Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
বৃহস্পতিবার, জুলাই ৩, ২০২৫

জন্মদিনে জেনে নেয়া যাক টম ক্রুজের সিনেমার পথচলা

১৯৬২ সালের ৩ জুলাই নিউইয়র্কের সিরাকিউজে জন্মগ্রহণ করেন টম ক্রুজ। টম ক্রুজের আসল নাম টমাস ক্রুজ ম্যাপোদার চতুর্থ। তার বাবা ছিলেন একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। মাত্র চার বছর বয়সে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মে এই অভিনেতার। ছোটবেলায় ডোনাল্ড ডাক, এলভিস প্রিসলি, হ্যাম্পফ্রি বোগার্টের নকল করতেন টম।

টমের বয়স যখন ১১ বছর তখন তার বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে এবং মা পুনরায় বিয়ে করেন। ছোটবেলা থেকেই টম ছিলেন দুঃসাহসী। ছিলেন অ্যাথলেটিক্সে পারদর্শী এবং পেশাদার কুস্তিতে ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু ক্রুজ ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। উচ্চ বিদ্যালয়ের সময় হাঁটুর আঘাতের কারণে শেষ পর্যন্ত পেশাদার কুস্তিগির হতে পারেননি।

ব্র্যাট প্যাক সদস্যরা

১৪ বছর বয়সে, ক্রুজ পুরোহিত হওয়ার চিন্তাভাবনা নিয়ে একটি ফ্রান্সিসকান সেমিনারিতে ভর্তি হন, কিন্তু এক বছর পর সেখান থেকে চলে আসেন। যখন তার বয়স ১৬ বছর, তাঁর স্কুলের এক শিক্ষক তাকে স্কুলের সঙ্গীত প্রযোজনা “গাইজ অ্যান্ড ডলস” এ অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করেন। অভিনয়ের মঞ্চে নিজেকে বেশ পারফর্ম করেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে নিজের গুণ সম্পর্কে অবগত হন এবং সেখান থেকেই তাঁর ক্যারিয়ারের জন্ম বলা যায়।

পেশাদার অভিনেতা হবেন এই মর্মে নিউইয়র্কে অডিশন দিতে শুরু করেন ক্রুজ। ১৯৮১ সালে ব্রুক শিল্ডস অভিনীত ‘এন্ডলেস লাভ’ ছবিতে অভিনয় করেন প্রথম। প্রায় একই সময়ে, তিনি মিলিটারি স্কুল নাটক ‘ট্যাপস (১৯৮১)’ -এ শন পেনের সাথে একটি ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেন। ট্যাপস-এ তার অভিনয় পরিচালক হ্যারল্ড বেকারসহ অনেক সমালোচক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যা তার পথচলা আরো সহজ করে তোলে।

১৯৮৩ সালে, ক্রুজ ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার ‘দ্য আউটসাইডার্স’ ছবিতে অভিনয় করেন, যেখানে এমিলিও এস্তেভেজ, ম্যাট ডিলন এবং রব লোও অভিনয় করেন। বিনোদন সংবাদমাধ্যম তরুণ এই অভিনেতাদের দলের নাম দিয়েছেন “ব্র্যাট প্যাক”। তবে ছবিটি খুব একটা প্রশংসিত না হলেও এটি ক্রুজকে একজন প্রশংসিত পরিচালকের সাথে একটি হাই-প্রোফাইল প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ করে দেয়।

তার পরবর্তী ছবি, রিস্কি বিজনেস (১৯৮৩)। ৬৫ মিলিয়ন ডলার আয় করে সেই বছরের বক্স অফিসে সবচেয়ে লাভজনক সিনেমাগুলির মধ্যে একটি হয়ে ওঠে। এই সফলতা ক্রুজকে একজন স্বীকৃত অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তোলে। অনেকই জানেন না যে সিনেমাটির সেই আলোচিত নাচের দৃশ্য পুরোপুরি তারই কোরিওগ্রাফ করা।   

১৯৮৬ সালে বিগ-বাজেটের ফ্যান্টাসি ছবি ‘লেজেন্ড’ মুক্তি পায়, যা বক্স অফিসে খারাপই করে। তবে একই বছর, ‘টপ গান’ সিনেমায় কেলি ম্যাকগিলিস, অ্যান্থনি এডওয়ার্ডস এবং মেগ রায়ানদের মতো তারকাদের সাথে অভিনয় করে প্রথম সারীর অভিনেতার তালিকাতে চলে আসেন। একটি অভিজাত নৌ ফ্লাইট স্কুলের পটভূমিতে নির্মিত অ্যাকশন-রোমান্সের এই ছবিটি ১৯৮৬ সালের সর্বোচ্চ আয়কারী ছবি হয়ে ওঠে।

কয়েক দশক পরে, ক্রুজ অ্যাকশন-প্যাকড সিক্যুয়েল ‘টপ গান: ম্যাভেরিক’ (২০২২) তে ফাইটার পাইলট পিট “ম্যাভেরিক” মিচেলের ভূমিকায় ফিরে আসেন, যা মূল ছবির ৩০ বছরেরও বেশি সময় পরে আবারও সাফল্য লাভ করে। সমালোচকরা ছবিটির প্রশংসা করেছেন এবং সে বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়কারী ছবি হওয়ার পাশাপাশি, সেরা ছবির জন্য অস্কারের মনোনয়নও পেয়েছে।

‘টপ গান’-এর অসাধারণ সাফল্যের পর ক্রুজ সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত এবং বাণিজ্যিকভাবে সফল ছবিগুলির একটি সিরিজ তৈরি করেন। প্রথমে ‘দ্য কালার অফ মানি’ (১৯৮৬) করেন পল নিউম্যানের সাথে, তারপর ক্রুজ ডাস্টিন হফম্যানের সাথে করেন ‘রেইন ম্যান’ (১৯৮৮)। এরপর ক্রুজের ভিয়েতনামের অভিজ্ঞ রন কোভিচের বায়োপিক ‘বর্ন অন দ্য ফোর্থ অফ জুলাই’ (১৯৮৯) তে অভিনয় করেন। এই অভিনয় তাকে একাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন এনে দেয় এবং সেরা অভিনেতার জন্য গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার অর্জন করেন টম। 

মিশন: ইম্পসিবল ফ্র্যাঞ্চাইজি শুরু করার আগেটম করেন ‘এ ফিউ গুড ম্যান, যা তাকে গোল্ডেন গ্লোব মনোনয়ন এনে দেয়। এরপর করেন দ্য ফার্ম, এবং ইন্টার্ভিউ উইথ এ ভ্যাম্পায়ার সিনেমা।

মিশন: ইম্পসিবল ফ্র্যাঞ্চাইজি

‘মিশন: ইমপসিবল’ ফ্র্যাঞ্চাইজি তাকে নতুন করে অ্যাকশন তারকা হিসেবে সারা দুনিয়ায় পরিচয় করিয়ে দেয়। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় সিনেমাটির প্রথম কিস্তি। সিনেমার জন্য দুঃসাহসিক সব স্টান্ট করে হইচই ফেলে দেন ক্রুজ। এর মধ্যে অন্যতম ছিল দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা থেকে নিজেই ঝুলে স্টান্ট করা। সিনেমাটিতে অভিনয় করার পাশাপাশি, ক্রুজ একজন প্রযোজক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। সিনেমাটির জনপ্রিয়তা ক্রুজের জন্য আরেকটি অ্যাকশন ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্ম দেয়। তবে এর মধ্যে করেন স্ট্যানলি কুবরিকের পরিচালনায় ‘আইজ ওয়াইড শাট’।

দীর্ঘ প্রতীক্ষিত হিট মিশন: ইম্পসিবল ২, আসে ২০০০ সালে। তারপরে ২০০৬ সালে জনপ্রিয় মিশন: ইম্পসিবল ৩ আসে। যাইহোক, সেই আগস্টে প্যারামাউন্ট পিকচার্স অভিনেতার সাথে তার 14 বছরের সম্পর্ক শেষ করার পর ক্রুজ একটি পেশাদার বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন। কোম্পানির চেয়ারম্যান ক্রুজের অনিয়মিত আচরণ এবং বিতর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিকে বিভক্তির কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন, যদিও শিল্প বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে প্যারামাউন্ট সম্ভবত মিশন: ইম্পসিবল ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে অভিনেতার উচ্চ আয়ের কারণে অংশীদারিত্বের অবসান ঘটিয়েছে।

অবশেষে, ক্রুজ এবং প্যারামাউন্ট তাদের সম্পর্ক ঠিক করে এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিতে চলচ্চিত্র যুক্ত করা অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে মিশন: ইম্পসিবল—ঘোস্ট প্রোটোকল (২০১১), মিশন: ইম্পসিবল—রোগ নেশন (২০১৫), মিশন: ইম্পসিবল—ফলআউট (২০১৮), এবং অতি সম্প্রতি, মিশন: ইম্পসিবল—ডেড রেকনিং (২০২৩)।

সবশেষ চলতি বছর মুক্তি পাওয়া মিশন: ইম্পসিবল -‘দ্য ফাইনাল রেকনিং’-এ হেলিকপ্টার থেকে ১৬ বার আগুনে পোড়া প্যারাস্যুট নিয়ে লাফ দিয়ে গড়েছেন ‘সবচেয়ে বেশিসংখ্যক জ্বলন্ত প্যারাস্যুট জাম্প’-এর বিশ্ব রেকর্ড। ‘দ্য ফাইনাল রেকনিং’ সিনেমাটিকে অনেকেই মনে করেছেন আলোচিত ‘মিশন: ইমপসিবল’ ফ্র্যাঞ্চাইজির শেষ কিস্তি। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। ছবির প্রিমিয়ারে টম ক্রুজকে প্রশ্ন করা হলে তিনি হেসে বলেন, ‘শেষ বলে আবার কিছু আছে নাকি!

টম ক্রুজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের অন্যতম আক্ষেপ ছিল অস্কার না পাওয়া। সে আক্ষেপও ঘুচতে যাচ্ছে এবার। সম্মানসূচক অস্কার পাচ্ছেন তিনি। ১৬তম গভরনর্স অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানটি হবে আগামী ১৬ নভেম্বর, লস অ্যাঞ্জেলেসে। সেখানেই টমের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত তার করা সিনেমাগুলো বক্স অফিস থেকে ১৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

সামনে টম ক্রুজকে দেখা যাবে আলেহান্দ্রো গনজালেস ইনারিতুর সিনেমায়। ইনারিতুর সঙ্গে টম ক্রুজও ছবির প্রযোজকও। ছবিটি নিয়ে সিনেমাপ্রেমীদের আগ্রহের কমতি নেই। কারণ, ইনারিতুর সঙ্গে টমের জুটি কেমন হয়, সেটা দেখতে ভক্তদের তর সইছে না। কমেডি সিনেমাটি মুক্তি পাবে ২০২৬ সালের ২ অক্টোবর।

প্রাক্তন স্ত্রী: কেটি হোমস, নিকোল কিডম্যান এবং মিমি রজার্স

ক্রুজ তিনবার বিয়ে করেছেন, সবগুলোই সহ-অভিনেতাদের সাথে, এবং তার তিনটি সন্তান রয়েছে। তিনি প্রথম ১৯৮৭ সালে মিমি রজার্সকে বিয়ে করেছিলেন কিন্তু তিন বছর পর তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়।

এরপর ১৯৯০ সালের ক্রিসমাসের আগের দিন ক্রুজ তাঁর তার সহ-অভিনেত্রী ও প্রেমিকা নিকোল কিডম্যানকে কলোরাডোর টেলুরিডে বিয়ে করেন। ১১ বছরের বিবাহিত জীবনের পর ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০০১ সালে ক্রুজ এবং কিডম্যান তাদের বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন।   

বিবাহবিচ্ছেদের পর, ক্রুজ তার ভ্যানিলা স্কাই সহ-অভিনেত্রী পেনেলোপ ক্রুজের সাথে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ডেট করেন এবং তারপরে অভিনেতা কেটি হোমসের সাথে বহুল প্রচারিত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হোমসের সাথে তার সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসার এক মাস পর, ক্রুজ দ্য অপরাহ উইনফ্রে শো-তে হোমসের প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করেন।  

২০০৫ সালের জুন মাসে, দুই মাসের প্রেমের পর, ক্রুজ আইফেল টাওয়ারের শীর্ষে একটি রেস্তোরাঁয় হোমসকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। অক্টোবরে, তারা ঘোষণা করেন যে তারা তাদের প্রথম সন্তানের প্রত্যাশা করছেন। তাড়াহুড়ো করে করা এই প্রস্তাব এবং অপ্রত্যাশিত গর্ভাবস্থা দ্রুত ট্যাবলয়েড গুজবে পরিণত হয়।

২০০৬ সালে, ক্রুজ এবং হোমসের ঘরে আসে মেয়ে সুরি। সেই নভেম্বরে, তারা একটি ইতালীয় দুর্গে বিয়ে করেন, যেখানে সেলিব্রিটি উইল স্মিথ, জাদা পিঙ্কেট স্মিথ, জেনিফার লোপেজ এবং ভিক্টোরিয়া এবং ডেভিড বেকহ্যাম উপস্থিত ছিলেন। তবে, স্বপ্নের মতো এই প্রেম টিকেনি বেশিদিন। ২০১২ সালের জুন মাসে, হোমস বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন।

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

আজ মুক্তি পাচ্ছে শ্যামল মাওলার থ্রিলার ওয়েব সিরিজ ‘কানাগলি’

পনের বছর আগে এক মহিলা খুন হন তার ১০ বছর বয়সী ছেলের হাতে। ঘটনার শুরুটা হয়তো এখানেই। অর্থাৎঢাকা শহর জুড়ে এক…

‘মেগাস্টার’ উপাধি বিতর্কে জাহিদ হাসানের নতুন ব্যাখ্যা

শাকিব খানের ভক্তরা তাকে ভালোবেসে কখনো কিং খান, কখনো সুপারস্টার, কখনো নবাব এমনকি মেগাস্টার উপাধিও দিয়েছেন। তবে…

শাহরুখ নামে ‘কুকুর’ পালার ব্যাখ্যা দিলেন আমির খান  

বলিউডের দুই সুপারস্টার আমির খান ও শাহরুখ খান। এই দুই তারকার মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলেও আমিরের নামে…
0
Share