ঠাকুরগাঁওয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে ক্ষোভ ঝেড়েছেন বিনোদন অঙ্গনের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত।
১০ জানুয়ারি মধ্যরাতে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস শেয়ার করেন হানিফ সংকেত। সাথে জুড়ে দেন একটি ছবিও। পোস্ট করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ঠাকুরগাঁওয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘ইত্যাদি’র ধারণকৃত একটি মুহূর্তের দৃশ্য। যেখানে হাড় কাঁপানো শীতকে উপেক্ষা করে অনুষ্ঠান দেখতে হাজির হন লাখো দর্শক।
পোস্টের শুরুতে উপস্থাপক ও পরিচালক হানিফ সংকেত লেখেন, ‘ইত্যাদির ঠাকুরগাঁওয়ের ধারণ অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু কিছু মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ব্যক্তির সংবাদ ও মন্তব্য পড়ে কিছুটা অবাকই হয়েছি। ভেবেছিলাম এসবের কোন জবাব দেব না। কিন্তু এদের মন্তব্য ও সংবাদ দেখে মনে হচ্ছে অনুষ্ঠানস্থলে আমি নয় বোধহয় তারাই উপস্থিত ছিলেন। এদের মন্তব্য পড়ে মনে হয় অনুষ্ঠানস্থলে হামলা, মারামারি, ভাঙচুর হয়েছে, যে কারণে আমি অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হই। অথচ ঠাকুরগাঁওবাসী এবং উপস্থিত দর্শকরাই জানেন এ ধরনের কোনো ঘটনাই সেখানে ঘটেনি। আমরা দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্ননিদর্শনসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে গিয়ে ইত্যাদি ধারণ করছি প্রায় তিন দশক ধরেই। ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠান পরিকল্পনা করার পর আমরা রাণীশংকৈল (রাজা টংকনাথের) রাজবাড়িতে ইত্যাদি ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেই এবং এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করি। আমরা ৬ হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা করি এবং সন্ধ্যা সাতটার দিকে অনুষ্ঠান শুরু করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আমরা জানতে পারি অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ অপেক্ষা করছেন অনুষ্ঠান দেখার জন্য।’
ক্ষিপ্ত হানিফ সংকেত আরও ব্যাখ্যা করেন, ‘অনুষ্ঠানে দর্শক বাছাই, নৃত্য ও গান ধারণ করার পরই হঠাৎ করে বাঁশের ঘেরা সরিয়ে কয়েক হাজার লোক আমন্ত্রণপত্র না পেয়েও তাদের প্রিয় ইত্যাদি দেখার জন্য অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়ে। ফলে অনুষ্ঠানস্থলে সাময়িক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। আমরা পরিস্থিতি অনুধাবন করে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কিছু সময়ের জন্য অনুষ্ঠান ধারণ স্থগিত করি এবং পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার ধারণ শুরু করি। যদিও ইতোমধ্যে স্থগিতের কথা শুনে অনেক দর্শকই চলে যান। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান ধারণ করি। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ হামলা, ভাঙচুর বা মারামারি নয়, ইত্যাদির প্রতি দর্শকদের ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসার কারণেই তারা ইত্যাদির ধারণ দেখার জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে ছিলেন। কিন্তু স্থানাভাবে দাঁড়াতেও পারছিলেন না। তাই চেয়ার সরিয়ে দাঁড়াবার স্থান করছিলেন। আর সে কারণেই এই চেয়ার ছোড়াছুড়ি। এর ফলে কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঘটনাটিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে কেউ কেউ মিথ্যে তথ্য দিয়ে এবং রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে বিভিন্নভাবে অপপ্রচারের চেষ্টা করছেন।’
মতলববাজদের ইঙ্গিত করে তিনি লেখেন, ‘কিছু ‘মতলববাজ’ ব্যক্তি নিরাপদ দূরত্বে থেকে নানা পোস্ট দিয়ে নিজের মতলব হাসিলের চেষ্টাও করছে। যারা এই ঘটনাটির সঙ্গে রাজনীতিকে সংযুক্ত করতে চাইছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ‘আমি যেমন কখনই কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হইনি, ইত্যাদিও তেমনি সবসময়ই থেকেছে রাজনীতিমুক্ত’। আর তাই দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রায় অর্ধলক্ষাধিক দর্শক নিয়ে ইত্যাদি শেরপুর পর্ব এবং ২৯ নভেম্বর কয়েক হাজার দর্শক নিয়ে ইত্যাদি বাগেরহাট পর্ব প্রচারিত হয় এবং প্রতিটি অনুষ্ঠান অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ধারণ করা হয়।’
সবশেষে নন্দিত এ উপস্থাপক লেখেন, ‘আসলে আমরা ভিউবাজদের ভিউ বিড়ম্বনার স্বীকার হয়েছি। কোনো অপপ্রচারই ইত্যাদির সঙ্গে দর্শকদের এই ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না। তার প্রমাণ ঠাকুরগাঁওয়ের ইত্যাদি দেখার জন্য দর্শকদের এই বাঁধভাঙা স্রোত। যা আমাদের অভিভূত করেছে। আর দর্শকদের এই ভালোবাসায় ধন্য হয়েই ইত্যাদি এ বছর পদার্পণ করেছে তার ৩৭তম বছরে।’
প্রসঙ্গত, গেল ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার পরে ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার দুইশো বছরের পুরনো রাজা টংকনাথের রাজবাড়িতে আয়োজিত ইত্যাদির অনুষ্ঠানের শুটিং চলাকালে এমন বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে। আর এ বিশৃঙ্খলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।