২০১৭ সালের ২১ আগস্ট পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন নায়করাজ রাজ্জাক। আজ তার চলে যাওয়ার ৮ বছর পূর্ণ হল। আজ নায়করাজকে স্মরণ করে ঢাকাই সিনেমার মেগাস্টার শাকিব খান তার আবেগ ও ভালোবাসা জানান দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে নায়করাজকে স্মরণ করে শাকিব খান লিখেন, ‘আপনাকে (নায়করাজ রাজ্জাক) গভীরভাবে অনুভব করি প্রতি পদে পদে। শুধুই একজন অভিনেতা নন, আপনি সুন্দর স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি।
আপনার অভিনয়, হাসি চিরকাল বেঁচে থাকবে আমাদের স্মৃতিতে, ভালোবাসায়।’
সবশেষে তিনি বলেন, ‘আপনার প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা, চিরশান্তিতে থাকুন।’
নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে ‘কোটি টাকার কাবিন’, ‘জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার’, ‘১ টাকার বউ’ সহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছেন শাকিব খান।
১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কলকাতার কালীগঞ্জের নাকতলায় জন্ম নায়করাজ রাজ্জাকের। মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি তার বাবা আকবর হোসেন ও মা নিসারুন্নেসাকে হারিয়েছিলেন। তিন ভাই-তিন বোনের সংসারে বড়রা তাকে বুঝতেই দেননি মা-বাবার শূন্যতা। তরুণ বয়সে অভিনয় করার লক্ষ্য নিয়ে বম্বে (মুম্বাই) চলে গিয়েছিলেন রাজ্জাক। প্রায় দুই মাস সেখানে ছিলেন। তবে সুবিধা করতে পারেননি।
মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ে করেন রাজ্জাক। ১৯৬৪ সালে স্ত্রী লক্ষ্মী ও ছেলে বাপ্পারাজকে নিয়ে কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। সেসময়ের ঢাকায় কেউ তার পরিচিত ছিল না। ঢাকাই পরিচালক আবদুল জব্বার খানের কাছে রাজ্জাককে যেন অভিনয়ে নেওয়া হয়- এমন একটি চিঠি লিখে দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নাট্যপরিচালক পীযুষ বসু। অচেনা এই শহরে সেই চিঠি নিয়ে দেখা করার পর আবদুল জব্বার খান কয়েকজন নামকরা পরিচালকের কাছে রাজ্জাককে পাঠিয়েছিলেন।
কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি! তারপর আবদুল জব্বার খান রাজ্জাককে পাঠিয়েছিলেন ইকবাল ফিল্মসে। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে নির্মিত হয়েছিল ‘উজালা’। কামাল আহমেদ পরিচালিত এই সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে রাজ্জাকের নতুন জীবন শুরু হয়। তবে তার মন পড়ে ছিল অভিনয়ে।
ছোট-ছোট চরিত্রে অভিনয় করে সিনেমার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন রাজ্জাক। সেই সিনেমাগুলো হচ্ছে ‘ডাক বাবু’, ‘কার বউ’, ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’। এরপর ১৯৬৬ সালে জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ সিনেমায় অভিনেত্রী সুচন্দার বিপরীতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক। সিনেমাটি দর্শকের কাছে বেশ সমাদৃত হয়। রাজ্জাক নামটিও ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তারপর অসংখ্য হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি।
রাজ্জাক অভিনীত সিনেমার মধ্যে ‘কাগজের নৌকা’, ‘বেহুলা’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘আনোয়ারা’, ‘ময়নামতি’, ‘আগন্তুক’, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘পীচ ঢালা পথ’, ‘দর্পচূর্ণ’, ‘কাঁচ কাটা হীরা’, ‘দ্বীপ নেভে নাই’, ‘স্বরলিপি’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘এরাও মানুষ’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ক্যারিয়ারে মোট ৫ বার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন এই নায়করাজ। ২০১৩ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।