘জয়যাত্রা’ সমালোচকদের প্রশংসা পায় এবং ২০০৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যসহ মোট সাতটি বিভাগে পুরস্কৃত হয়। তবে পুরস্কারের বাইরেও ছবিটির আসল অর্জন হলো, মুক্তিযুদ্ধকে নতুন চোখে দেখার সুযোগ করে দেওয়া।
‘জয়যাত্রা’ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মুক্তিযুদ্ধ শুধু বীরত্বের গল্প নয়। এটি ছিল সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই, ঘর ছাড়ার যন্ত্রণা, আর অজানার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস। সেই সাহসের যাত্রাটাই, জয়যাত্রা।
গেরিলা – যখন যুদ্ধের মুখ হয়ে ওঠে একজন নারী
(২০১১ | পরিচালক: নাসির উদ্দীন ইউসুফ)
“গেরিলা” আধুনিক ভাষায় বলা মুক্তিযুদ্ধ। এখানে নারী আছে, তরুণ আছে, দ্বিধা আছে।
মুক্তিযুদ্ধের গল্প আমরা বহুবার শুনেছি। কিন্তু ‘গেরিলা’ সেই গল্পকে বলে ভিন্ন কণ্ঠে, একজন নারীর কণ্ঠে। নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি ২০১১ সালে মুক্তি পায় এবং খুব অল্প সময়েই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমার ধারায় একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করে।
এই ছবির শুরু ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত থেকে। ঢাকা শহর তখন আগুনে জ্বলছে। সেই রাতেই নিখোঁজ হয়ে যান সাংবাদিক হাসান। তার স্ত্রী বিলকিস বানু প্রথমে স্বামীর খোঁজে পথে নামেন। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই খোঁজ রূপ নেয় আরও বড় এক উপলব্ধিতে, এই যুদ্ধ শুধু একজন মানুষের জন্য নয়, একটি দেশের জন্য।

বিলকিস বানু কোনো জন্মগত যোদ্ধা নন। তিনি ভয় পান, দ্বিধায় ভোগেন, কষ্টে ভেঙে পড়েন। তবু সময়ের তাড়নায়, বাস্তবতার চাপে, আর দেশের টানে তিনি জড়িয়ে পড়েন গেরিলা যুদ্ধে। এখানেই ‘গেরিলা’র সবচেয়ে বড় শক্তি, যুদ্ধকে নায়কোচিত ভঙ্গিতে নয়, মানুষের রূপান্তরের গল্প হিসেবে দেখানো।
নারী মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা এই ছবিতে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। বিলকিস বানু চরিত্রটি যেন সেই সব অগণিত নারীর প্রতিচ্ছবি, যারা অস্ত্র ধরেছেন, তথ্য বহন করেছেন, আশ্রয় দিয়েছেন, আবার নীরবে সব হারিয়েছেন। জয়া আহসানের অভিনয়ে এই চরিত্রটি হয়ে উঠেছে বিশ্বাসযোগ্য, দৃঢ় এবং গভীরভাবে মানবিক।
ফেরদৌস আহমেদ, এটিএম শামসুজ্জামান, আহমেদ রুবেল ও শতাব্দী ওয়াদুদসহ অন্যান্য অভিনয়শিল্পীরাও ছবির আবহকে শক্ত ভিত দিয়েছেন। বিশেষ করে গেরিলা অভিযানের দৃশ্যগুলোতে নাসির উদ্দীন ইউসুফের নির্মাণশৈলী স্পষ্ট, এখানে যুদ্ধ রোমান্টিক নয়, এখানে যুদ্ধ ভয়ংকর, নিষ্ঠুর এবং বাস্তব।
২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সর্বোচ্চ দশটি বিভাগে পুরস্কার পাওয়া ‘গেরিলা’ শুধু সম্মাননাতেই সীমাবদ্ধ নয়। এই ছবি নতুন প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেয়, মুক্তিযুদ্ধ শুধু পুরুষের ছিল না, শুধু সম্মুখযুদ্ধেরও ছিল না। এটি ছিল ঘরে ঘরে, নারীর ভেতরে, মানুষের সিদ্ধান্তে লড়ে যাওয়া এক যুদ্ধ।
‘গেরিলা’ তাই শেষ পর্যন্ত একটি সিনেমার চেয়েও বেশি, এটি সাহসের গল্প, ক্ষতির গল্প, আর নিজের ভেতরকার ভয়কে জয় করার গল্প।
শেষ কথা: পর্দা নামলেও গল্প শেষ হয় না
বিজয় দিবসে এই সিনেমাগুলো দেখা মানে শুধু স্মরণ নয়, এটি কৃতজ্ঞতা। কারণ, এই পর্দার প্রতিটি গল্পের পেছনে ছিল সত্যিকারের মানুষ, যাদের ত্যাগে আজ আমরা স্বাধীন। পর্দা নামলেও মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয় না। এটি আমাদের স্মৃতিতে, শিল্পে আর দায়িত্বে বেঁচে থাকে।
বিজয় দিবসে সেই গল্পগুলোর দিকেই ফিরে তাকানোই হোক আমাদের নীরব শ্রদ্ধা।
