-মোঃ অলিউর রহমান-
আজ লাকী আখান্দের জন্মদিন।
তাকে ফেরানো না গেলেও, বাংলা গানের ধারকরা সারাটা জীবন ধরেই হয়তো গাইবে ‘আমায় ডেকো না’..
’আগে যদি জানতাম’ বলে লাকীর সাথে কাটাতো লম্বা সময়, জানতো আরও গল্প! অনেক গল্প! ‘নীল মণিহার’ নিয়ে কোনও সন্ধায় জমে যেত দারুণ জ্যামিং! অংশ নিতেন লাকী, এমন কী হয়তো হ্যাপি আখান্দও।
তবে আজ বাংলাদেশের ব্যান্ড-আকাশের ‘লাকি ডে’। আজকে লাকির জন্মদিন। তাই আজ নাহয় শুধু লাকির গল্প হোক।
বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো ৬৭। না হয় তিনি নেই, কিন্তু তার জীবনের গল্পের নানা অধ্যায়ে রয়ে গেছে আজও কিছু না জানা অংশ। যা নিয়ে আজকের চিত্রালীর আয়োজন।
যেমন ধরা যাক, কিশোর কুমারের সাথে তার ’রঙে রঙে মিশে হলো তোমার আমার মিল’ গানের মত সামঞ্জস্য।
কিশোর কুমার ও লাকী আখন্দের মধ্যে দুইটি বিষয়ে মিল রয়েছে।
প্রথমত, দুইজনই ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।
মধ্য প্রদেশে জন্ম নেওয়া আভাস কুমার গাঙ্গুলী ‘বম্বে টকিজে’ যোগ দেওয়ার সময় নাম বদলে হয়ে যান কিশোর কুমার।
অন্যদিকে লাকী আখান্দের জন্মের সময় তার নাম রাখা হয়েছিল এ টি আমিনুল হক। তার মা পরবর্তীতে এটি বদলে এ টি এম আমিনুল হাসান করেছিলেন। তার ম্যাট্রিকের সার্টিফিকেটেও এই নাম দেওয়া হয়েছিল। তবে যুদ্ধের সময় ভারতে গিয়ে তিনি লাকী আনাম ছদ্মনামটি গ্রহণ করেন। বেঁচে থাকাকালীন বিভিন্ন গণমাধ্যমে লাকী তার নাম বদলের আসল কারণ জানিয়েছিলেন।
৭১ এ কণ্ঠ যোদ্ধা হিসেবে যোগ দেওয়ার সময় বারবার বাংলাদেশ থাকা তার পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি তার মাথায় ঘুরছিল। যুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে গান গাইতেন। বেতার থেকে প্রচারিত তার গান ‘জন্মভূমি বাংলা মাগো একটি কথা শুধাই তোমারে’, ‘ওই চেয়ে দেখো পুব আকাশ ফিকে হলো’, ‘ভোর হলো’, ‘ভোর হলো পথের আঁধার আর নাই’, ‘আমরা গেরিলা’, ‘আমরা গেরিলা মুজিবর, মুজিবর, মুজিবর’ তখন যুদ্ধ করতে মনে সাহস জুগিয়েছে হাজারও মুক্তিযোদ্ধার। কিন্তু পাকিস্তানি আর্মি যদি তার আসল পরিচয় জেনে ফেলত তাহলে দেশে থাকা তার পরিবারের সদস্যদের এর নির্মম পরিণাম বইতে হত। তাই তিনি যুদ্ধের সময় ছদ্মনাম ব্যবহার করেছিলেন।
দ্বিতীয়ত, দুইজনই গাইতে গাইতে গায়ক।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কখনো গান শেখেননি কিশোর কুমার। লোকশ্রুতি আছে যে তিনি বিখ্যাত ভারতীয় গায়ক কুন্দন লাল সায়গলকে অনুকরণ করার চেষ্টা করতেন।
লাকী আখান্দও কিশোর কুমারের মতই গান গাইবার ব্যাকরণ শেখেননি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। তার বাবা এ কে আবদুল হক ব্রিটিশ আর্মিতে লেফটেন্যান্ট ছিলেন। আর্মি থেকে চলে আসার পর তার বাবা প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটায় হারমোনিয়াম নিয়ে বসতেন। সঙ্গীতেই মশগুল থাকতেন রাত তিনটা পর্যন্ত। তার গান শুনতে শুনতে এবং গাইতে গাইতেই গান শিখে ফেলেন লাকী ও তার ভাইয়েরা।’
১৯৮৪ সালে লাকীর একক অ্যালবাম প্রকাশ পায় যেখানে একটি গান ছিল ‘আমায় ডেকো না’। এই গানে তিনি সুরে সুরে জানালেন, ’মিনতি করি আমাকে হাসি মুখে বিদায় জানাও’ ..
তাই আমরাও আজ গায়কের সেই কথাই রাখলাম। চিত্রালী ও তার হাজারও অনুরাগী তাকে তার জন্মদিনে হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে নয় বরং স্মরণ করছে হাসি মুখে।