বাংলাদেশের প্রথম নারী এভারেস্টজয়ী
২০১২ সালের ১৯ মে সকাল নয়টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন নিশাত মজুমদার। এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার জন্য প্রায় ১০ বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। নিশাত মজুমদারের এভারেস্টজয়ের গল্প নিয়ে আসছে তথ্যচিত্র। তথ্যচিত্র দেখানো হবে ঢাকার এক ফেস্টিভ্যালে।

২০১০ সাল থেকে ৪০টির বেশি দেশে হয় মাউন্টেন ফেস্টিভ্যাল। সেইসুত্রে বাংলাদেশেও হচ্ছে অনুষ্ঠানটি। আগামী ২১ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বসবে এবারের মাউন্টেন ফেস্টিভ্যাল। উৎসবে প্রিমিয়ার হবে বাংলাদেশের প্রথম নারী এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদারের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘সামিট ইজ আ ওমেন’। তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন মুনতাসির মামুন। এ ছাড়া উৎসবে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, স্পেন ও ফ্রান্সের ৭টি চলচ্চিত্র দেখানো হবে।

নিশাত মজুমদারের এভারেস্টজয়ের গল্প নিয়ে ‘সামিট ইজ আ ওমেন’
‘সামিট ইজ আ ওমেন’ তথ্যচিত্রটির দৈর্ঘ্য ১৩ মিনিট ৫ সেকেন্ড। এখানে দেখানো হবে নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট জয়ের পেছনের সব প্রস্তুতি, সংগ্রাম, সেখানে যাওয়ার পর নানা শারীরিক ও মানসিক বাধা টপকে যাওয়ার সব ইতিহাস তুলে ধরবে তথ্যচিত্রটি।
ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালে কানাডার আলবার্টা প্রদেশের ছোট শহর ব্যানফেতে একটি চলচ্চিত্র উৎসবের পরিকল্পনা করেন কানাডার তিন পর্বতারোহী ও শিক্ষাবিদ জন অ্যামাট, চিক স্কট ও ইভলিন মুরহাউস। পরের বছর থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে এ মাউন্টেন ফেস্টিভ্যাল যাত্রা শুরু করে। পাহাড়, প্রকৃতি, অভিযাত্রা ও সংস্কৃতি নিয়ে তৈরি করা সেরা চলচ্চিত্রগুলো দেখানোর উদ্দেশ্যে উৎসবটি প্রথমে শুরু হয়। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদাপূর্ণ মাউন্টেন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পরিণত হয়, যা চলছে প্রতিবছরই।
১৯৮০-এর দশকে উৎসবটি শুধু ব্যানফে’তে সীমিত না থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাত্রা শুরু করে। ৪০টির বেশি দেশে, শত শত শহরে হয় এই উৎসব। প্রতিবছরের এই উৎসবে অসংখ্য মানুষ ভ্রমণ, দুঃসাহসিকতা, অনুসন্ধান, প্রকৃতি সংরক্ষণ ও মানসিক দৃঢ়তার গল্পগুলো উপভোগ করেন।
উৎসবটি ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশেও আয়োজিত হয়ে আসছে। আয়োজক সংস্থা কেওক্রাডং বাংলাদেশ।
নিশাতের যাত্রার গল্প
নিশাতের যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ এ। সে বছরের ১১ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দেশে পালিত হয় বিশ্ব পর্বত দিবস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে জুমার ক্লাইম্বিং করা একমাত্র তরুণী ছিলেন নিশাত। এই সুবাদেই বাংলাদেশের সেসময়ের একমাত্র পর্বতারোহণ ক্লাব ‘বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব’- এর সাথে পরিচয় ঘটে নিশাতের। পরের বছর থেকে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের সব আয়োজনে নিয়মিত ছিলেন তিনি।
২০০৬ সালের ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে সাদিয়া সুলতানা শম্পার নেতৃত্বে ৮ নারী উঠলেন ক্রেওক্রাডংয়ে। এদের মধ্যে নিশাতও ছিলেন। সেই বছরই মে মাসে নিশাত নির্বাচিত হলেন এভারেস্ট বেসক্যাম্প ট্রেকিংয়ে দ্বিতীয় নারী দলের সদস্য। নিজের চোখে এভারেস্ট দেখে তিনিও স্বপ্ন দেখলেন এভারেস্টযাত্রী হওয়ার। আর এ কারণেই ২০০৭-এর মে মাসে নিশাতের এক মাস কাটল বিখ্যাত পর্বতারোহণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে। এতে তিনি ‘এ’ গ্রেড রেজাল্টসহ বেসিক পবর্তারোহণ কোর্সে উত্তীর্ণ হন। এরপরেই শুরু হয় তার ইতিহাস জয়ী যাত্রা।