কবির সুমন, এক জীবন ঘনিষ্ঠ শিল্পীর নাম। যার গানে আছে প্রেম, দ্রোহ, স্বপ্ন, রাজনীতি ও সমাজ বুননের বীজ। যিনি গানে গানে প্রিয়তমাকে ডাকেন, দেখেন সাম্যের স্বপ্ন আর গেয়ে উঠেন,’ প্রথমত আমি তোমাকে চাই, দ্বিতীয়ত আমি তোমাকে চাই, তৃতীয়ত আমি তোমাকে চাই, শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই।‘
সম্প্রতি, বাংলাদেশে ভারতীয় পতাকার প্রতি ছাত্র সমাজের অবমাননাকে কেন্দ্র করে কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় একটি কবিতা পোস্ট করেন ফেসবুকে, সেই কবিতার জবাব হিসেবে কবির সুমন আরেকটি কবিতা পোস্ট করেন তার নিজ ফেসবুক ওয়ালে। এই নিয়ে চলছে তুমুল বাদ-প্রতিবাদ ও আলোচনা ।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর দেশে চলমান বিভিন্ন সামাজিক অস্থিরতা চলমান। এর পেছনে ভারতের ইন্ধন আছে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ ও ছাত্রসমাজের উল্লেখযোগ্য অংশ। সেই প্রেক্ষিতেই, প্রতিবাদস্বরূপ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ভারতীয় পতাকার উপর পা মাড়িয়ে যান। এই প্রেক্ষিতেই প্রতিবাদী কবিতা লিখেন শ্রীজাত, আর কবির সুমন তার কবিতায় প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘পতাকার চেয়ে বড় ফেলানির বুক, সেটা তাক করেছিল কার বন্দুক।‘
একই কবিতায় আবার বলেন, ‘কার দেশ কার ফ্ল্যাগ কার কাঁটাতার, কোথায় রইল ঝুলে ফেলানি আমার।’
কিশোরী ফেলানী, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি সকালে ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারের ওপর তার মৃতদেহ ঝুলে থাকার পর লাশ নিয়ে যায় বিএসএফ। এর প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর ৮ জানুয়ারি লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ।
বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে কিশোরী ফেলানি এক গভীরতর দুঃখ, ভুলতে না পারা বিষাদ আর সইতে না পারা যাতনার নাম।
কবির সুমন ঠিক যেন বাংলাদেশের আলো বাতাসে বড় হওয়া সন্তান। ভাটির দেশের মানুষের এই অপ্রত্যাশিত দুঃখের ভাগিদার যিনি তিনিও। তাই, শ্রীজাত যখন বাংলাদেশের মানুষের দুঃখে শামিল হতে পারেন না বরং বাংলাদেশিদের ভারতীয় পতাকার ছায়াতলের মানুষ বলে মাথানিচু করে থাকার সাহিত্যিক পরামর্শ দেন সে মুহুর্তেই সাম্যে বিশ্বাসী, মানুষের অধিকারের সংগ্রামে চিরদিন শামিল হওয়া শিল্পী বলে উঠেন, ‘এসো হাত ধরো, শত্রুতা ভুলে যাও, পতাকার চেয়ে ভালবাসা বড়, প্রেমের গানটা গাও।’