Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
বুধবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৫

আলাউদ্দিন আলী- বাংলা গান ও সুরের অর্ফিয়ুস

আলাউদ্দিন আলী- বাংলা গান
আলাউদ্দিন আলী |

জন্মদিনে আলাউদ্দিন আলী

আজ বাংলা গানের কিংবদন্তী গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলীর জন্মদিন। ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে। তার বাবা ওস্তাদ জাদব আলী ছিলেন গানের মানুষ। চাকরি করতেন বাংলাদেশ বেতারে। বংশের বেশিরভাগ মানুষই গান ভালোবাসতেন। যে কারণে শৈশব থেকেই সংগীতের সাথে তার সম্পর্ক সুনিবিড় হয়ে উঠে। আলাউদ্দিন আলী ছিলেন বাংলা গান ও সুরের অর্ফিয়ুস ।  

ছোটবেলায় ‘অল পাকিস্তান চিলড্রেনস’ প্রতিযোগিতায় বেহালা বাজানোর জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন আলাউদ্দিন আলী। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন বেহালাবাদক হিসেবে। ষাটের দশকেই প্রথম চলচ্চিত্রে বেহালাবাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেই থেকেই এক মহান যাত্রার শুরু। দেশাত্মবোধক গান, সিনেমার জন্য গান, জীবনের জন্য গান সবখানেই ছিলো তার বিচরণ।  

আলাউদ্দিন আলী- বাংলা গান
গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী | ছবি: সংগৃহীত

দেশপ্রেমের গানে আলাউদ্দিন আলী অনন্য। ‘ও আমার বাংলা মা তোর আকুল করা রূপের সুধায়’ বা ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি’ বা ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’-এই গানগুলোর সুর করেছেন তিনি। গানগুলোতে এমন সুর প্রয়োগ করেছেন তিনি যা দেশাত্মবোধ ছাপিয়ে হয়ে উঠে মা,মাটি, প্রকৃতি, স্মৃতি ও আত্মপরিচয়ের ভাষা।

প্রায় পাঁচ হাজার গানের সুর করেন আলাউদ্দীন আলী

প্রেমের গানেও আলাউদ্দিন আলীর সুর আলাদা ও অনুভূতিপ্রবণ। তার ‘যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসত’, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’ গানগুলোতে প্রেম হয়ে উঠে চির আকাংক্ষার, অতি ব্যক্তিগত ও আবেগে লীন। প্রেমকে তিনি দেখেছেন অনুভবের জায়গা থেকে, বেদনার বাতিঘর হিসেবে।

আলাউদ্দিন আলীর সুরে গান গেয়েছেন কনকচাঁপা, মাকসুদ, মিতালী মুখার্জী, কুমার বিশ্বজিৎ, সামিনা চৌধুরী, তপন চৌধুরী, আইয়ুব বাচ্চু, হাসানসহ বহু শিল্পী।

চলচ্চিত্র, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার গানের সুর তৈরি করেছেন আলাউদ্দিন আলী। কিন্তু সংখ্যার চেয়েও সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তার মান,আদর্শ ও কালোর্ত্তীণ অনুভূতি। তার গানগুলো সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যায়নি। আজও তার গান শুনে আবেগ অনুকম্পিত হয়ে যাওয়া যায় যা তার শিল্পের সবচেয়ে বড় গুণ।

দেশের বিখ্যাত সব শিল্পীর, জনপ্রিয় সব গানের সুর করেছেন তিনি। মূলত তার সুর করাতেই গানগুলো হয়ে উঠেছে বিখ্যাত।

আলাউদ্দিন আলী- বাংলা গান ও সুরের এক প্রতিষ্ঠান

আলাউদ্দিন আলী- বাংলা গান
গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী | ছবি: ফেসবুক

এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই’, ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার’, ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো একটা পলাশ ফুলের মালা’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে’, ‘কী করে বলিব আমি আমার মনে বড় জ্বালা’, ‘ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে’, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসত’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’, ‘সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারও ঘরনি’, ‘একা একা কেন ভালো লাগে না’—এই গানগুলো সুরস্রষ্টা আলাউদ্দিন আলীকে স্থান দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার একবার বলেছিলেন, ‘আলাউদ্দিন আলী এত এত ভালো গান সুর করেছেন, নাম বলতে গেলেই কিছুদিন হারিয়ে যাবে।“

৭০, ৮০ দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের গান বলতেই ছিলেন আলাউদ্দিন আলী। সংগীত পরিচালক হিসেবে মোট আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

আলাউদ্দিন আলীর ভাষায় বলতে গেলে, ‘আশাজি, লতাজি ছাড়া এমন কোনো শিল্পী নেই, এ উপমহাদেশে যে আমার গান গায়নি।’ সাবিনা ইয়াসমীনের ভাষায়, ‘ভারতীয় উপমহাদেশের একজন শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী। তাঁরা যুগে যুগে আসেন না। এলে হয়তো এত দিনে চোখে পড়ত, জানতে পারতাম।’  

সিনেমার গানে আলাউদ্দিন আলীর যাত্রা

আলাউদ্দিন আলী- বাংলা গান
আলাউদ্দিন আলী | ছবি: ফেসবুক

আলাউদ্দিন আলীর শুরুটা হয়েছিল ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে। তিনি চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন ১৯৭৪ সালে। মীর মোহাম্মদ হালিম পরিচালিত ওই ছবির নাম ‘সন্ধিক্ষণ’, মুক্তি পায় ১৯৭৬ সালে। কিন্তু সাফল্যের জন্য তাকে দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়। ১৯৭৮ সাল, আমজাদ হোসেন তৈরি করেন ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’। এই ছবির জন্য আলাউদ্দিন আলী তৈরি করেন ‘আছেন আমার মোক্তার’ শিরোনামে একটি গান। গানটির গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার আর কণ্ঠ দেন সৈয়দ আব্দুল হাদী। গানটি চুম্বকের মতো কাজ করে ওই সময়। শ্রোতারা অবাক হয়ে শোনেন গানটি। একই ছবির আরেকটি গান তখন দারুণ জনপ্রিয়তা পায়, ‘হায় রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ’। এই গানের গীতিকারও আমজাদ হোসেন। দুটি গানই আলাউদ্দিন আলীকে নিয়ে যায় অন্য জায়গায়।

একই বছর মুক্তি পায় ‘ফকির মজনু শাহ’ নামের আরেকটি ছবি। এই ছবির ‘প্রেমের আগুনে’, ‘সবাই বলে বয়স বাড়ে’ আর ‘চোখের নজর এমনি কইরা’ গানগুলো আলাউদ্দিন আলীর ব্যাপারে সবাইকে আগ্রহী করে তোলে।

আলাউদ্দিন আলী দুই বিয়ে করেছিলেন। তার প্রয়াত স্ত্রী সালমা সুলতানা ছিলেন নজরুলসংগীতশিল্পী। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মিমি আলাউদ্দিনও একজন আধুনিক গানের শিল্পী।

আলাউদ্দিন আলী দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০২০ সালে প্রয়াত হন। তিনি চলে গেলেও তাঁর সুর এখনো অমর হয়ে আছে। তার সুর চির অম্লান। বাংলা গানের ইতিহাসে আলাউদ্দিন আলী একাই একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি শুধু গান বানাননি, একটি মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। বাংলা চলচ্চিত্রের গানকে তিনি নিয়ে গেছেন এক অনন্য মর্যাদা ও উচ্চতায়। তিনি চিরদিন থাকবেন যতদিন মানুষ গাইবে বাংলা গান।

Website |  + posts
Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ায় স্টাম্প দিয়ে পিটিয়েছিলেন ঐশী

অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী দেশের বর্তমান সময়ের অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। সম্প্রতি তিনি আলোচনায়…
প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ায় স্টাম্প দিয়ে পিটিয়েছিলেন ঐশী

১০০ কোটি ভিউয়ের রেকর্ড গড়েছে বাংলা সিনেমার গান

রায়হান রাফী নির্মিত ‘তুফান’ ছবির গান দেশের সিনেমার দুটি গান ভিউয়ের হিসাবে রেকর্ড গড়েছে। ইউটিউবে ১ বিলিয়ন…
বাংলা সিনেমার গান ১০০ কোটি ভিউয়ের রেকর্ড গড়েছে

বড়দিনের আনন্দে রঙিন হবে শিল্পকলা একাডেমী

খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব বড়দিন শান্তি, সম্প্রীতি আর মানবিকতার বার্তা নিয়ে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের…
বড়দিনের আনন্দে রঙিন হবে শিল্পকলা
0
Share