সাক্ষাৎকারে আরশাদ ওয়ার্সি
আরশাদ ওয়ার্সি ভারতের কয়েক প্রজন্মের ক্নাছে জনপ্রিয় অভিনেতা। তার দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি, পেয়েছেন দর্শকদের ভালোবাসাও। সম্প্রতি ‘জলি এলএলবি ৩’ সিনেমা দিয়ে আবারো আলোচনায় আরশাদ ওয়ার্সি। তবে দর্শকদের ভালোবাসা পেলেও নিজের জীবনে পরিবারের ভালোবাসা ও জীবনের করুণ ইতিহাস প্রকাশ্যে আনলেন অভিনেতা আরশাদ ওয়ার্সি। খবর এনডিটিভি।

সম্প্রতি রাজ শামানির সাথের পডকাস্টে আরশাদ ওয়ার্সি কথা বলেছেন তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। তিনি জানান মাত্র ১৪ বছর বয়সে নিজের দুই অভিভাবককে হারিয়েছিলেন তিনি।

পডকাস্টে আরশাদ বলেন, ‘পরিবার নিয়ে তার খুব বেশি স্মৃতি নেই। কারণ, শৈশবের বেশির ভাগ সময়ই তিনি বোর্ডিং স্কুলে কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার শৈশব নিয়ে বলতে গেলে আমার স্কুলের স্মৃতি আমার পরিবারের স্মৃতির চেয়ে বেশি মনে আছে। আমি মাত্র আট বছর বয়সে বোর্ডিং স্কুলে গিয়েছিলাম।‘
মায়ের শেষ স্মৃতি ও আরশাদ ওয়ার্সি
মাকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আরশাদ বলেন, তার মায়ের শেষ স্মৃতি ভয়ংকর; আজও তাকে তাড়া করে সেই স্মৃতি। তিনি স্মরণ করে বলেন, তার বাবার মৃত্যুর পরে তার মায়ের কিডনি বিকল হয়ে যায় এবং তিনি ডায়ালাইসিসে ছিলেন।
আরশাদ বলেন, “আমার মা একজন সাধারণ গৃহিণী ছিলেন। দারুণ রান্না করতেন। তার কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসকেরা আমাদের বলেছিলেন, তাকে পানি দেবেন না। কিন্তু তিনি বারবার পানি চাইছিলেন। আমি ‘না’ বলেই যাচ্ছিলাম। তিনি মারা যাওয়ার আগের রাতে আমাকে ডাকলেন। আবার পানি চাইতে শুরু করলেন। সেই রাতে তিনি মারা যান, তাতে আমি পুরোপুরি ভেঙে পড়ি।“
আরশাদ আরও বলেন, ‘মাঝেমধ্যে মনে হয়, যদি তাকে পানি দিতাম; তারপরও মারা যেতেন। তবে সারা জীবন ভাবতাম, তিনি আমার কারণেই মারা গেলেন।’

তবে এটা নিয়ে আরশাদ ওয়ার্সির ভিন্ন উপলব্ধিও আছে। তিনি বলেন, ‘এখন আমি মনে করি, তাকে পানি দিতে পারতাম। তখন আমি শুধু চিকিৎসকের কথা শুনেছিলাম।’
অভিনেতা জানান, কৈশোরে মা-বাবাকে হারিয়ে তিনি একা হয়ে যান। নিজে নিজেই সব শিখতে হয়েছে। আরশাদ ওয়ার্সি বলেন, ‘আমি বয়সের চেয়ে অনেক পরিপক্ব ছিলাম। কারণ, চোখের সামনে অনেক কিছু দেখেছি। আমার বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। আমরা ছোটবেলায় অনেক বড় বাড়িতে থাকতাম, এরপর বাড়ি ছোট হতে থাকে। বাবা-মা মারা যাওয়ার পরে আমি সেভাবে কাঁদিনি। কারণ, নিজেকে পরিণত দেখাতে চেয়েছি। কয়েক সপ্তাহ পরে যখন বুঝলাম কী ঘটেছে, তখন কাঁদি।’
‘আমি সাহসী হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু জীবন খুব কঠিন ছিল’
আরশাদ স্মরণ করেন, তিনি বিভিন্ন জায়গায় গানের শো করতেন; প্রতি শো থেকে তিনি ১৭৫ রুপি পেতেন। বাড়ির খরচ, বিল আর মায়ের চিকিৎসা মিলিয়ে জীবন ছিল অনেক কঠিন।
আরশাদ ওয়ার্সি বলেন, ‘আমি সাহসী হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু জীবন খুব কঠিন ছিল। একটা সময়ের পর যত চেষ্টাই করি না কেন, সব ভেঙে পড়ে। এটি খুব ভয়ংকর সময় ছিল। আমি সপ্তাহে কয়েক শ রুপি উপার্জন করতাম, আর মায়ের সাপ্তাহিক ডায়ালাইসিস খরচ ছিল ৮০০ রুপি। সেই সময় আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমাকে অনেক টাকা উপার্জন করতে হবে।‘
এই অভিনেতা ১৯৬৮ মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালে হিন্দি চলচ্চিত্র “তেরে মেরে সাপনে” অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক করেন।